প্রচারের নয়া কৌশল সিপিএমের
পঞ্চায়েত নির্বাচনের পতাকা-ফেস্টুন শহরে
ঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে। আর তারপরই উঠেপড়ে লেগেছে সিপিএম। পঞ্চায়েত নির্বাচন হলেও প্রচারের ব্যস্ততায় মুছে গিয়েছে গ্রাম-শহরের ভেদ।
মঙ্গলবারই দলের ছাত্র-যুব কর্মীরা পতাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন মেদিনীপুরে শহরের রাস্তায়। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পতাকা টাঙানো হয়। রাত তখন আটটা। মেদিনীপুর শহরের পোস্ট অফিস রোডে সিপিএমের পতাকা টাঙাচ্ছিলেন দলের কয়েকজন ছাত্র-যুব কর্মী। পতাকায় কাস্তে- হাতুড়ির ছাপ। সঙ্গে লেখা, ‘এই চিহ্নে ভোট দিন’। কিছু দূরে টাঙানো ফেস্টুনে লেখা, ‘বামফ্রন্ট ও বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীদের জয়যুক্ত করুন।’ রাস্তা দিয়ে পেরোনোর সময় দলের পতাকা টাঙানো হচ্ছে দেখে সাইকেল থেকে নেমে পড়েছিলেন সিপিএমের এক যুবকর্মী। দলের এক নেতাকে কাছে ডেকে তাঁর প্রশ্ন, ‘কাল বড় কোনও মিটিং আছে? কে আসবেন?’ পতাকা টাঙানোর তদারকি করার মাঝে ওই নেতা জবাব দেন, ‘দূর! পঞ্চায়েত নির্বাচন আসছে না!’
ভোট তো গ্রামে। তাহলে শহরে এত সাজ সাজ রব কে? সিপিএম সূত্রে খবর, এটা দলেরই সিদ্ধান্ত। জেলার সর্বত্র এ ভাবে পতাকা-ফেস্টুন টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের জেলা কমিটির এক নেতার কথায়, “এটা ঠিক যে, বহু গ্রামে আমরা প্রচার করতে পারছি না। কিন্তু আমরা লড়াইয়ের ময়দানে আছি। গ্রামের মানুষ নানা কাজ নিয়ে শহরে আসেন। শহরে পতাকা- ফেস্টুন দেখলে তাঁরা অন্তত খুশি হবেন। ভাববেন, তৃণমূলের লোকেরা যা দাবি করছেন, তা ঠিক নয়। পার্টিটা সাইনবোর্ড হয়ে যায়নি!” শহরে প্রচার কেন? জবাবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, “কেন? শহরে কি পতাকা-ফেস্টুন টাঙানো যায় না? না কি গ্রামের মানুষ শহরে আসেন না?”

লাল পতাকায় ছেয়েছে মেদিনীপুর শহর। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
বস্তুত, রাজ্যে পালাবদলের পর একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকায় সিপিএমের সাংগঠনিক শক্তি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে গড়বেতা, কেশপুর, চন্দ্রকোনার মতো এলাকা। দলের ‘দাপুটে’ নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া। যাঁরা আছেন, তাঁদের অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। এই পরিস্থিতিতে সব আসনে প্রার্থীও দিতে পারেনি সিপিএম। দলীয় সূত্রে খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩ হাজার ৮৪৬টি আসনের মধ্যে ৩ হাজার ৪০২টিতে প্রার্থী দেওয়ার কথা ছিল সিপিএমের। তবে তাদের প্রার্থী রয়েছে ২ হাজার ৪৯৩টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ৭৯৮টি আসনের মধ্যে ৭২০টিতে প্রার্থী দেওয়ার কথা ছিল সিপিএমের। তবে তাদের প্রার্থী রয়েছে ৬০২টি আসনে।
বহু আসনে দলীয় কর্মীদেরই নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বামফ্রন্টের প্রধান শরিক দল। কেশপুর, শালবনি, বিনপুর সব বিভিন্ন এলাকায় এমনটা হয়েছে। নির্দল প্রার্থীর উপর হামলার আশঙ্কা কম। গ্রামবাসীদের সমর্থন পাওয়াও সহজ। তাই গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’শোরও বেশি আসনে দলীয় কর্মীদের নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে সিপিএম। কিছু আসনে নির্দল প্রার্থী রয়েছে সিপিআইয়েরও। সিপিএমের জেলা কমিটির এক নেতা বলেন, “লুকোনোর কিছু নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছু এলাকায় দলীয় কর্মীরাই নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন। প্রচারে যে সব ফেস্টুন টাঙানো হচ্ছে, সেখানেও তাই বামফ্রন্ট ও বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানানো হয়েছে।” যদিও এ নিয়ে ফ্রন্টের মধ্যেই মতানৈক্য রয়েছে। শরিক দলের এক নেতার কথায়, “প্রকাশ্যে এ ভাবে বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীদের হয়ে প্রচার না করলেই ভাল হত।” সংখ্যাগরিষ্ঠের অবশ্য মত, এটি দলের রণকৌশল। সেখানে ফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীদের হয়ে প্রচার না করার কী আছে? রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বেশ কিছু আসনে নির্দলদের সমর্থন করে আসলে মুখরক্ষাই করতে চাইছে সিপিএম। বোঝাতে চাইছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা তেমন নেই। প্রত্যক্ষ ভাবে না থাকলেও প্রতিটি এলাকায় পরোক্ষ ভাবে তাদের উপস্থিতি রয়েছে।
অন্য দিকে, শহরে এ ভাবে প্রচারের কৌশল পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলবে? তৃণমূলের দাবি, কোনও প্রভাবই ফেলবে না। দলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতির বক্তব্য, “মানুষই যেখানে সঙ্গে নেই, সেখানে কোনও কৌশলই ওদের কাজে লাগবে না। পঞ্চায়েতে মানুষ ওদের ছুঁড়ে ফেলে দেবে। ঘুরে দাঁড়ানোর সব স্বপ্নই ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.