ঠিক তিন বছরের ব্যবধান। আর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
নিউ ইয়র্কের একটি বিমানবন্দরে শাহরুখ খানকে ফের আটকে রেখে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠল। যদিও ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার জন্য সরকারি স্তরে ও ব্যক্তিগত ভাবে শাহরুখের কাছে ক্ষমা চেয়েছে মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু তাতে যে এ বার চিঁড়ে ভিজবে না, তা আজ ভাল ভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। মস্কো থেকে আজ তিনি বলেন, “বার বার একই ঘটনা ঘটবে, আর ক্ষমা চাওয়া হবে এটা একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এ ভাবে চলতে পারে না।” নয়াদিল্লিতে মার্কিন ডেপুটি ‘চিফ অফ দ্য মিশন’ ডোনাল্ড লু-কে ডেকে পাঠিয়ে লিখিত প্রতিবাদ (ডিমার্শ) দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আমেরিকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত নিরুপমা রাওকেও।
যদিও শাহরুখ বিষয়টি নিয়ে রসিকতাই করেছেন। বলেছেন, “প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বিমানবন্দরে অপমানিত হলাম। প্রতি বারের মতোই। ভালই লাগল! যখন নিজেকে নিয়ে দম্ভটা বেড়ে যায়, আমি স্রেফ আমেরিকা চলে আসি।” ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হয়েছে বলিউডও। জাভেদ আখতার থেকে শুরু করে মহেশ ভট্ট প্রত্যেকেই মার্কিন প্রশাসনের নিন্দায় মুখর। ট্যুইটারে আবার অনেকে এ-ও বলেছেন, ‘আমেরিকার জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও এ রকমই ব্যবহার করা উচিত’।
সম্প্রতি আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় শাহরুখকে ‘চাব ফেলোশিপ’ দিয়েছে। সেই সূত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গত কাল ব্যক্তিগত বিমানে নিউ ইয়র্ক আসেন শাহরুখ। দুপুর পৌনে একটা নাগাদ নিউ ইয়র্কের কাছে একটি ছোট্ট বিমানবন্দর হোয়াইট প্লেনস-এ নামেন শাহরুখ। সঙ্গে ছিলেন শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর স্ত্রী নীতা অম্বানীও। অভিযোগ, নীতা-সহ বিমানের অন্য যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হলেও মার্কিন অভিবাসন দফতরের কর্মীরা প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে রাখেন শাহরুখকে। |
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে দুপুর আড়াইটে নাগাদ ছাড়া হয় তাঁকে।
এটাই প্রথম নয়। ২০০৯ সালেও আমেরিকার নিউ জার্সির নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে প্রায় দু’ঘণ্টা তাঁকে আটকে রেখেছিলেন মার্কিন অভিবাসন দফতরের অফিসাররা। তাঁর পদবির জন্যই তাঁকে এ ভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে বলে সে বার জানিয়েছিলেন স্বয়ং শাহরুখই। তবে এ বারের ঘটনা নিয়ে সে রকম কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি। সাংবাদিক বৈঠকেও এ নিয়ে মুখ খোলেননি।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে হলভর্তি ছাত্রছাত্রীদের সামনেই এ নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন শাহরুখ। তিনি বিষয়টি নিয়ে রসিকতা করলেও হল-এ উপস্থিত ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের বাবা-মায়েরা সব শুনে তখন চরম অস্বস্তিতে। শাহরুখ অবলীলায় বললেন, “ওঁরা (অভিবাসন দফতরের কর্মীরা) যখনই জিজ্ঞেস করে আমি কত লম্বা, আমি মিথ্যে বলি। বলি, ৫ ফুট, ১০ ইঞ্চি। এর পর আরও একটু সাহস দেখাব। যদি ওঁরা আমার গায়ের রং কী জানতে চায়, বলব, সাদা!”
ব্যস, ওই টুকুই। বাকি বক্তৃতা জুড়ে শাহরুখ শুধুই ছিলেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চাব ফেলো’। তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, টুকরো টুকরো স্মৃতি, তাঁর স্টারডম, নিজস্ব ঢঙে রসিকতা। সব কিছুই ভাগ করলেন হল উপচে পড়া দর্শকের সঙ্গে। এমনকী ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধে নাচলেনও।
যদিও ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ঘটনা যে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে, তা আঁচ করেই বোধহয় প্রথম থেকেই নড়েচড়ে বসে মার্কিন প্রশাসন। ‘বিব্রত’ মার্কিন শুল্ক ও সীমান্তরক্ষী দফতর তড়িঘড়ি ক্ষমা চেয়ে একটি চিঠি লেখে ভারতীয় কনস্যুলেটে। তবে একই সঙ্গে সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, শাহরুখের বক্তৃতা
দেওয়ার বিষয়টি তাঁদের আগে থেকে জানা ছিল না। শাহরুখের নামের পাশে একটি বিশেষ চিহ্নও দেখেছিলেন অভিবাসন কর্মীরা। উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া তাই ছাড়া যাচ্ছিল না বলিউড তারকাকে। মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র পিটার ভ্রুম্যানও ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমা চেয়েছেন শাখরুখের কাছে। ভ্রুম্যান বলেন, “আমাদের দেশের অনেকেই ভারতীয় ছবি পছন্দ করেন, আর শাহরুখের মতো মহান অভিনেতার কাজও অনেকের কাছেই খুব প্রিয়। মার্কিন দূতাবাসের তরফে আমরা অত্যন্ত দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।”
শাহরুখকেই বারবার হেনস্থা হতে হয় কেন? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে যখন শাহরুখকে আটকানো হয়েছিল, তখন মন্টি নামে এক ব্যক্তির নাম তাতে জড়িয়েছিল। শাহরুখ যে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন, মন্টি ছিলেন তার অন্যতম উদ্যোক্তা। এই মন্টি এক সময় ডন আবু সালেমের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে অভিযোগ। ফলে শাহরুখকে বার বার এ ভাবে হেনস্থার পিছনে সেটিও একটি কারণ হতে পারে।
তবে শুধু তো শাহরুখই নন। রাজনীতি হোক বা অভিনয় জগৎ মার্কিন বিমানবন্দরে এর আগেও নানা ভাবে হেনস্থা হতে হয়েছে বিশিষ্ট ভারতীয়দের। এ পি জে আব্দুল কালাম থেকে শুরু করে মীরা কুমার, প্রফুল্ল পটেল, হরদীপ পুরি, নীল নিতিন মুকেশ, জন আব্রাহাম, ইরফান খান, মামুট্টি। তালিকা নেহাত ছোট নয়।
আর সেই তালিকায় বারবারই ফিরে আসছেন শাহরুখ খান। যিনি নিজের ছবিতেই বলেছেন, “মাই নেম ইজ খান। অ্যান্ড আই অ্যাম নট এ টেরোরিস্ট।”
|