ভরা কোটালের জোয়ারের তোড়ে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমায় চার ব্লকের অধীনে কয়েকটি পঞ্চায়েতে সমুদ্র ও নদীবাঁধে ধস নেমেছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা বর্ষার আগে বাঁধগুলি সংস্কার না-হলে প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কাকদ্বীপ মহকুমায় নদীনালা বেষ্টিত চারটি ব্লকসাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমা। ওই চারটি ব্লকে মাস কয়েক ধরে ভরা কোটালের জেরে বিভিন্ন নদী ও সমুদ্রবাঁধে ধস নেমেছে। সাগরের মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েতে কচুবেড়িয়া ঘাটের কাছে প্রায় ১০০ ফুট নদীবাঁধে ধস নেমেছে। একই ভাবে মুড়িগঙ্গা-২ পঞ্চায়েতে মন্দিরতলা গ্রামের কাছে দেড়শো ফুট এলাকা জুড়ে ধস নেমেছে। পয়রা-১ পঞ্চায়েতে সুমতিনগর গ্রামের কাছে মুড়িগঙ্গার বাঁধের ৫০ ফুট ভেঙে পড়েছে। ধবলাই পঞ্চায়েতে বোটখালি, বেজিয়াখালি, চিমাগুড়িতে সমুদ্রবাঁধ ভেঙে সম্পূর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতে মুড়িগঙ্গার বাঁধে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ধস নেমেছে।
অন্যদিকে পাথরপ্রতিমা ব্লকে গোপালনগর পঞ্চায়েতে দুর্গাগোবিন্দপুর গ্রামের কাছে গোবদিয়া নদীবাঁধের ৩০০ ফুট ও অচিন্ত্যনগর পঞ্চায়েতে বিষ্ণুপুর গ্রামের কাছে মৃদঙ্গভাঙা নদীর বাঁধে ৫০ ফুট মতো ভেঙে নোনা জল ঢুকে পড়েছে। বনশ্যামনগর পঞ্চায়েতে গঙ্গাপুর গ্রামের কাছে জগদ্দল নদী বাঁধের ৩-৪টি পয়েন্টে বাঁধে বড় রকমের ফাটল দেখা দিয়েছে। |
জি-প্লট পঞ্চায়েতে ১২ নম্বর ঘাটের কাছে জগদ্দল নদীর বাঁধ ২০০ ফুট ধসে গিয়েছে। রামগঙ্গা পঞ্চায়েতে সাপখালি গ্রামের কাছে মৃদঙ্গভাঙা নদীবাঁধের ২০০ ফুট ও অচিন্ত্যনগর পঞ্চায়েতে হাফিসুর পল্লি গ্রামের কাছে শিরুয়া নদীবাঁধের ৫০ ফুট এবং পশ্চিমে শ্রীপতিনগর গ্রামের কাছে ঠাকুরান নদীবাঁধ ২০০ ফুট ভেঙে গিয়েছে।
নামখানা ব্লকের নারায়ণপুর পঞ্চায়েতে নন্দাডাঙা গ্রামের কাছে মুড়িগঙ্গা নদীবাঁধের ৫০০ ফুট এবং নামখানা পঞ্চায়েতে নারায়ণগঞ্জ গ্রামের কাছে ৭০০ ফুট এলাকায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছে। মৌসুনি পঞ্চায়েতের বাড়িয়াড়া, কুসুমতল ও বাগডাঙা গ্রামের কাছে বটতলা নদীবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। নদীবাঁধে ধস নেমেছে কাকদ্বীপের রামগোপালপুর পঞ্চায়েতে রামগোপালপুর গ্রামের কাছেও।
ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় মথুরাপুর-২ ব্লকের নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে মণিনদীর বাঁধ ভেঙেছে ২০০ ফুট জুড়ে। দমকল পঞ্চায়েতে দিগম্বরপুর ঘাটের কাছে ৩০০ ফুট এলাকা ধসে গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ২০০৯ সালে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত এই সহ নদীবাঁধ ঠিকমত মেরামত হয়নি। তার ফলে ফের বাঁধগুলিতে ধস নেমেছে। কোথাও বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে এলাকা। এই অবস্থায় বর্ষা পুরোপুরি নেমে গেলে এ বারও তাদের বন্যায় ভাসতে হবে।
বাসিন্দাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। কারণ, ভাঙন কবলিত এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানরা ১০০ দিনের প্রকল্পের মাধ্যমে নদীবাঁধ মেরামতির যেটুকু কাজ শুরু করেছিলেন, তা এখন প্রায় বন্ধ। ফলে, ঘরবাড়ি, পরিবার নিয়ে চরম আশঙ্কায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। |