মনোরঞ্জন ২...
জীবন্ত তারাপীঠ
ছোট পর্দায় বাংলা ধারাবাহিকের ইতিহাসে ‘তিথির অতিথি’র পরে দু’হাজার পর্বের ঈর্ষণীয় মাইলফলক পেরিয়ে গেল ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’ও।
এমন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলার পরেও নিজেদের কৃতিত্বেই সন্দিহান এই ধারাবাহিকের নির্মাতারা। “শুরুর পরে এগোতে এগোতে কেটে গেল প্রায় সাত বছর। ভাবতেই পারছি না,” বিস্ময় গোপন করতে পারলেন না প্রযোজক এবং ফিল্ম এডিটর সুব্রত রায়।
সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বাঙালি পরিবারের সব বয়সের সদস্যদের ছোট পর্দার সামনে বিনোদনের রসে মজিয়ে রাখা পারিবারিক ধারাবাহিকের দাপুটে, হইচই বাজারে কী ভাবে বাজিমাত করল কালোত্তীর্ণ এক মাতৃসাধকের অবিনাশী-অলৌকিক জীবনকথার সেই বহুকথিত কাহিনি? তা-ও বেলা সাড়ে বারোটার স্লটে?
ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর বিশাল ফ্লোরে আসলে-নকলে মিলে বামাচরণের আমলের তারাপীঠ যেন জীবন্ত। মা তারার মন্দিরে অষ্টপ্রহর জ্বলন্ত প্রদীপ, বামার আটচালা, নিকানো উঠোন, মন্দির ঘিরে গাছগাছালি, নাটোরের রাজবাড়িএ সবই শিল্প নির্দেশক মৃণাল ভট্টাচার্যের ভাবনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।
বিনোদনের সংজ্ঞা পাল্টে যাওয়া এই ফেসবুক -ট্যুইটরের যুগেও কেন মাসের পর মাস ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’র মতো একটি ধর্মীয় ধারাবাহিকে চোখ রাখছেন আপামর দর্শক?
“এই ধারাবাহিকের সাফল্যের অন্যতম কারণ ঋতম ঘোষালের স্ক্রিপ্ট এবং বামদেবের চরিত্রে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়ের অসাধারণ অভিনয়,” স্বীকার করতে দ্বিধা করলেন না প্রযোজক।
শ্রীরামকৃষ্ণের ‘কথামৃত’র মতো কোনও প্রামাণ্য দিনপঞ্জিকা নেই বামাক্ষ্যাপার ক্ষেত্রে। তাঁর কোনও শ্রীম ছিল না। তাঁর জীবনী প্রবাদ মূলক। বামদেবকে নিয়ে লিখিত এক বইয়ের সঙ্গে প্রায়শই মিল নেই আর এক বইয়ের। “এই জন্যই আমাকে খাটতে হয়েছে প্রচুর,” বললেন ঋতম।
তাঁর জীবনী নিয়ে বিভিন্ন বই পড়া থেকে শুরু করে তারাপীঠ এবং বামার জন্মস্থান আটলা গ্রামে গিয়ে তাঁর পরিবারের বংশধরদের সঙ্গেও কথা বলে এসেছেন তিনি।
বামদেবকে নিয়ে গত সাত বছর ধরে ঋতমের প্রভূত গবেষণা এবং অনলস চর্চার উপরে ভর করেই এগিয়েছে ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’র প্রতিটি পর্ব, অকপট স্বীকারোক্তি প্রযোজকের। টিআরপি উঠেছিল চারের উপরে। এখনও এই চ্যানেলের সেরা তিনে আছে এই ধারাবাহিক।
“সাধনার পথে বামাচরণের জীবনে ঘটে যাওয়া বহু অলৌকিক ছোট ছোট ঘটনাকে বাস্তব আর কল্পনার মিশেলে আমি রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি,” বলছেন ঋতম। মূল চরিত্রকে ঘিরে সাত থেকে দশ পর্বে শেষ হয়ে গিয়েছে প্রতিটি ঘটনা।
“কোথাও কাহিনিকে অকারণে বড় করার চেষ্টা করিনি। ছোট-ছোট ঘটনার রেশই হয়তো দর্শকদের দিনের পর দিন বেঁধে রেখেছে,” এমনই ধারণা ঋতমের।
“এক দিকে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন চলমান মানুষ-দেবতা। অন্য দিকে তাঁর কর্মভূমিতে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ, শঙ্করাচার্যের মতোই এক জন সমাজ সংস্কারক। শিবজ্ঞানে জীবসেবা করেছেন তিনিও। সর্বদাই দাঁড়িয়েছেন পীড়িত, নিরাশ্রয় মানুষজনের পাশে,” ব্যাখ্যা করলেন চিত্রনাট্যকার।
টালমাটাল পায়ে ১৯০ পর্ব অতিক্রম করার পরেই জমে যায় ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’। যুবক বামার চরিত্রে প্রথমে অভিনয় করতে রাজি হচ্ছিলেন না অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়। ই টিভি-তে শ্রীরামকৃষ্ণের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে আড়াইশো পর্বে বাদ যাওয়ার সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা কী করে ভোলেন অরিন্দম? “তাই রাজি হচ্ছিলাম না। কিন্তু মা-তারার ইচ্ছার কাছে আমি কে?” শ্রদ্ধা যেন ঝরে পড়ল ‘শ্রীমান হংসরাজ’-এর কণ্ঠে।
কিন্তু এই চরিত্রে সফল হওয়ার পরে তিনি নিজেও বিস্মিত! সেই কত বছর আগে মহানায়কের ‘কখনও মেঘ’ ছবিতে শিশুশিল্পীর ভূমিকায় শুরু হয়েছিল তাঁর অভিনয়-জীবন। “নিরবচ্ছিন্ন ভাবে প্রায় ৪৭ বছর অভিনয় করছি।” তার পরেও অত্যন্ত কঠিন এই ভূমিকায়, বামাক্ষ্যাপা রূপে দর্শকেরা তাঁর মতো পরিচিত মুখকে যে গ্রহণ করেছেন, “সে তো মা তারারই কৃপায়,” এমনই উপলব্ধি অরিন্দমের।
এই ধারাবাহিকের গানও দর্শকদের মাতিয়ে দিয়েছে। কখনও অরিন্দমের কণ্ঠে, কখনও প্রদ্যুৎ দের কণ্ঠে গাওয়া সব গানই বেশ জনপ্রিয়। অসংখ্য শিল্পীও কাজ করেছেন এখানে। কালার্স চ্যানেলের ‘উত্রণ’ ধারাবাহিকের ইচ্ছা বা মিঠির ভূমিকায় অভিনয় করছেন যে টিনা দত্ত, তিনি দেড় বছর কাজ করেছেন এই সিরিয়ালে।
‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’র সাফল্যের পিছনে কাজ করেছে টিম-ওয়াকর্। এখানে কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি,” জানালেন ‘সুবর্ণলতা’ খ্যাত পরিচালক শক্তি দত্ত।
এই চরিত্রে এমনই ডুবে আছেন অরিন্দম যে, বহু অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন। “মাকে অবহেলা করতে পারব না। এর জন্য রোজগারও কমে গিয়েছে”, শ্যুটিংয়ের বাইরেও তিনি যেন এক এবং অদ্বিতীয় বামদেবই।
ছোট্ট রবিকে নিয়ে বামদেবের সঙ্গে দেখা করতে তারাপীঠে এসেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর সঙ্গে কী কথা হয়েছিল মহর্ষির?
“এই পর্ব আমরা দেখাব। ভবিষ্যতে গঙ্গাসাগরেও শ্যুটিং করব”, ঋতম জানালেন। বামদেবের সমাপ্তি কী ভাবে হবে? “শেষটা এখনই বলছি না। তবে দুরন্ত একটি চমক থাকবে, তা বলে দিচ্ছি।”
বামদেবের ভাবমূর্তি থেকে এর পরে অরিন্দম বেরিয়ে আসতে পারবেন তো? “কোনও অসুবিধা হবে না,” অরিন্দম নিশ্চিত। মা তারার কৃপায় বাঙালি সংস্কৃতি জীবনে তাঁর নিজস্ব দর্শক আছে, তাঁর গান, তাঁর অভিনয় পছন্দ করেন তাঁরা। ভালবাসেন তাঁকে। “ভিড় করেন তাঁরা আমার নাটক দেখতে,” দাবি করলেন তিনি।
তবে ‘শ্রীমান হংসরাজ’-এর আক্ষেপ অন্য জায়গায়। প্রচারমাধ্যমের আনুকূল্য তেমন ভাবে পাননি তিনি। ‘সাধক বামাক্ষ্যাপা’র পরে তা কি আর বলা চলে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.