শিকার শিখছে শাবকরা, ছাড়া হবে জঙ্গলে
চা বাগান থেকে উদ্ধার মা-হারা দুই চিতাবাঘ শাবককে বুনো করে তুলতে বন কর্মীরা বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগী হয়েছে। ১৯৯৬ সালে খাঁচার ভেতর বড় হওয়া তিনটি চিতা বাঘকে বিশেষ ভাবে শিকার প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গলে ছাড়া হয়। ১৭ বছর ধরে নতুন বাঘকে জঙ্গলে ছাড়া হয়নি। এ বার বনের জন্তুকে বনে ফেরানোর জন্য ফের উদ্যোগী হল বন দফতর। কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর বলেন, “সমস্যা হল, তাদের খুব ছোট অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। বনের পরিবেশ তারা সেই ভাবে দেখেনি। তবুও আমরা তাদের বুনোদের মতো করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
চিতাবাঘের বাচ্চা দেখে কয়েকজন শ্রমিক তাদের কোলে তুলে আদর করে। দিনভর জঙ্গলে শিকার করে রাতে সন্তানদের কাছে আসার পরে শরীরে মানুষের গন্ধ পেয়ে মা-বাঘিনী, তাদের ফেলে চলে যায়। খবর পেয়ে বন কর্মীরা কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ চালিয়ে, কাছে পিঠে মা-বাঘিনীর দেখা না পেয়ে, তিন সপ্তাহের শাবকদুটিকে গত ২০ এপ্রিল কালচিনির সাতালি চা বাগানের নালা থেকে উদ্ধার করে।
খয়েরবাড়ি চিতাবাঘ রেসকিউ সেন্টারে ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক।
দুই শাবককে খয়েরবাড়ি চিতাবাঘ রেসকিউ সেন্টারে আনা হয়। দুই শাবকের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে না পেরে বনকর্মীরা নাম রাখেন দেব ও কোয়েল। কয়েক দিন বাদে দেখা যায় দুটিই ছেলে। এর পর আর নতুন করে নাম করণ করা হয়নি। দীর্ঘদিন চিতাবাঘের দেখভাল করেন যিনি, সেই হামেদ আলি ফিডিং বোতলে দুধ খাইয়ে পরিচর্যা শুরু করেছেন। খয়েরবাড়িতে মোট ১১টি চিতাবাঘের অধিকাংশই চা বাগান থেকে উদ্ধার হওয়া। তাদের সংস্পর্শ থেকে একেবারে পৃথক একটি খাঁচায় রাখা হয়েছে শাবকদুটিকে। বাইরের পরিবেশ না চেনানোর জন্য তাদের খাঁচায় টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। তবে তিন মাস বয়সী দুটি চিতাবাঘ অবশ্য হামেদ আলিকে দেখলে এখনও ছুটে এসে বিড়ালের বাচ্চাদের মত গায়ে ঘেঁষতে থাকে।
সারা দিনে এক দু’বার হামেদ আলির আদর পেয়ে ফের বন্ধ খাঁচাতে ফিরে যায় তারা। চার দিন হল তাদের দুধের পরিবর্তে সারা দিনে আধ কেজি মুরগির মাংস খেতে দেওয়া হচ্ছে। প্রথম দুদিন হামেদ বাবু তাদের মুখে মাংস পুরে দিয়েছেন, এখন অবশ্য তারা নিজেরা খেতে পারছে। দুই দশক ধরে চিতাবাঘের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা হামেদ আলির স্নেহ-আদরে বড় হওয়া মিঠু, সোহেল, মনচেলি সারা দিনে একবার অন্তত হামেদের আদর না পেলে বিগড়ে যায়। তবে শাবকদুটির সঙ্গে এখন থেকে ক্রমশ দূরত্ব বাড়াতে চাইছে হামেদ নিজে। তাঁর কথায়, “শিকারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কিছুদিন বাদে খাঁচায় জ্যান্ত মুরগি ছাড়া হবে। খিদে মেটাতে মুরগি মেরে খেতে শিখলে, পরে একটা ছাগল খাঁচার ভেতর ছাড়া হবে। বনে ফিরে তারা তা হলে সহজে শিকার করতে পারবে।”
তবে ১৯৯৬ সালে জঙ্গলে যে চারটি বাঘকে মাদারিহাট থেকে বক্সার জঙ্গলে ছাড়া হয়, তাদের মধ্যে তিনটি বনে ফিরে গিয়ে শিকার করে। ডোডো নামে পাঁচ বয়সী একটি বাঘ অবশ্য শিকার আয়ত্ত করতে না পরে লোকালয়ের কাছে চলে আসে। পরে চিতাবাঘটি একজন পর্যটককে আক্রমণ করলে পরে তাকে ফের খাঁচা পেতে ধরে দার্জিলিং এবং পরে রসিকবিলে খাঁচা বন্দি করে রাখা হয়। বন দফতরের এক অফিসারের কথায়, গত চার বছর ধরে চা বাগানের নালায় চিতাবাঘ শাবক দেখলে, তাদের জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বাসিন্দাদের যতদূর সম্ভব চিতাশাবকদের নাড়াচাড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.