|
|
|
|
পাঁচ বছরেই উল্টো ছবি নন্দীগ্রামে |
কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে, এতেই স্বস্তি বিরোধীদের
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
জমি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিরোধী তৃণমূলকে ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বস্তি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ‘অস্বস্তিতে’ পড়েছিল শাসক বামেরা। পাঁচ বছর পর, ২০১৩-র নির্বাচনেই সেই চিত্রটা সম্পূর্ণ উল্টো। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসার খবরে স্বস্তি ফিরেছে বাম-সহ বিরোধী শিবিরে। আর তাতেই ‘অস্বস্তিতে’ পড়েছে বতর্মান শাসকদল তৃণমূল।
জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ৩৯৭৭টি বুথের মধ্যে প্রায় ৩১৫০টি বুথ স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে নন্দীগ্রাম, খেজুরি, মুগবেড়িয়া, পটাশপুর, পাঁশকুড়া এলাকার অধিকাংশ বুথ রয়েছে।
মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরুর সময় থেকেই রাজ্যজুড়ে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল তৃণমূল তাঁদের প্রার্থীদের মারধর, হুমকি দিয়ে সন্ত্রাস করেছে। ব্যতিক্রম ছিল না পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকা নন্দীগ্রামও। বিরোধীদের যুক্তি ছিল পরিকল্পিত সন্ত্রাসের জন্যই নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ৩২টি ও নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে তৃণমূলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। নতুন করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী আসার খবরে বিরোধীরা এখন বলতে শুরু করেছে এ বার আসল লড়াই শুরু হল। কেননা, তাদের দাবি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়া জায়গাগুলিতে ছাড়া বাকি আসনগুলিতে এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট হওয়ায় সাধারণ মানুষেরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। বোঝা যাবে শাসক দলের প্রতি প্রকৃত জনসমর্থন কতটা রয়েছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরা।
কেন এমন দাবি বাম-সহ বিরোধী দলগুলির?
এর উত্তরে তারা জানাচ্ছেন, ভয় পেয়েছে বলেই তৃণমূল এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারের নামে বিরোধী ভোটারদের ভোট না দিতে হুমকি দিচ্ছে। নন্দীগ্রামের কংগ্রেস নেতা তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য সবুজ প্রধানের কথায়, “ওরা এখনও আমাদের সমর্থকদের ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তাই ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে মানুষ কিছুটা হলেও সাহস পাবেন।” তিনি এও মানছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট হলে তাঁদের সুবিধাও হবে। নন্দীগ্রামের সিপিএম নেতা অশোক গুড়িয়ার দাবি, “তৃণমূলের হুমকি, সন্ত্রাসের কারণে আমাদের অনেকেই প্রার্থী হতে পারেননি। এমনকি যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদেরও প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে সাহস পাবেন।”
বিরোধীদের দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল। নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী আবু তাহেরের কথায়, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট হলে আমাদের সুবিধাও নেই, অসুবিধাও নেই। নন্দীগ্রামের মানুষ আমাদের ফের বিপুল ভোটে জেতাবেন।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “বিরোধীরা এখানে বেশীর ভাগ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। রয়েছে নির্দল প্রার্থীও। বাধা দেওয়া হলে এত জন প্রার্থী হল কী করে?”
সব দেখে শুনে নন্দীগ্রামের এক রসিক মানুষের তাই সরস মন্তব্য, “আসলে ওরা সবই টাকার এ পিঠ ও পিঠ। নন্দীগ্রাম আছে নন্দীগ্রামেই। আমাদের কথা আর ভাবার সময় আছে নাকি ওদের।” |
|
|
|
|
|