|
|
|
|
ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতন |
পরিচালন সমিতি ও প্রশাসক ছাড়াই দেড় বছর ধরে চলছে স্কুল
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
পরিচালন সমিতি নেই। প্রশাসকও নেই। ফলে, গত দেড় বছর ধরে চরম সমস্যা চলছে খড়্গপুর শহরের ইন্দা কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনে। স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম পুরোপুরি বন্ধ। পরিকাঠামো থাকলেও চালু হয়নি মিড-ডে মিল। ছাত্ররা সরকারি অনুদানের টাকা পাচ্ছে না। কয়েকটি শ্রেণিকক্ষে বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। তা সংস্কার হচ্ছে না। সমস্যা সমাধানের আর্জি নিয়ে শিক্ষা দফতর থেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদসকলেরই দ্বারস্থ হয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। লিখিত অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুরাহা মেলেনি। পরিস্থিতি দেখে অগত্যা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। হাইকোর্টে তাঁর আর্জি, অন্তত একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হোক। মামলাটি এখন বিচারাধীন।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড়ের বক্তব্য, “সমস্যার কথা অজানা নয়। সময় মতো পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হলে এই সমস্যা হত না। এক সময়ে আগের পরিচালন সমিতি চেয়েছিল, নির্বাচন না-করে সমিতির মেয়াদবৃদ্ধি করতে। সেই থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। পরবর্তী কালে পরিস্থিতি দেখে ওই স্কুলে প্রশাসক নিয়োগের জন্য আমিও পর্ষদের কাছে চিঠি লিখি। প্রধান শিক্ষককে পর্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। পরে জানতে পারি, হাইকোর্টে মামলা হয়েছে।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। ওই বছর নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন বামপন্থীরা। নিয়মানুযায়ী, তিন বছর অন্তর নির্বাচন হয়। সেই মতো ২০১১ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা। যে নির্বাচনের পর নতুন পরিচালন সমিতি গঠন হবে। কিন্তু, তা হয়নি। ফলে, চরম সমস্যা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নতুন পরিচালন সমিতি গঠন করার জন্য ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হবে বলে এক সময়ে ঠিক হয়েছিল। পরে তা পিছনোর দাবি ওঠে। ঠিক হয় ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে। এ নিয়ে আলোচনাও হয়। শেষমেশ, তা-ও সম্ভব হয়নি।
সমস্যার শুরু এরপর থেকেই। সাধারণত, স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দু’জনের নামে হয়। এক জন প্রধান শিক্ষক, অন্য জন পরিচালন সমিতির সম্পাদক। গত দেড় বছর ধরে পরিচালন সমিতি না-থাকায় স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাই তোলা যাচ্ছে না। ফলে, স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম পুরোপুরি বন্ধ। জানা গিয়েছে, সমস্যার কথা লিখিত ভাবেই শিক্ষা দফতর এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই মতো গত বছর পর্ষদে এক শুনানিও হয়। পর্ষদ থেকে তলব করা হয় প্রধান শিক্ষক এবং পরিচালন সমিতির সম্পাদককে। প্রধান শিক্ষত পার্থ ঘোষ শুনানিতে স্কুলের সমস্যার কথা জানান। পরে অবশ্য পর্ষদ থেকে যা জানানো হয়, তার অর্থ স্কুলের পরিচালন সমিতির মেয়াদবৃদ্ধি বা প্রশাসক নিয়োগ, কোনওটাই আপাতত করা হবে না। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “পর্ষদের এমন মনোভাব জানতে পেরে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। স্কুল চালাতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। ছাত্রদের সরকারি অনুদানের টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে অনুদান বই কেনার জন্য দেওয়া হয়। এ বার কোনও ভাবে বইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলের একাংশ ক্লাসরুম সংস্কারের প্রয়োজন। তা করা যাচ্ছে না।” তাঁর কথায়, “স্কুলের অ্যাকাউন্টে অর্থ যে নেই, তা নয়। কিন্তু, সেই অর্থ নিয়ে কাজ করব কী ভাবে? আমি তো একা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে কাজ করাতে পারি না। পরিচালন সমিতির সম্পাদক বা প্রশাসক থাকলে এই সমস্যা হত না।”
অগত্যা, সংস্কারের অভাবে জীর্ণ ক্লাসরুমেই পঠনপাঠন চলছে। স্কুলের এক সহ-শিক্ষকের কথায়, “একটানা বৃষ্টি হলে চরম সমস্যা হয়। ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। তারমধ্যে পঠনপাঠন চলে। এছাড়া, উপায়ও নেই।” সমস্যা রয়েছে মিড-ডে মিল চালুর ক্ষেত্রে। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “মিড ডে মিলের পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু, তা চালু হবে কী করে? এই তো পরিস্থিতি।” আপাতত, হাইকোর্ট কী রায় দেয়, সেদিকেই নজর সকলের। |
|
|
|
|
|