বর্ষার মরসুমেও দক্ষিণ দিনাজপুরে তীব্র দাবদাহ অব্যাহত। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা দেখা গেলেও, নিয়মিত বৃষ্টি না হওয়ায় বাসিন্দারা যেমন গরমে কাহিল হচ্ছে, তেমনিই জেলার প্রধান খাদ্যশস্য আমন ধান চাষের সময় জলের অভাবে চাষিরাও সঙ্কটে পড়েছে।
তবে জেলার কুশমন্ডি, বংশীহারি, হরিরামপুর ও গঙ্গারামপুর ব্লকে গত মাসের শেষ দিকে একটানা ভারী বৃষ্টি হলেও, বালুরঘাট ব্লকে সে তুলনায় বৃষ্টিপাত হয় নি বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জুন মাসে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। ফলে, আমন ধানের বীজতলা তৈরি ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে।
বৃষ্টির উপর নির্ভর করেই এই জেলায় মূলত আমন ধানের চাষ হয়। কৃষি দফতর জানিয়েছে, ধান উৎপাদনে বরাবর সাফল্যের পেছনে রয়েছে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা লক্ষীকান্ত মান্ডি বলেন, “গতমাসে বৃষ্টি হয়েছে ২৯৩ মিলিমিটার। জুন মাসে প্রায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। জুলাই মাসে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক গড় পরিমাণ প্রায় ৪০০ মিলিমিটার। এখনও ভারী বৃষ্টির দেখা নেই। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে টানা ভারী বর্ষন না হলে আমন ধান রোয়ার কাজ বিপর্যস্ত হবে।” |
শুকনো জমিতেই চাষের কাজ চলছে বালুরঘাটে। —নিজস্ব চিত্র। |
দক্ষিণ দিনাজপুরে মোট কৃষি জমির পরিমাণ ১ লক্ষ ৭৫ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার হেক্টারে আমন ধানের চাষ হয়। এবারের একই পরিমাণ জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চাষিরা বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নিলেও আকাশের অবস্থা দেখে চিন্তিত বালুরঘাট ব্লকের ভাটপাড়া এলাকার চাষিরা পাম্পসেট ভাড়া নিয়ে পাটের চাষ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে বৃষ্টির অভাবে জমি এখন খটখটে। এলাকার ধানচাষি বৈদ্যনাথ বর্মন, জীবন মালি, কৃষ্ণ মালিরা বলেন, “চলতি মাসের শুরু থেকে আমনের বীজতলা তৈরি করেছি। মধ্য জুলাইয়ের মধ্যে আমনের চারা রোপনের আদর্শ সময়। তাই বৃষ্টিটা এখন থেকেই খুব জরুরি।” পরিবেশবিদদের মতে, বালুরঘাটে সবুজায়ণে ব্যাপক ঘাটতি থাকায় ফি বছর বৃষ্টির ঘাটতি থাকছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির সঙ্গে গরমে পাল্লা দিচ্ছে এই জেলা।
বন দফতর সূত্রের খবর, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মোট ভূখন্ডের ৩৩ শতাংশ এলাকায় বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরে বনভূমির পরিমাণ মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ। তার উপর কাঠচোরেদের দাপটে রাতে অন্ধকারে বনভূমি সাফ হয়ে যাচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। |