চার ঘণ্টা ৪৩ মিনিটের মহাসংগ্রাম যখন নির্ণায়ক পঞ্চম সেটে ম্যাচ পয়েন্টের মুহূর্তে পৌঁছেছে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বরিস বেকারের টুইট ভেসে উঠল “জকোভিচের এ ধরনের ম্যাচগুলোয় শেষ সেটের জন্য একটা আলাদা ফুয়েল-ট্যাঙ্ক শরীরে রাখা থাকে। যখনই মনে হবে, বিশ্বের এক নম্বরও ফাঁদে পড়েছে। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না, তখনই ও কোনও এক মন্ত্রবলে উঠে দাঁড়িয়ে ম্যাচ বার করে নিয়ে চলে যাবে। এটাই হল জকোভিচ। দেল পোত্রোর এত স্মরণীয় লড়াইও বৃথা যেতে বসেছে।” যেটা দুনিয়া জোড়া টেনিসপ্রেমীরা কম্পিউটার স্ক্রিনে পড়তে পড়তেই জকোভিচ জিতে গেলেন উইম্বলডনের ইতিহাসে দীর্ঘতম পুরুষ সেমিফাইনাল। ৭-৫, ৪-৬, ৭-৬ (৭-২), ৬-৭, (৬-৮), ৬-৩। |
বিদায়-আলিঙ্গন। শুক্রবার উইম্বলডনে দেল পোত্রোকে আদর জকোভিচের। ছবি টুইটারের সৌজন্যে। |
ম্যাচ শুরুর আগেও একটা মোক্ষম কথা বিবিসি-র কমেন্ট্রি বক্সে বসে বলেন তিন বারের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন বেকার। “প্লেয়ার সব সময় মনে রাখে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচের কথা। জকোভিচের বিরুদ্ধে দেল পোত্রো শেষ দু’টো সাক্ষাতেই জিতেছে। এ বছরের কথা ধরলে ইন্ডিয়ান ওয়েলসে। আর উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টের কথা ধরলে গত বছর লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচ। সে জন্য আজ বিশ্বের এক নম্বরই একটু পিছিয়ে।” ফাইনালে উঠে জকোভিচও স্বীকার করেছেন, “সর্বকালের অন্যতম একটা সেরা টেনিস ম্যাচের সঙ্গে আমি জড়িয়ে থাকতে পারলাম। দু’জন প্লেয়ারের কাউকে আলাদা করা যায়নি গোটা ম্যাচে। শুধুমাত্র আমি যখন ২-১ সেট আর একটা ব্রেকে এগিয়ে ছিলাম সেই সময়টা বাদে। কিন্তু তার পরেই তো আমি সার্ভিস গেম হারাই।”
তবে প্রথম সেট স্বচ্ছন্দে জেতা জকোভিচকে দেখে মনে হচ্ছিল, বেকারের কথা আদৌ মিলবে না। ফাইনাল অবধি একটাও সেট না হেরে পৌঁছে যাবেন জোকার। কিন্তু পরক্ষণে উইম্বলডনের ইতিহাসে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ডের একমাত্র মালিক ইভানিসেভিচের টুইট, “নিজের দিনে দেল পোত্রো যে কাউকে হারাতে পারে। হাঁটুর চোটের চিহ্ন দেখছি না। ওকে শুধু ভেতরের টেনিস সত্ত্বাটাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। সেটা হল, ওর মরণপণ লড়ার ক্ষমতা। ”
দ্বিতীয় সেট থেকে যেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন দীর্ঘকায় আর্জেন্তিনীয়র মহাতারকা প্রতিদ্বন্দ্বীও। দ্বিতীয় সেটের সপ্তম গেমে জকোভিচকে ম্যাচে প্রথম বার ব্রেক করলেন দেল পোত্রো। আর তার তিন গেম পর এ বারের উইম্বলডনে প্রথম কোনও সেট হারালেন শীর্ষ বাছাই সার্বিয়ান। কিন্তু ‘জোকারের’ টেনিসের বিশেষত্বই হল, ম্যাচ যত গড়াবে তত বেশি তাঁকে ফিট, তাজা দেখাবে। এমনই অফুরান দম। অবিশ্বাস্য ফিটনেস লেভেল! কোনও সার্ভিস ব্রেক না হওয়া তৃতীয় সেট টাইব্রেকারে গড়ালে সেখানে বিগ পয়েন্টে জ্বলে উঠে জকোভিচ ২-১ সেট এগিয়ে যান। |
রাজকীয়। শুক্রবার উইম্বলডনে জকোভিচ। ছবি: রয়টার্স |
চতুর্থ সেটে খেলাটা একেবারে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছয়। ব্যাক-টু-ব্যাক সার্ভিস ভাঙেন দুই মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী একে অপরের। তার পর সেই অনবদ্য টাইব্রেক! ৬-৪ এগিয়ে দু’টো ম্যাচ পয়েন্ট সমেত জকোভিচ সার্ভিস করছেন ফাইনালে ওঠার জন্য। দু’টোই বাঁচান দেল পোত্রো। দুটোই লম্বা র্যালিতে। যে রকম র্যালি জকোভিচের থেকে বার করা টেনিসের সবচেয়ে দুরূহ কাজ। টানা চারটে পয়েন্ট জিতে ছিটকে যাওয়ার বদলে, ২-২ সেট করে খেলা নির্ণায়ক সেটে টেনে নিয়ে যান অষ্টম বাছাই দেল পোত্রো।
গ্যালারিতে স্তেফান এডবার্গ থেকে ভাষ্যকারদের বক্সে বসা বরিস বেকার কিংবা প্যাট ক্যাশ একঝাঁক প্রাক্তন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নের ‘বুম’ কিংবা টুইটে তখন সমবেত স্তম্ভিত মন্তব্য, “কী অসাধারণ লড়াকু এই দেল পোত্রো!” কিন্তু জকোভিচ পঞ্চম সেটের মাস্টার যে! বেকারের টুইট মতো সেই আলাদা ‘ফুয়েল-ট্যাঙ্কের’ জ্বালানির উত্তাপে মোক্ষম সময়ে পুড়ে ছারখার হয়ে গেলেন দেল পোত্রো। সপ্তম গেমে জকোভিচ নাছোড় প্রতিদ্বন্দ্বীর সার্ভিস ভাঙার পর আর পিছন ফিরে তাকাননি। উইনিং স্ট্রোকের পর প্লেয়ার্স বক্সে উচ্ছ্বসিত বান্ধবী জেলেনা রিস্টিকের দিকে হাত ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে নিজস্ব স্টাইলে সেলিব্রেশন করার জন্য পিছনে ঘোরাটুকু বাদে!
|
জিতলেন মারেও
সংবাদসংস্থা • লন্ডন |
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অ্যান্ডি মারে ৬-৭ (২-৭), ৬-৪, ৬-৪, ৬-৩ জের্জি জানোভিচকে হারান। লন্ডনের সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তৃতীয় সেট শেষ হওয়ার পর টুর্নামেন্ট রেফারি অ্যান্ডি জ্যারেট দিনের আলো কমে আসায় সেন্টার কোর্টের ছাদ ঢেকে ফ্লাড লাইটে খেলা করতে চাইলে মারে ক্ষুব্ধ হন। গোটা ব্যবস্থাটার জন্য ৪০ মিনিট সময় দরকার হয়। মারের দাবি ছিল, আরও ৪০ মিনিট খেলার মতো পর্যাপ্ত দিনের আলোই ছিল। যার জেরে ঘরের ছেলে মারের সঙ্গে উইম্বলডন কর্তৃপক্ষের টানাপোড়েন গড়ানোর আশঙ্কা। |