শাহরুখ খান, কমলহাসনের পরে এ বার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। টরন্টোর পিয়ার্সন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হেনস্থার শিকার হলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী। অভিযোগ, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে বারোটায় টরন্টোয় নামার পর বিমানবন্দরেই প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা টানা জেরা করা হয় তাঁকে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভিসা থাকা সত্ত্বেও বলা হয়, তাঁর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ব্যাগ খুলিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা হয় জিনিসপত্র, কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল। এমনকী, অপমানিত ঋতুপর্ণা কেঁদে ফেললে তাঁকে মানসিক রোগীর তকমা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে কানাডায় ঢোকার অনুমতি দেওয়া হলেও গোটা ঘটনায় অসন্তুষ্ট ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক কানাডা সরকারের কাছে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) পাঠিয়েছে।
উত্তর আমেরিকার বঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে টরন্টো গিয়েছেন ঋতুপর্ণা। ওই বঙ্গ সম্মেলনের চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে তাঁর অভিনীত রেশমী মিত্রের ছবি ‘মুক্তি’ দিয়ে। ঋতুপর্ণার সঙ্গে ছিলেন তাঁরা মাসি-শাশুড়ি, ৮০ বছর বয়সী নীলিমা চট্টোপাধ্যায়। তিনি কানাডারই নাগরিক।
হেনস্থা-পর্ব মেটার পরে ফোনে ঋতুপর্ণা বলেন, “মুম্বই থেকে লুফৎহানসার বিমানে আমরা টরন্টোয় নামি। তার পরেই যেন বাঘের মুখে। অভিবাসন দফতরের কর্মীরা আমার ভিসা পরীক্ষা করে জানালেন, সেটির মেয়াদ শেষ, তাই আমাকে কানাডায় ঢোকার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। আমি বলি, আমার ভিসা শেষ হবে ২০১৫-য়।” ঋতুপর্ণা জানান, অভিবাসন কর্মীদের তিনি ফেরার টিকিটও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা তখন কোনও কথাই শুনতে নারাজ। “ওঁরা বলেছিলেন, উপযুক্ত নথি না-দেখানো পর্যন্ত আমাকে বিমানবন্দরেই থাকতে হবে। প্রয়োজনে সে দিনই আমার ফেরার টিকিট কেটে দেওয়া হবে। আর আমায় নাকি বলতে হবে, আমি স্বেচ্ছায় ফিরে যাচ্ছি!”
ঋতুপর্ণার অভিযোগ, এর পর অভিবাসন দফতরের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে রীতিমতো জেরা শুরু করেন এক মহিলা। কেন এসেছেন, কোথায় থাকবেন, কোনও আত্মীয় আছেন কি না, কোন চলচ্চিত্র সংস্থায় কাজ করেন, অভিনয়ের বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেন কি না ইত্যাদি। ঋতুপর্ণার কথায়, “আমি এক এক করে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও ওঁরা যে সন্তুষ্ট নন, সেটা বুঝলাম যখন ওই মহিলা ফের ভিসা প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন। কিছু ক্ষণ কম্পিউটার ঘেঁটে এ বার বললেন, কানাডা দূতাবাস আমার ভিসা অনুমোদন করেনি। তাই বিমানবন্দর থেকেই ফিরে যেতে হবে। তখন লজ্জায়, রাগে আমার কান লাল হয়ে গিয়েছে। যা থাকে কপালে ভেবে ভিসা বাতিল সংক্রান্ত নথি দেখানোর জন্য পাল্টা চাপ দিতেই চুপ করে গেলেন ওই মহিলা।”
এ সবের মধ্যেই শুরু হয় ব্যাগ খুলে ঘাঁটাঘাঁটি। ঋতুপর্ণা জানান, ব্যাগের মধ্যে বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ও চেকবই ছিল। সেগুলো নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। ‘কেন এত ভিজিটিং কার্ড? চেকবই-ই বা কেন?’ ঋতুপর্ণা জানান, তিনি অভিনেত্রী। অনেক লোকের সঙ্গে আলাপ হয়, ভিজিটিং কার্ড দেওয়া-নেওয়া তো হয়ই। আর জরুরি দরকারের কথা ভেবে চেকবই তো যে কেউ সঙ্গে রাখতে পারেন।
গোটা জেরা-পর্বে বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারে বসেছিলেন ঋতুপর্ণার মাসি-শাশুড়ি। ঋতুপর্ণার মতোই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কাঁদতে শুরু করেন। ঋতুপর্ণা জানান, সেই কান্না দেখে অভিবাসন কর্মীরা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও জেরা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ২০১২-য় ভিসা অনুমোদনের পরেও কেন তিনি কানাডায় আসেননি? ঋতুপর্ণা জানান, সেই সময়ে শু্যটিং বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আবার কম্পিউটার ঘাঁটার পর প্রশ্ন আসে তা হলে ২০১০-এ কেন এসেছিলেন? ঋতুপর্ণা উত্তর দেন, মন্ট্রিল চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল তাঁরই ছবি ‘আরোহণ’।
ঋতুপর্ণা জানান, জেরা চলাকালীন তাঁর স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী সিঙ্গাপুর থেকে তাঁকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু ফোন ধরতেই তাঁর মোবাইল দু’টি কেড়ে নেওয়া হয়। এক অভিবাসন কর্মী বলেন, “ফোনে কথা বলা যাবে না।” লাইন কেটে যাওয়ার আগে এই কথাটুকুই শুনে ফেলেন সঞ্জয়বাবু। তিনি তৎক্ষণাৎ কানাডার ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। খবর যায় বিদেশ মন্ত্রকেও। পরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র আকবরউদ্দিন আনন্দবাজারকে বলেন, “ভারতীয় দূতাবাস বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরে আগাগোড়া ঋতুপর্ণার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল। পরে আমরা কানাডার অভিবাসন দফতরের কাছে কূটনৈতিক প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) পাঠিয়েছি।” বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কানাডা সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
১১ বছর আগে টরন্টোর এই বিমানবন্দরেই হেনস্থা হয়েছিলেন অভিনেতা কমলহাসন। শাহরুখ খান এবং ইরফান খানও একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন মার্কিন বিমানবন্দরে। এ বার ঋতুপর্ণা।
|