গৃহযুদ্ধেও অটুট শান্তি, বলছেন সেনানীরা
মন কিছু যুদ্ধ আছে, যেখানে জেতাটাই হার আর হারাটাই জিত। তা সে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধই হোক, বা ভোট। কুরুক্ষেত্রে অজুর্ন যেমন কাছের মানুষগুলোকে কীভাবে মারবেন তা বুঝতে না পেরে যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিলেন। পরে কৃষ্ণের পরামর্শে আবার যুদ্ধ করেন। ভোট যুদ্ধেও পরিস্থিতি অনেকটা তাই। কাছের মানুষ যেহেতু প্রতিপক্ষ তাই হার-জিতটা সত্যিই বড্ড গোলমেলে। ভাই-বোন, ননদ-বৌদি, জামাই-শ্বশুর কিংবা দুই জা- মিষ্টি সম্পর্কগুলো এখন একে অন্যের প্রতিপক্ষ। কিন্তু তা বলে লড়াই তো থামানো যায় না। তাই কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন সবাই। কিন্তু প্রার্থী ছাড়া বাড়ির বাকি মানুষগুলো পড়েছেন উভয় সঙ্কটে। মেয়েকে ভোট দিলে যে বৌমা হেরে যাবে, আবার আদরের জামাইকে ভোট দিলে হার হবে ঘরের লোকটার।
কালনা মহকুমা জুড়ে এবার বেশকিছু এমন পরিবারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, যেখানে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দুই মানুষ যুযুধান পক্ষ। কালনা ১ ব্লকের হাটখোলা পঞ্চায়েতের মীরপুর-কোলডাঙার পঞ্চায়েত আসনটি এবার তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এখানে একে এপরের বিরুদ্ধে লড়ছেন এক আদিবাসী পরিবারের দুই ভাই-বোন। ভাই লক্ষ্মন মান্ডি তৃণমূলের প্রার্থী, আর দিদি সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মী মান্ডি। আলাদা বাড়িতে থাকলেও দু’জনের সম্পর্ক যথেষ্ট গভীর। তাঁদের কথায়, “প্রচারের জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি নয়, বরং দলের নীতি, আদর্শের কথা ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। আর আমাদের তো যে বাড়িতেই ভাল রান্না হোক তা অন্য বাড়িতে পৌঁছে যাবে।” তাঁদের দাবি, বিপদে পড়লে রাজনীতির রং দেখবেন না, রক্তের টানেই একে অন্যের কাছে ছুটে যাবেন। তাঁরাই জানালেন, মা ইতিমধ্যেই ফতোয়া জাবি করেছেন যে, ভোটের জন্য সম্পর্ক যেন নষ্ট না হয়।
মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতের ১৬২ নম্বর বুথের দেওয়ানিয়া গ্রামের আইচ পরিবারে আবার মুখোমুখি দুই বৌমা। মীনা আইচকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল, আর তাঁর খুড়তুতো জা চিত্রলেখা আইচ ময়দানে নেমেছেন সিপিএমের হয়ে। এখানেই শেষ নয়, এই পরিবারের মেয়ে পূরবীদেবীর বিয়ে হয়েছে গ্রামের কুণ্ডু বাড়িতে। তিনি আবার কংগ্রেসের প্রার্থী। তবে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট চাওয়া হোক, বা দেওয়াল লিখন তিনজনেই একে অপরকে টেক্কা দিতে তৈরী। তাঁরা বলেন, “ভোটে যেই জিতুক না কেন, পারিবারিক সম্পর্কের ভিত তাতে নড়বে না।”
কালনা ২ ব্লকের আনুমাল পঞ্চায়েতের ওমরপুর গ্রামে লড়াইয়ে নেমেছেন শাশুড়ি-বৌমা। ১২১ নম্বর বুথে গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল জিতেছিল ১২১ ভোটে। বিধানসভা ভোটে ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ৬১ তে। এ বার সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী ২৯ বছরের তাসমিনা বিবি। প্রচারে তিনি তুলে ধরেছেন সরকারি নানা কাজের খতিয়ান। ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের আশ্বাস দিচ্ছেন। তার বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন তাঁর জেড়তুতো শাশুড়ি, সিপিএমের প্রার্থী নাসিরা শেখ। এমনতি রাখী তৈরি করে সংসার চালানো নাসিরা বিবি প্রচারে তুলে ধরছেন অনুন্নয়নের নানা কাহিনী। শাশুড়ি-বৌমার লড়াই নিয়ে সরগরম পাড়াও।
পূর্বসাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের মালোপাড়া গ্রামে আবার লড়াই দুই বেয়াইয়ের। গতবারের বিজয়ী প্রার্থী অতুল বিশ্বাসকে এ বারও টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। তাঁকে টক্কর দিতে তৈরি সিপিএমের প্রার্থী, অতুলবাবুর ছেলের শ্বশুর গুরুদাস মালোও। দু’জনেই জানান, দুই পরিবারের সম্পর্ক অত্যন্ত মিষ্টি। নানা অনুষ্ঠানে যাতায়াতও রয়েছে। ভোটের জন্য তাতে ফাটল ধরবে না।
কালনা ১ ব্লকের হাটকালনা পঞ্চায়েতের রামেশ্বরপুরে লড়াই বৌদি-ননদে। তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন অনিতা দাস। আর তাঁর ননদ শুভ্রা দাস দাঁড়িয়েছেন সিপিএমের হয়ে।
নান্দাই পঞ্চায়েতের আশ্রমপাড়ার ভোটযুদ্ধে আবার মুখোমুখি জামাই-শ্বশুর। তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন শ্বশুর সুধীর হালদার। আর তাঁর মেজো জামাই বিজয় সরকার সিপিএমের প্রার্থী। তাঁদের দাবি, “ভোটের প্রচারে ব্যক্তিকে আক্রমণ নয়, দলের নীতি, আদর্শ ও চিন্তাধারা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।”
কিন্তু ৩০ জুলাই ফল বেরোনোর পরে? কেমন সন্ধ্যা আসবে এই সব বাড়িতে? তার কি এক চোখে কান্না, আর এক চোখে হাসি?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.