আবাসন ঘেঁষে ধস
চন্দননগরে গঙ্গার পাড়ে নিয়ম মেনে
হয়নি নির্মাণ, বলছে পুরসভা
রাস্তার পরে এ বার চন্দননগরে ধস নামল গঙ্গা তীরবর্তী হাটখোলা এলাকার দু’টি আবাসনের গা ঘেঁষে।
মঙ্গলবার গভীর রাতে সশব্দে প্রায় ৫০০ ফুট লম্বা এবং ১৫ ফুট গভীর ধস নামায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দু’টি আবাসনের অনেক বাসিন্দাই। বুধবার ভোর হতেই একটি আবাসনের তিনটি পরিবার ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে অন্যত্র চলে যায়। বাকি বাসিন্দাদের অনেকেই ধস মোকাবিলার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন প্রশাসন ও পুরসভার কাছে। আবাসন তৈরিতে কিছু গাফিলতির কারণেই ওই ধস বলে মনে করছে চন্দননগর পুরসভা।
পুরপ্রধান রাম চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আবাসন তৈরিতে কিছ গাফিলতি ধরা পড়েছে। নির্মাণের যাবতীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই আবাসনগুলি আগের পুরবোর্ডের আমলে তৈরি হয়েছিল। কোনও গাফিলতি প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের একটি কমিটি বিষয়টি দেখছে।”
গত সোমবারই হাটখোলা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে, গঙ্গার কাছেই ফরাসি ইনস্টিটিউট সংলগ্ন রাস্তায় ১০ ফুট লম্বা এবং আট ফুট গভীর ধস দেখা যায়। প্রাতর্ভ্রমণকারীরা সেই ধসের কথা পুলিশ-প্রশাসনকে জানান। তাঁদের তৎপরতাতেই ওই এলাকার বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। সেই ধস মেরামতির কাজ চলাকালীনই বিপদ এ বার হাটখোলায়।

কী ভাবে রাত কাটবে এই আবাসনে, আশঙ্কায় বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

হাটখোলার কবি ভারতচন্দ্র রোডের ধারে, গঙ্গার পাড় থেকে মাত্র ৫০ ফুট দূরে ওই আবাসন দু’টি তৈরি হয় সাত-আট বছর আগে। দু’টিই চারতলা আবাসন। আবাসন দু’টির পিছন দিকে, গঙ্গার পাড় ঘেঁষে পাঁচিলঘেরা সানবাঁধানো চত্বর ছিল। ছিল বাগানও। মঙ্গলবার রাতের ধসে সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দু’টি আবাসনেরই একতলা পর্যন্ত ধসের চিহ্ন স্পষ্ট। দেওয়ালে ফাটলও ধরা পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের ‘রেড ক্রস সোসাইটি’র একতলা অফিসের একাংশ।
বুধবার সকাল হতেই ঘটনাস্থলে ভিড় জমান এলাকার বাসিন্দারা। আসেন পুর কর্তৃপক্ষ এবং সেচ দফতরের আধিকারিকরা। পুরসভার মুখ্য বাস্তুকার মধুসূদন চক্রবর্তী বলেন, “গঙ্গার ধারে আবাসন তৈরি করতে হলে গঙ্গা থেকে মোটামুটি ২৫ মিটার দূরত্বে করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে বেনিয়ম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” সেচ দফতরের চন্দননগরের এসডিও অংশুমান সরকার বলেন, “গঙ্গার ভাঙন এখানে হয়নি। গঙ্গার জল বেড়ে কোনও ভাবে পাড় ভেঙে আবাসনের কাছে এলে ধস নামতে পারে। এখানে গঙ্গার পাড়ে কিছুই হয়নি। ধসের চরিত্র দেখে মনে হচ্ছে, গঙ্গার পাড় সংলগ্ন এলাকায় আবাসন তৈরি করতে হলে যে সব নিয়ম মানতে হয়, তা মানা হয়নি। সেই কারণেই এই বিপদ।” দু’টি আবাসনেরই প্রোমোটারদের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।
এলাকাটি মনোরম। গঙ্গার ধারে হওয়ায় প্রচুর হাওয়া। একটু এগোলেই চন্দননগরের বিখ্যাত গঙ্গার পাড় ওরফে ‘স্ট্র্যান্ড’। তা ছাড়া, কাছেই ফরাসি ইনস্টিটিউট, গির্জা, রবীন্দ্রভবন, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য পাতালবাড়ি, থানা। রয়েছে স্কুল-কলেজও। ফলে, হাটখোলা এলাকায় গজিয়ে উঠছে একের পর এক বহুতল। দামও বাড়ছে লাফিয়ে।
যে দু’টি আবাসনের গা ঘেঁষে ধস নেমেছে, সেই দু’টি আবাসনে সব মিলিয়ে ৩৭টি পরিবার বাস করে। কেউ জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন, কেউ আবার মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করতে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছেন। এই দুর্ঘটনার পরে অনেকেই আতঙ্কিত।
একটি আবাসনের আবাসিক কমিটির সম্পাদক সমীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “তখন মাঝরাত। এত জোর শব্দ হল, ভাবলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। তার পর সারারাত জাগা। গঙ্গা এগিয়ে আসছে কি না, বুঝতে পারছিলাম না। যা ক্ষতি হল, তা আমাদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। পুরসভা বা প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।” চন্দন চট্টোপাধ্যায় নামে আর এক আবাসিক বলেন, “এখন প্রতি রাতেই দুশ্চিন্তা আর আতঙ্ক থাকবে। কী করে সমস্যা মিটবে কে জানে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.