দূষণ সংক্রান্ত ছাড়পত্র না থাকলে মিলবে না জ্বালানি। কলকাতা শহরে যানবাহন থেকে বায়ুদূষণ ঠেকাতে এমনই সুপারিশ করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। শুধু তা-ই নয়, বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার এবং শহরে গাড়ির পার্কিং ফি বাড়ানোরও সুপারিশ করেছিল তারা। বলা হয়েছিল, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নতি করার কথাও। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ওই সুপারিশ কী ভাবে কার্যকর করা যায়, তা বিশেষজ্ঞদের দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে রাজ্য সরকারকে এবং ছ’মাসের মধ্যে তা আদালতকে জানাতে হবে।
২০০৭ সালে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত শহরের বায়দূষণ নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতে ২০১২ সালে গাড়ি থেকে দূষণ ঠেকাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে তা জানতে চেয়েছিল আদালত। তার ভিত্তিতে ২০১২-র সেপ্টেম্বর মাসে একটি রিপোর্ট তৈরি করে পর্ষদ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তা আদালতে জমাও দেওয়া হয়। ওই রিপোর্টে কলকাতা পুরসভা এলাকায় বায়ুদূষণের পিছনে যানবাহনকেই প্রধানত দায়ী করেছেন পর্ষদের বিজ্ঞানীরা। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই বুধবার ওই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
পর্ষদ কর্তারা মনে করছেন, শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় গাড়ির গতি বাড়ালে কার্বন নিঃসরণ কম হবে। পাশাপাশি, পার্কিং-ফি বাড়ালে সাধারণ মানুষ রাস্তায় অনেক কম গাড়ি দাঁড় করাবেন। যার ফলে এক দিকে যেমন রাস্তায় জায়গা মিলবে, তেমনই গণ-পরিবহণ ব্যবস্থার উপরেও নির্ভরশীল হবেন মানুষ। তাই গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত করার কথাও বলেন পর্ষদের বিজ্ঞানীরা।
পর্ষদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহানগরে বায়ুদূষণ এড়াতে গেলে পরিস্রুত জ্বালানি (অনেক ক্ষেত্রেই এলপিজি-র মতো বিকল্প জ্বালানি) ব্যবহারের পাশাপাশি যানবাহনের গতি বৃদ্ধি এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়াতে হবে। নিয়মিত নজর রাখতে হবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গাড়িগুলির কার্যক্ষমতার সময়সীমার উপরেও। ঘটনাচক্রে, এ শহরে ১৫ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি ব্যবহার করার ব্যাপারে আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। দেশের অন্যান্য মহানগরের ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা আরও কম। এ ছাড়াও, গাড়িঘোড়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতিতে আরও কড়া ব্যবস্থার সুপারিশ করেছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কর্তারা।
২০০৮ সালে বায়ুদূষণ নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার একটি ‘মনিটরিং কমিটি’ তৈরি করেছিল। তাতে রাজ্যের মুখ্যসচিব, পরিবহণ সচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের এডিজি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুই কর্তা এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও খড়্গপুর আইআইটি-র দু’জন বিশেষজ্ঞ ছিলেন। আদালত এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, শুধু রাজ্য সরকারই নয়, পর্ষদের সুপারিশ নিয়ে ওই মনিটরিং কমিটিকেও তাঁদের মতামত জানাতে হবে। |