ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাওয়া বা বিকল হয়ে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মাঝে মধ্যে ঘেরাও-বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটছে। ঘেরাও বিক্ষোভ হলেই বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা জানাচ্ছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ট্রান্সফর্মারের জন্য বলা হয়েছে। বরাদ্দ হলেই পাল্টে দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তার ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। অথচ ট্রান্সফর্মার বিলি করার জন্য সে সব ঠিকাদারদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাদের গুদামে প্রচুর পরিমাণ নতুন ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মজুত রয়েছে। তাও এক বছরের বেশি সময় ধরে। গত দু’দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে মজুত ট্রান্সফর্মারের হদিশ পেয়েছে জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের তদন্তকারী একটি দল।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের নিজস্ব গুদামে ট্রান্সফর্মার-সহ আনুসঙ্গিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ ওই বিভাগের অনুমোদিত ঠিকাদার সংস্থার গুদামে প্রচুর পরিমাণ নতুন ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মজুত রয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের নতুন রিজিওনাল ম্যানেজারের নির্দেশে গত দু’দিন ধরে বোলপুর এলাকায় কয়েকটি ঠিকাদার সংস্থার গুদামে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি চালিয়ে ওই দলের সদস্যদের চোখ কপালে উঠে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। কারণ, আমোদপুর, লাভপুর ও বোলপুরের কয়েকজন অনুমোদিত ঠিকাদারের গুদামে প্রচুর পরিমাণ নতুন ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের হদিশ মিলেছে। লাভপুরের একটি ঠিকাদারের কাছে থাকা ৩৫টির মতো ট্রান্সফর্মার মিলেছে একটি কাঠকলের গুদামে।
জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, “প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। সেগুলিকে মোটা টাকার বিনিময়ে অনুমোদনহীন প্রচুর সাবমার্সিবল পাম্পের জন্য চাষিদের সরবরাহ করেছেন ওই ঠিকাদারদের একটা বড় অংশ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অথচ কোথাও ট্রান্সফর্মার বিকল হলে তা সারিয়ে দিয়ে সেখানে নতুন ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে বলে ওই সব অসাধু ঠিকাদাররা জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে।” এই ভাবে গত তিন বছরে প্রায় কোটি টাকারও বেশি জালিয়াতি হয়েছে, এমনটাই জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত এক মাসে মাড়গ্রাম থানার বামদেবপুর গ্রামে ১৫ দিন ধরে একটি ট্রান্সফর্মার বিকল ছিল। বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের লোকেরা সেই ট্রান্সফর্মারের বদলে আর একটি ট্রান্সফর্মার বসিয়ে দেন। সেটিও বিকল। তখন বাসিন্দারা বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের দুপুর ২টো থেকে পরের দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের আটকে রেখেছিলেন। পুলিশ গিয়েও কিছু করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত নতুন ট্রান্সফর্মার বসালে তাঁরা ছাড়া পান। একই ভাবে নানুরের ফজিলাপুর গ্রামে একটি মাত্র ট্রান্সফর্মারে বাড়ি ও সাবমার্সিবল পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ট্রান্সফর্মার দীর্ঘদিন বিকল থাকে। চাষও মার খেয়েছে। এই নিয়ে গ্রামবাসী ও চাষিরা বিভিন্ন দফতরে ছোটাছুটি করার পরে ট্রান্সফর্মার পাল্টে দেওয়া হয়। তেমনি ময়ূরেশ্বর থানার নন্দিহাট ও কাশীপুর গ্রামের দু’টি ট্রান্সফর্মার বেশ কিছু দিন আগে বিকল হলেও এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই নিয়ে এলাকায় ক্ষোভও রয়েছে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, নুমোদিত ওই সব ঠিকাদাররা তো চুরি করে ওই সব জিনিসপত্র নিয়ে যাননি? সেগুলি বিভিন্ন অফিসারদের মাধ্যমে কাগজে কলমে নিয়েছেন? এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের রিজিওনাল ম্যানেজার কল্যাণকান্তি দাস বলেন, “সবে তদন্ত শুরু হয়েছে। বীরভূম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। সব সম্ভবনা ও সন্দেহ খতিয়ে দেখে খুব শীঘ্রই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |