|
|
|
|
হেলে গিয়েছে স্কুলভবন, ছাত্রাবাসেই চলছে ক্লাস
অমিত কর মহাপাত্র • এগরা |
স্কুল ভবনের এক দিক কাত হয়ে রয়েছে। তা ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও দিন। ব্লক ও জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়াররা ভবন দেখে জানিয়ে দিয়েছেন আর সংস্কার করে লাভ নেই, তাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করুক স্কুল কর্তৃপক্ষ। অথচ উপায়ন্তর না থাকায় সেই ভবনেই নিত্য দিন ক্লাস করতে বাধ্য হচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। ঘটনার জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে অভিভাবক থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর মধ্যে।
সংখ্যালঘু তফশিলি জাতি, উপজাতি অধ্যুষিত এগরা ২ ব্লকের ওই এলাকায় ১৯৫৭ সালে তৈরি হয় বিদুরপুর বিদ্যানিকেতন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বারোশো। তিন তলা ভবনের কুড়িটি ঘরে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, পরীক্ষাগার ও অফিসঘর। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০০৪ সাল থেকেই স্কুল ভবনে বড় বড় ফাটল নজরে আসে। ভেঙে পড়তে থাকে চাঙর। তখন থেকেই ওই ভবনটির কয়েক দফা সংস্কার করা হলেও লাভ হয়নি। প্রধান শিক্ষক অবিনাশ জানা বলেন, “সর্বশিক্ষা দফতর হতে ২০০৬ থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় মাত্র ১১ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছে। সেই টাকায় পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ তৈরির কাজ চলছে। অথচ পড়ুয়া সংখ্যা অনুযায়ী মোট শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন ২৩টি। তাই বাধ্য বয়েই ওই ভগ্নপ্রায় ভবনে পঠন-পাঠন চালাতে হচ্ছে।”স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যা মেটাতে হাত পড়েছে তফশিলি জাতি উপজাতি ছাত্রদের ছাত্রাবাসেও। |
চাঙড় ভেঙে বিপজ্জনক বিদুরপুর বিদ্যানিকেতন। ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
বর্তমান শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে তার চারটি ঘরে চলছে পঠনপাঠন। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ফলে তার পরেও ব্যবহার করতে হচ্ছে ভগ্নপ্রায় ওই ভবনটিকেই। এমনকী প্রয়োজনের তুলনায় কম শ্রেণিকক্ষ থাকায় খোলা আকাশের নীচে স্কুল মাঠে বসে মিড-ডে মিল খেতে বাধ্য হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। স্বাভাবিক ভাবেই হঠাৎ বৃষ্টি নামলে বন্ধ হয়ে যায় মিড-ডে মিল। গোটা ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সমস্যার সমাধান না হলে ভোটের মুখে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা।
বিদুরপুর বিদ্যানিকেতন স্কুলের ছাত্র তন্ময় খাটুয়া, ছাত্রী আফসানা খাতুন, ফিরোজা খাতুনেরা জানান, ভাঙা ঘরে ক্লাস করতে তাদের ভয়ের কথা। তাদের কথায়, গাদাগাদি করে বসতে হয় বলে স্কুলে পড়ার মনোযোগ থাকে না। তা ছাড়া ভাঙা ঘরেই রয়ে গিয়েছে গ্রন্থাগার, পরীক্ষাগার এবং বেশ কিছু শ্রেণিকক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে সেখানে যেতে হয় তাদের। অভিভাবক সত্যরঞ্জন মাইতি, সুতপা মাল, শেখ সমীরুদ্দিনরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়েও আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারি না। এ ভাবে চলতে থাকলে যে কোনও দিন বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এত বছর ধরে সরকারি এই উদাসীনতা বিষ্ময়কর।
স্কুল পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে শ্রেণি বিভাজন কমিয়ে অধিকাংশ শ্রেণিকে ভগ্নপ্রায় ভবন থেকে সরিয়ে আনা হবে। তৃণমূল প্রভাবিত ওই পরিচালন সমিতির সম্পাদক উৎপল পাহারী বলেন, “স্কুলের নতুন ভবন তৈরির জন্য জরুরি ভিত্তিতে টাকা দেওয়া উচিৎ সরকারের। না হলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে।”
অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদ সিপিআইয়ের প্রবোধ পান্ডা ও তৃণমূলের বিধায়ক সমরেশ দাস স্কুলের অনুষ্ঠানে এসে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখেননি। তবে দু’জনেরই দাবি, স্কুল থেকে এ ব্যাপারে তাঁদের কখনও তাগিদ দেওয়া হয়নি। তবে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্কুল থেকে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে জমা দিলে তাঁরা দ্রুত অর্থ বরাদ্দ করার চেষ্টা করবেন। |
|
|
|
|
|