|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ১... |
|
পাখির মতো উড়তে চাই |
এক সময় তাঁকে বলা হত ‘মোটি ভ্যঁয়স’। এখন বলা হয় বলিউডের ‘একশো কোটি ক্লাব’য়ের রাজকন্যা।
যদিও সোনাক্ষী সিংহ নিজেকে ভাবেন ২৬ বছরের ‘প্রায়-পানসে’ তরুণী। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
দুঃখ পেলে তাঁর চোখে জল আসে না। রাগ হলে চোখ ভিজে যায়। ছোটবেলায় মোটা ছিলেন বলে কম টিটকিরি শুনতে হয়নি তাঁকে। ‘মোটি’, ‘ফ্যাটি’, ‘ভ্যঁয়স’ এ সব বলেও অনেক সময় খ্যাপানো হত তাঁকে। আজও মোবাইল ফোন ঘাঁটলে সোনাক্ষী সিংহ-র দু’একটা ‘ওভারওয়েট’ ছবি খুঁজে পাওয়া যাবে। কেউ ওজন নিয়ে কথা তুলে এখন মজা করে সঙ্গে সঙ্গে সেই সব ছবি দেখিয়ে দেন তিনি। পেশার খাতিরে কতটা ওজন ঝরিয়েছেন, বোঝানোর জন্য। আর হয়তো মনে মনে হাসেন এই ভেবে যে, এক দিন যত আওয়াজই দেওয়া হয়ে থাকুক না তাঁকে, এ কথা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, আজ তিনি বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের মধ্যে একটা পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছেন!
কিন্তু আজকাল নাকি একটু আধটু মাথা গরম করে ফেলছেন তিনি? এই তো সে দিন কোথায় একটা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি নাকি কিছু ছবি হিট দেওয়ার পর নিজের পারিশ্রমিকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন? আর তাই শুনেই সোনাক্ষী সঙ্গে সঙ্গেই খানিকটা তির্যক ভাবে উত্তর দিয়ে ফেলেন। কলকাতায় ‘লুটেরা’-র প্রচারে এসে আবার এই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিতে পরিষ্কার জানালেন, “সৎ উত্তর দেওয়াতে কী ক্ষতি বলুন তো? ভাল কাজ করলে তো মানুষের টাকার অঙ্কটা বাড়ানোর অধিকার থাকে। তাতে এত প্রশ্নের কী আছে?” কথায় একটু ঝাঁঝ ছিল না ঠিকই, কিন্তু নিজের কাজের ওপরও বিশ্বাসটা ধরা পড়ছিল।
কোথাও কি তা হলে শত্রুঘ্ন সিংহ-র আদলে নিজেকে তৈরি করে ফেলতে চাইছেন তিনি? সারাজীবন শত্রুঘ্ন বেশ চাঁচাছোলা কথা বলে এসেছেন। এমনকী কথার তোড়ে বিতর্ক তৈরি হবে জেনেও নিজেকে আটকে রাখেননি তিনি। কয়েক মাস আগে স্বর্গীয় যশ চোপড়াকে ঘিরে এক অনুষ্ঠানে রানি মুখোপাধ্যায়কে ‘রানি চোপড়া’ বলে ডেকে কী বিতর্কই না তৈরি করেছিলেন! গোটা দেশ তা নিয়ে তোলপাড়। কখনও কি সোনাক্ষীর মনে হয়েছে যে, তাঁর বাবা আরও একটু সংযমী হলে ভাল হত? বা হয়তো কিছু কথা তিনি না বললেই পারতেন? প্রশ্ন শুনে এক মিনিটও ভাবলেন না সোনাক্ষী। বললেন, “না, বাবা যেমন কথা বলে থাকেন, আমার সেটাই পছন্দ। কিছু পালটাতে চাই না আমি। কী অসাধারণ রসবোধ বাবার! হি ইজ আ রকস্টার!” |
|
বাবা রকস্টার। আর সোনাক্ষীকে বলা হচ্ছে তিনি নাকি সব ছবির জন্য দারুণ পয়া। ‘দবাং’, ‘দবাং ২’, ‘রাউডি রাঠোর’, ‘সন অব সর্দার’-এর পর তিনি নাকি হিন্দি ছবির ‘একশো কোটি ক্লাব’-এর রাজকন্যা। কিন্তু এই ‘পয়া’ তকমাটা সোনাক্ষীর তেমন পছন্দ নয়। একজন পুরুষ অভিনেতার ছবি ভাল হলেই তাঁর অভিনয়ের দক্ষতা বা তাঁর বক্স অফিসের ক্রেজ নিয়ে প্রশংসা হয়। আর একজন অভিনেত্রীর ছবি ভাল হলেই কি সে শুধুমাত্র ‘লাকি ম্যাসকট’ হয়ে যায় নাকি? “ভাগ্য ভাল, আমাকে কেউ বলেনি যে, আমি শুধুই ছবির জন্য পয়া। অভিনয়টা একদম জানি না। এটা ঠিক যে অনেক ক্ষেত্রেই অভিনয়ের ক্রেডিটটা অভিনেতাদের ঝুলিতেই আসে...।”
ইচ্ছে করে না, এমন সব ছবি করেন যেখানে দর্শক হলে আসবেন শুধুমাত্র তাঁর অভিনয় দেখার জন্যই? “এখনও অবধি আমি সেই সব ছবি করেছি, যেগুলো আমি দর্শক হিসেবে দেখতে পছন্দ করি। ছোট ভূমিকায় থাকলেও আমার সব সময় লক্ষ্য ছিল যে, আমি যেন সিনেমাটা করে কিছু শিখতে পারি। আসলে ভাবিনি কোনও দিন অভিনয় করব। চেয়েছিলাম ডিজাইনার হতে। র্যাম্পে বন্ধুদের জন্য হাঁটতাম। আজও মনে আছে কলকাতার ডিজাইনার দেব আর নীলের জন্য একটা শো করতে এসেছিলাম এই শহরে। অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই অভিনয়ে চলে এসেছিলাম। তবে এ কথা ঠিক, যখনই কোনও স্ক্রিপ্ট পড়েছি, তখনই প্রথমে সেই রোলটায় আমি অন্য কাউকে ভেবেছি। নিজেকে নয়!”
কেন এমন অদ্ভুত চিন্তা তাঁর? ‘দবাং’-এর রাজ্জোর ক্ষেত্রেও কি তাই হয়েছিল নাকি? “ওখানে সেটা হয়নি। কারণ আমাকে বলা হয়েছিল যে ওই চরিত্রে আমাকে চাই। কিন্তু অন্য ছবির ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। যদিও কোন অভিনেত্রী সেটা না বললেও আমার এটুকু মনে আছে যে, ‘রাউডি রাঠোর’য়ের সময় আমার অন্য কারও কথা মনে হয়েছিল।”
তার পর যাকে বলে ইতিহাস। তবে ‘লুটেরা’র ক্ষেত্রে, প্রথম থেকেই নিজেকে পাখি হিসেবে দেখতে শুরু করেছিলেন তিনি। “ওটা করতে গিয়ে মনে হল আমি যেন স্কুলে পৌঁছে গিয়েছি। পিরিয়ড পিস ছিল। বেশ জটিল। আমার পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সিনেমা নিয়ে অনেক পড়াশুনো। আমার সহ-অভিনেতা রণবীর সিংহ রিহার্সাল করতে পছন্দ করে। আর আমি একদম আলাদা। আমি স্বতঃস্ফূর্ত অভিনেত্রী। ক্যামেরা চালু না হলে একদম অভিনয় করতে পারি না।”
বলাই বাহুল্য ‘লুটেরা’তে বাঙালি মেয়ে পাখির চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তাঁর বেশ ভাল লেগেছে। যদিও শ্যুটিং করতে করতে একদিন ঝোঁকের মাথায় সংলাপ বলতে গিয়ে রণবীর নাকি থুতু ছিটিয়ে দিয়েছিলেন! সেই স্মৃতি ঘাঁটলে আজ হাসি পায় তাঁর। মনে পড়ে, কী ভাবে তাঁর চরিত্র কী রকম নাকছাবি পরবেন সেটা তিনি নিজেই ঠিক করেছিলেন। “‘লুটেরা’য় আমার লুকটা ডিজাইন করেছেন সুবর্ণা রায় চৌধুরী। ও দারুণ কাজ করেছে এই ছবিতে। কী ধরনের নাকছাবি পরলে ছবিতে আমাকে মানাবে সেটা নিয়ে আমি ওর সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। ফুলকাটা নাকছাবি ব্যবহার করতে বলেছিলাম ওকে। আমি তো ছোট বেলা থেকেই নাকছাবি পরতে ভালবাসি। মা নাকছাবি পরতেন। তাই দেখে দেখে আমিও সেটা শিখেছি। শ্যুটিংয়ের খুব প্রয়োজন না থাকলে আমি নাকছাবিটা খুলি না।”
তবে নাকছাবি পরতে ভালবাসলেও, চেহারা বা সাজসজ্জায় অন্য কোনও স্টারসুলভ আচরণ নেই তাঁর। কত অভিনেত্রীর তো বিস্তর ঝামেলা থাকে। এই প্রোফাইলের ছবিটাই যেন ছাপা হয়। এমনকী আঁতেল ছবির বর্ষীয়ান অভিনেত্রীরাও এ নিয়ে বেশ সতর্ক। ছবি তুলে মনঃপূত না হলে ক্যামেরাম্যানকে সেই ছবি ডিলিট করতে বাধ্য করতেও আটকায় না তাঁদের। সোনাক্ষীর এই সব ঝামেলা নেই। “আমার কিছু এসে যায় না যদি একগাছা চুল বেরিয়ে থাকে। মেক আপটা ঠিক থাকল কি না সে নিয়েও কোনও বাড়াবাড়ি নেই আমার। আসলে এই সব নিয়ে আমি অবসেসড হতে চাই না,” বলেই নিজের ভাঙা নখদু’টো বের করে দেখালেন। “এই তো দেখুন না, দু’টো নখ ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু তাই বলে কি আমি ফোটোগ্রাফারদের বলব, ‘ভাই, ভাঙা নখের ছবি তুলো না যেন!’ আমি যেমন আছি বেশ আছি,” বলে চলেন তিনি।
যাঁকে বন্ধুদের নাম বলতে বললে প্রথমেই বলেন সলমন খান আর অক্ষয়কুমারের নাম, তিনি কি এমনিতেই তাঁর সমসাময়িক অভিনেত্রীদের থেকে বেশি সুবিধে পেয়ে যান না? “সলমন তো আমার পরিবারের মতো। সেটাকে কী করে অস্বীকার করব। আর অক্ষয়ের সঙ্গে কাজ করে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এতে আশ্চর্যের কী আছে?”
তা নয় হল। তবে এটা তো অবশ্যই আশ্চর্যের যে তিনি নিজেকে বর্ণনা করেন একজন ‘প্রায়-পানসে’ মানুষ হিসেবে। এ রকম অদ্ভুত একটা বর্ণনা কেন? এটা কি ইচ্ছে করে তৈরি করা একটা ইমেজ? নাকি সত্যি সত্যিই তিনি মানুষ হিসেবে একদম পানসে? “দেখুন, পার্টি ইত্যাদি আমার বেশি পছন্দ নয়। শ্যুটিং না থাকলে দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। নিজেকে নিয়ে থাকতে বেশ পছন্দ করি। ল্যাদ খেতে দারুণ লাগে আমার! এত ল্যাদ খেলে নিজেকে ‘বর্ডারলাইন বোরিং’ বলতে অসুবিধা নেই,” বলে হেসে ফেলেন।
এক মাস চার দিন হল ছাব্বিশে পড়েছেন। ফেলে আসা জন্মদিনে নিজের জন্য কী চাইলেন? ‘ওয়ানস্ আপন আ টাইম ইন মুম্বই দোবারা’, ‘বুলেট রাজা’, ‘পিস্তল’, ‘র্যাম্বো রাজকুমার’য়ের পরেও কি আরও কাজ চাই? নাকি চাই স্বপ্নের পার্টনার? “শুধু ভাল কাজ করে যেতে চাই। ‘লুটেরা’তে আমার নাম পাখি। আপাতত আমি পাখির মতোই উড়তে চাই...” |
|
|
|
|
|