হাতি মৃত্যু ঠেকাতে আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত প্রায় ১৬০ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেনের গতিবেগ বেধে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ রেল চালকরা মানছেন কী না তা খতিয়ে দেখতে আচমকা পরিদর্শন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ। এই পরিদর্শনের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে, ‘লেসার স্পিড রেডার গান’ নামে একটি যন্ত্র। ওই যন্ত্রের সাহায্যে লাইনের পাশে দাড়িয়েই চলন্ত ট্রেনের গতিবেগ জেনে নেওয়া সম্ভব বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে।
রেল সূত্রের খবর, ওই যন্ত্র নিয়ে ডুয়ার্সের রেল পথে চলন্ত ট্রেনের গতিবেগ মাপা হবে। কোনও চালক নির্ধারিত গতি লঙ্ঘন করে ট্রেন চালালে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে। আচমকা এই গতিবেগ মাপার ব্যবস্থার জেরে ডুয়ার্সের জঙ্গল পথে ট্রেন চালকেরা প্যাসেঞ্জার বা মাল ট্রেনের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখবে বলে রেল কর্তাদের দাবি।
রেলের আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম বীরেন্দ্র কুমার বলেন, “চালকেরা নির্দিষ্ট গতিবেগের বিষয়টি মানছেন কী না তা দেখার জন্য লেসার স্পিড রেডার গান আনা হয়েছে। আচমকা বিভিন্ন এলাকায় ট্রেনের গতি মাপা হবে। নিয়ম ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়লে বন্য জন্তুর সঙ্গে ট্রেনের ধাক্কার বিষয়টিও কমবে।” এই প্রসঙ্গে রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “ট্রেনের গতি মাপার যন্ত্র দিয়ে যদি ট্রেন চালকদের সচেতন করা যায় তাহলে ভালই হবে।” রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যন্ত্রের একটি বোতামে চাপ দিলে ছোট স্ক্রিনে পাস দিয়ে যাওয়া চলন্ত ট্রেনের গতিবেগ ফুটে ওঠে। |
রেল কর্তারা জানিয়েছেন, একের পর এক ডুয়ার্সে জঙ্গলে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মৃতুর পরে ট্রেনের গতিবেগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই এখনও পর্যন্ত ট্রেনের ধাক্কায় ১০টি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ থাকলেও জঙ্গল এলাকায় নির্ধারিত গতিবেগ মেনে চালকরা ট্রেন চালাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত রেল পথের চারটি সেকেশন গুলমা-সেবক, চালসা-নাগরাকাটা, মাদারিহাট-হাসিমারা এবং হাসিমারা-কালচিনি এলাকায় দিন-রাত ৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশ রয়েছে। ডুয়ার্সের হাতির করিডর বলে পরিচিত কিছু এলাকায় দিনের বেলাতেও কম গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশ রয়েছে। আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে শিলিগুড়ি ১৬টি মেল ট্রেন ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং ১৪টি মালগাড়ি চলাচল করে।
২০০২ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ব্রডগেজে লাইনে রুপান্তরিত হওয়ার পরে ডুয়ার্স এলাকায় ৪৮টি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে।
|