মেয়েদের ফাইনালে শনিবার আমার মতে জোরদার লড়াই হবে। কারণ, ম্যাচটায় লড়াই মেয়েদের টেনিসের অন্যতম সেরা বিগ সার্ভারের বিরুদ্ধে এমন একজনের, যার খেলার আসল শক্তি হল রিটার্ন। সেয়ানে সেয়ানে লড়াই। তা সত্ত্বেও আমার জার্মান সত্ত্বাকে মাথায় ঠাঁই না দিয়েও বলব, ফাইনালে লিজিক-ই ফেভারিট।
ঘাসের কোর্টের সঙ্গে দুর্দান্ত মানানসই খেলা আছে লিজিকির হাতে। আর তার সঙ্গে বোমার মতো সার্ভিস। আমার শুধু একটাই চিন্তা ওর এখানে শেষ তিনটে ম্যাচের মধ্যে দু’টোয় তিন সেটের ম্যারাথন লড়াই হয়েছে। যেটা ওর শরীরের কিছু শক্তি কমিয়ে দিলেও দিতে পারে। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী বার্তোলির মতোই একটা দিন হাতে পাচ্ছে ও। আশা করি, লিজিকি নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবে। এত বছর বাদে সেন্টার কোর্টে একজন জার্মান চ্যম্পিয়নকে দেখতে পাওয়াটা সত্যিই আমার কাছে অসাধারণ হবে।
কী উইম্বলডনই না এ বার এখনও পর্যন্ত হয়েছে! পুরুষদের ড্র যদি একের পর এক অঘটন আর চোটের কারণে ওয়াকওভারে কেঁপে থাকে। তা হলে, মেয়েদের বিভাগও গত পাঁচ দিন প্রায় সেটাই অনুসরণ করেছে।
অখ্যাত কার্স্টেন ফ্লিপকিন্সের কাছে প্রাক্তন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন পেত্রা কিভিতোভার ছিটকে পড়াটা তো অতি অবশ্যই বড় অঘটন। কিন্তু মহাঅঘটন আমার দেশের মেয়ে সাবিন লিজিকির হাতে সেরেনা উইলিয়ামসের আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার স্বপ্নের অপমৃত্যু! টুর্নামেন্টের আগে প্রত্যেকে, যার ভেতর আমিও পড়ি, নিশ্চিত ছিলাম জীবনের সেরা ফর্মে থাকা সেরেনাকে ঘাসের কোর্টে থামানো এক রকম অসম্ভব। লিজিকি সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে ওর যাবতীয় গোলাগুলি সেরেনার দিকে নিক্ষেপ করে। আর তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হৃদয় দিয়ে টেনিসটা খেলে। জানি, আমাকে হয়তো পক্ষপাতদুষ্ট মনে হবে, কারণ লিজিকি হল জার্মান। কিন্তু মেয়েটা সত্যিই মেয়েদের টেনিসে নতুন আনন্দ আর প্রচুর ঝলমলে ব্যাপার এনেছে।
বেশ কয়েক বছর লিজিকিকে দেখে আমার মনে হয়েছে, ঘাসের কোর্টে খেলাটাকে ও কী দুর্ধর্ষ রপ্ত করেছে! ওর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ধারাবাহিকতার অভাব। আর ম্যাচে একগাদা ‘আনফোর্সড এরর’ করা। আশা করি, উইম্বলডনের সাফল্য ওকে নিজের ভুল শোধরানোর ব্যাপারে সাহায্য করার পাশাপাশি দারুণ উদ্দীপ্ত করেছে। গত কয়েক বছর মেয়েটার টেনিস জীবনের ওপর দিয়ে প্রচুর ঝড়ঝাপ্টা গিয়েছে। একটা সময় গোড়ালিতে এমন সাংঘাতিক চোট পেয়েছিল যে, প্রায় নতুন করে হাঁটতে শিখতে হয়েছিল! খারাপ সময়ের থেকে উঠে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে লিজিকি দুর্দান্ত মানসিক শক্তি দেখিয়েছে। নিজের কোচিং স্টাফে বেশ কিছু পরিবর্তন করার পর মনে হচ্ছে, ও খেলাটাকে উপভোগ করছে। ঘাসের কোর্টের পক্ষে ওর খেলাটা তো এমনিতেই দুর্ধর্ষ। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি, এই ফর্মে হার্ডকোর্টেও ও ভাল করবে। তবে এই মুহূর্তে দেখার, আজকের উইম্বলডন ফাইনাল লিজিকির কেরিয়ারের কোন দিকে মোড় ঘোরায়।
ফাইনালে লিজিকির প্রতিদ্বন্দ্বীর সেমিফাইনাল ম্যাচটাকে অসম লড়াই বলা যায়। ফ্লিপকেন্স যতই এ বারের ‘উইম্বলডনের সিনড্রেলা’-র তকমা পেয়ে থাকুক, ওর শেষ চার পর্যন্ত ওঠাটাই খুব ভাল পারফরম্যান্স ধরতে হবে। সেমিফাইনালে ও ফিটনেস নিয়ে সমস্যায় ছিল। বার্তোলি ওর চরিত্রবিরোধী মেজাজে সেমিফাইনাল খেলেছে। আর বিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে। নিজের চেয়ে বেশি পাওয়ারফুল প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধেও ডাবল হ্যান্ডেড ফোরহ্যান্ড আর ব্যাকহ্যান্ড শটগুলোর বার্তোলি যে ভাবে প্রয়োগ ঘটিয়েছে, সেটা কিন্তু দেখার মতো।
|