পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এক সিপিএম কর্মীকে কুপিয়ে খুন করা হল পাণ্ডুয়ায়।
বৃহস্পতিবার রাতে দলের একটি প্রচার-সভা থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন পাণ্ডুয়ার ক্ষীরকুণ্ডী পঞ্চায়েতের নতুনপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ একলাখ (৩৬) নামে ওই সিপিএম কর্মী। বাড়ির কাছেই তাঁকে কোপানো হয়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তাঁর স্ত্রী সোনিয়া বিবি এবং সিপিএম নেতৃত্ব এই ঘটনায় তৃণমূলের লোকজনই দায়ী বলে অভিযোগ তুলেছেন। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
একলাখ জমি কেনাবেচার কাজ করতেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ মনে করছে, জমিজমা নিয়ে পুরনো বিবাদের জেরে খুন হন ওই যুবক। হুগলির ডিএসপি (ডি অ্যান্ড টি) দেবশ্রী সান্যাল বলেন, “মনে হচ্ছে, জমিজমা সংক্রান্ত পুরনো বিবাদের জেরেই খুন। নিহতের পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। শীঘ্রই দোষীদের গ্রেফতার করা হবে। মূল অভিযুক্ত শেখ মুন্না পলাতক।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং স্ত্রী সোনিয়া বিবিকে নিয়ে একলাখের সংসার ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি হাওড়ার লিলুয়ায় শ্বশুরবাড়ি যান। রাত পৌনে ন’টা নাগাদ ফিরে পাণ্ডুয়া স্টেশন থেকে স্ত্রীকে একটি ট্রেকারে তুলে দিয়ে তিনি রেললাইনের অন্য পাড়ে নিয়ালায় একটি দলীয় প্রচার-সভায় যোগ দিতে যান। সেখান থেকে রাত সওয়া ১০টা নাগাদ দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ফিরছিলেন। স্টেশনের কাছে অবশ্য সঙ্গীদের থেকে তিনি আলাদা হয়ে যান। সাড়ে ১০টা নাগাদ সোনিয়া বিবি এক প্রতিবেশীর থেকে ফোনে
মহম্মদ একলাখ |
জানতে পারেন, বাড়ির কাছেই পাণ্ডুয়া-মহানাদ রাস্তার ধারে একলাখের রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁর মাথার দু’দিকে কোপানো হয়েছিল। পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।
সোনিয়া বিবি পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন, ক্ষীরকুণ্ডীর তৃণমূল কর্মী শেখ মুন্নাই দলবল নিয়ে তাঁর স্বামীকে খুন করে। ফেরার সময়ে স্বামী তাঁকে ফোনে জানিয়েছিলেন, স্টেশনে তাঁর সঙ্গে মুন্নার দেখা হয়েছে। তার সঙ্গেই ফিরছেন। সোনিয়া বিবি বলেন, “স্বামী এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে পড়ায় তৃণমূলের সহ্য হচ্ছিল না। ওরা স্বামীকে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। হুমকিও চলছিল। এ কথা থানায় জানিয়েছিলাম। স্বামী তৃণমূলের কথা না মানায় মুন্না ওকে খুন করল।” পাণ্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ আলি হোসেন বলেন, “একলাখ সম্প্রতি আমাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন। প্রথম থেকেই তৃণমূল ওঁকে খুনের হুমকি দিয়েছিল। এলাকা দখলের জন্য তৃণমূল আশ্রিত গুণ্ডারাই ওঁকে খুন করল।” ময়না-তদন্তের পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় একলাখের দেহ গ্রামে ফেরে। ঘটনার প্রতিবাদে দেহ নিয়ে মিছিল করে সিপিএম। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী। তিনি পাণ্ডুয়ায় তৃণমূলের বাইক-বাহিনীর দৌরাত্ম্যের অভিযোগ তোলেন।
মুন্না ক্ষীরকুণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায় তার বাড়ি তালাবন্ধ। ওই এলাকার লোকজন জানান, ইদানীং মুন্নাকে তৃণমূলের বিভিন্ন সভা বা মিছিলে দেখা যাচ্ছিল। তবে, পাণ্ডুয়ার তৃণমূল নেতা বাদশা আলম মুন্নাকে দলীয় কর্মী বলে
মানতে চাননি।
তাঁর দাবি, “ওই খুনের ঘটনায় রাজনীতির কোনও যোগ নেই। জমিজমা সংক্রান্ত কারণে ওই যুবক খুন হতে পারেন। আমাদের কোনও কর্মী-সমর্থক তাতে জড়িত নন। মুন্না দলের কেউ নয়।” আগে দলের পক্ষ থেকে একলাখকে হুমকির অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। বাদশার দাবি, “একলাখ যে এলাকায় থাকতেন, সেখানে আমাদের সংগঠন দুর্বল। তাঁকে কে হুমকি দেবে?”
সিপিএম দলকে কলুষিত করার চেষ্টা করছে বলে পাল্টা অভিযোগও তুলেছেন তিনি। |