জোড়াফুলের দুর্গে চোখ রাঙাচ্ছে আম-জোড়াপাতা
সাঁকরাইল ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল। বিভিন্ন এলাকায় দলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের অবস্থা দাঁড়িয়েছে শাঁখের করাতের মতো। আম-জোড়া পাতার বিক্ষুদ্ধ আহ্বান, নাকি এত দিন যে প্রতীকের জন্য ঘাম-রক্ত ঝরানো সেই জোড়াফুলে ছাপ দেবেন তাঁরা, বুঝে উঠতে পারছেন না।
সাঁকরাইল ব্লক বরাবরই বামবিরোধী বলে পরিচিত। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভরাডুবির সময়েও সাঁকরাইল কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শীতল সর্দার। ২০১১ সালেও সেই জয়ের ধারা ধরে রেখেছেন তিনি। কিন্তু রাজ্যর শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী লড়াই বেআব্রু হয়ে পড়ে। সম্প্রতি হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সাঁকরাইল বিধানসভা এলাকায় প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল।
আন্দুল বাজার উজিয়ে জগদ্বন্ধু কলেজের দিকে যেতে গেলে চোখে পড়বে দেওয়ালে আমের ছবি। আন্দুল পঞ্চায়েতের একটি বুথ থেকে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সুদীপ্ত রায় (শম্ভু) এ বার লড়ছেন এই চিহ্নে। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের ‘অফিসিয়াল প্রার্থী’ অমৃত বোস। ব্লক তৃণমূল সূত্রে খবর, সুদীপ্তবাবু স্থানীয় বিধায়ক শীতল সর্দারের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অন্য দিকে, অমৃতবাবু পরিচিত তৃণমূল নেতা অজয় ভট্টাচার্য গোষ্ঠীর অনুগামী হিসেবে। সুদীপ্তবাবু বলেন, “সারা বছর এলাকায় থেকে দল করি। কিন্তু টিকিট পেল অন্য কেউ। তার প্রতিবাদ করতেই ভোটে লড়ছি। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপরে আমার কোনও ক্ষোভ নেই। আমার লড়াই স্থানীয় কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে।”
সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তৃণমূলের বীণা চক্রবর্তীও এ বার দলের টিকিট পাননি। তিনি ওই আসনে লড়ছেন জোড়া পাতা চিহ্নে। বীণাদেবীর কথায়, “ব্লক নেতৃত্ব বলেছিল আমাকে টিকিট দেবে। আমাকে মনোনয়নপত্র তুলতে বলা হয়। পরে শুনি, মনোনয়ন দেওয়া হবে না।” তাঁর ক্ষোভ আবার স্থানীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে।
সাঁকরাইল ব্লকেরই বাণীপুর-২ পঞ্চায়েতে আম চিহ্নে লড়ছেন দুই নির্দল। স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁরা তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত। বাণীপুর-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের বিদায়ী প্রধান (এ বারও তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়ছেন) ত্রিপুরারি ঘোষ নিজেই স্বীকার করছেন, তিনিই ওই দুই নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সাঁকরাইল ব্লক নেতৃত্বকে আমি যে প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছিলাম, সেই মতো প্রার্থী করা হয়নি।” তাঁর দাবি, পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ৯টি। ব্লক নেতৃত্ব তাঁকে না জানিয়ে দুটো আসনে প্রতীক জমা দিয়েছিল। তিনিও ন’টি আসনেই মনোনয়ন জমা দেন। পরে দুই প্রার্থী দলের প্রতীক না পাওয়ায় আম চিহ্নে দাঁড়িয়েছেন।
এই এলাকায় শাসক দলের অন্দরে ক্ষমতা দখলের লড়াই মূলত স্থানীয় বিধায়ক শীতল সর্দার ও জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অজয় ভট্টচার্যের গোষ্ঠীর মধ্যে। বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর নেতারা কী বলছেন?
শীতলবাবু বলেন, “সাঁকরাইলে ব্লকে দু’একটি ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। তবে আমরা স্পষ্টই বলছি, দলীয় প্রার্থীকেই ভোট দিন।” অন্য দিকে, অজয়বাবুর দাবি, সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটে কিছু ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকেই।”
গোষ্ঠী লড়াই দেওয়াল, ব্যানার এবং পোস্টারে এসে যাওয়ায় প্রচারে দৃশ্যতই বিব্রত তৃণমূল নেতারা। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের নিচুস্তরের কর্মীরা রীতিমতো হতাশ ও ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাঁকরাইলের এক তৃণমূল কর্মী বলেন, “দলের দুর্দিনে সিপিএমের হুমকি অগ্রাহ্য করে, নিজের পকেটের টাকা দিয়ে এলাকায় জোড়াফুল ফুটিয়েছিলাম। কিন্তু এখন এই গোষ্ঠীবাজির কারণে মনে হয় দল ছেড়ে দিই।”
তৃণমূল নিজের সংসারের বিবাদ মেটাতে ব্যস্ত থাকায় সিপিএম আশার আলো দেখছে। সিপিএমের হাওড়া ৬ নম্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক নন্দলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “লোকসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী ছিল না। তবুও আমরা এগিয়ে ছিলাম। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়ে শুনছি তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ নয়। সুবিধা তো কিছুটা হবেই। তবে ঐক্যবদ্ধ হলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাঁকরাইল ব্লকে আমরা ভাল ফল করতাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.