|
|
|
|
|
|
 |
মূলধনী লাভ কর |
কর বাঁচাতে চান? তা হলে বরং বাড়ি কিনুন
নিজের মুনাফার ভাগ সরকারকে দিতে কিছুতেই মন চায় না,
তাই তো? আসুন পুরো ক্ষীরটা একাই খাওয়ার কৌশল জেনে নিই।
লিখছেন নারায়ণ জৈন |
|
আগের পর্বে ক্যাপিটাল গেইন্স ট্যাক্স (মূলধনী লাভ কর) নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে। আমরা জেনেছি, জমি- বাড়ি, গয়না-সহ যে-কোনও ‘ক্যাপিটাল অ্যাসেট’ বিক্রি করলে তা থেকে হওয়া আয় বা মুনাফার (মূলধনী লাভ) উপর দিতে হয় ওই কর। কোনগুলি ক্যাপিটাল অ্যাসেট, কোনগুলি নয়, দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদি মূলধনী লাভের বিচারে করের ফারাক, মূল্যবৃদ্ধির হিসেব ধরে দীর্ঘ মেয়াদে কর হারের পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ও বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর এ বার আমরা নজর দেব মূলধনী লাভ কর ছাড়ের বিষয়ে। আয়করের মতো এই কর ছাড় পাওয়ারও পথ আছে। যার মধ্যে অন্যতম হল নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনা কিংবা নিজের বাড়ি তৈরি করা।
দ্বিতীয় ফ্ল্যাটে ছাড়
ধরা যাক, একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করে আপনি দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ (লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইন্স) করেছেন। এ বার তা হলে ওই লাভের উপর আপনাকে মূলধনী লাভ কর দিতে হবে। কিন্তু আয়কর আইনের ৫৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ওই করছাড় দাবি করতে পারে। সেই দাবির শর্তগুলি হল
(ক) আবাসনটি বেচে যে-মূলধনী লাভ হয়েছে, তা দিয়ে যদি নতুন আর একটি আবাসন কেনা হয়, তা হলে লাভের টাকার উপর কর দিতে হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে যে দিন পুরনো আবাসনটি বিক্রি করা হয়েছে, তার আগের এক বছর কিংবা পরের দু’বছরের মধ্যে নতুনটি কিনতে হবে।
উদাহরণ:
ধরা যাক গত ২৫ মার্চ আপনি ফ্ল্যাট বা বাড়ি বিক্রি করেছেন। এ বার যদি ২০১২ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ২৪ মার্চের মধ্যে নতুন একটি আবাসন কেনেন, তবে পুরনোটি বেচে যে মূলধনী লাভ করেছেন, তার উপর কর দিতে হবে না।
বাড়ি না-কিনে তৈরি করলেও এই সুবিধা পাবেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে আবাসন বিক্রির তিন বছরের মধ্যে নতুন বাড়ি তৈরি করতে হবে।
রেহাই পুরো বা আংশিক:
বাড়ি বা ফ্ল্যাট বেচে যতটা মূলধনী লাভ করেছেন, তার পুরোটাতেই কর রেহাই পেতে পারেন আপনি। সে ক্ষেত্রে নতুন কেনা আবাসনে লগ্নির পরিমাণ ওই লাভের সমান বা তার থেকে বেশি হতে হবে। তা না হলে, মূল্যবৃদ্ধির সূচক (বিষয়টি জানতে গত ২০ জুনের বিষয়-আশয় দেখতে পারেন। তা পাবেন www.anandabazar.com ওয়েবসাইটেও) প্রয়োগ করার পরে লাভের যে অংশটি বাড়তি রয়ে গেল অর্থাত্ নতুন আবাসন কিনতে ব্যবহার করা হল না, তার উপর কর দিতে হবে।
(খ) নতুন আবাসনটি কেনা বা তৈরির তিন বছরের মধ্যে তা ফের বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। অন্যথায় সেটির কারণে যে-মূলধনী লাভ কর ছাড় পেয়েছিলেন আপনি, তার উপর কর দিতে হবে।
(গ) যে অর্থবর্ষে ফ্ল্যাট বা বাড়ি বিক্রি করে মূলধনী লাভ হাতে আসছে, সেই বছরেরই আয় হিসেবে ধরা হয় সেটি। ফলে আইন অনুযায়ী, সে বছরই তার উপর কর দেওয়ার কথা।
কিন্তু আপনি তো মূলধনী লাভ কর সরকারকে দিতে চাইছেন না। ওই টাকা নতুন আবাসন কেনার জন্য লগ্নি করে কর বাঁচাতে চাইছেন। অথচ আয়কর রিটার্ন জমার সময়সীমা প্রায় শেষ। চাকরিজীবী হলে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এবং কর অডিট করাতে হয় এমন ব্যবসায়ী হলে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আপনাকে রিটার্ন জমা দিতেই হবে। কিন্তু এই সময়সীমার মধ্যে নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনে উঠতে না-পারলে, ওই লাভের টাকা নিয়ে কী করবেন? তা হলে কি ওই টাকা দেখিয়ে কর দিতেই হবে?
• একেবারেই না। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কে একটি ক্যাপিটাল গেইন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এবং সেই অ্যাকাউন্টেই জমা রাখতে হবে ওই টাকা। এর উপর ব্যাঙ্ক সুদও পাবেন আপনি। তবে তা মেয়াদি আমানতের সুদের তুলনায় অনেক কম। বাড়ি তৈরি করলে তিন বছরের মধ্যে এবং কিনলে দু’বছরের মধ্যে ওই টাকা আপনাকে অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নিয়ে খরচ করতে হবে।
• তবে ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি মূলধনী লাভের টাকা লগ্নি করতে না-পারেন, তবে যে-বছর ফ্ল্যাট বা বাড়িতে লগ্নি করে কর বাঁচানোর সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই বছরেই তা আয় হিসেবে ধরা হবে। এবং কর দিতে হবে।
• যদি কেউ মূলধনী করছাড়ের সুবিধা নেওয়ার আগেই মারা যান, তা হলে তাঁর ক্যাপিটাল গেইন অ্যাকাউন্টের টাকা উত্তরাধিকারীরা তুলতে পারেন যে কোনও সময়ে। এবং তার উপর করছাড় মেলে।
|
 |
আরও ছাড়ের সুযোগ
• কেউ যদি দীর্ঘ মেয়াদে বাড়ি লিজ নেন, তবে সেটাও ক্রয় হিসেবেই ধরা হবে এবং তার জন্য মূলধনী করছাড় পাওয়া যাবে।
• করদাতা নতুন বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার পর, সেটি ব্যবসার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও যদি উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে ওই আবাসনটি কেনা হয়ে থাকে, তবে তিনি ওই করছাড় পাবেন। এখানে সম্পত্তিটি কী উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে তা বিচার করা হবে না।
• আবাসন কেনার পরে সেটিকে বসবাসের যোগ্য করে তুলতে যে- টাকা খরচ হবে, তাতেও ছাড় মিলবে।
• করদাতা যদি দু’টি বসতবাড়ি কেনেন, তবে সাধারণত করছাড় পাওয়ার জন্য তার মধ্যে পছন্দমতো একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পান। তবে তিনি যদি পরস্পর লাগোয়া দু’টি ফ্ল্যাট কেনেন এবং দু’টিকে একটি ফ্ল্যাটে বদলে নেন, তা হলে কিন্তু ওই ফ্ল্যাটেও (দু’টি ফ্ল্যাট মিলিয়ে) মূলধনী লাভ কর ছাড় পাওয়ার যোগ্য তিনি।
• এমনকী করদাতা যদি এক তলায় একটি এবং দোতলায় আর একটি ফ্ল্যাট কেনেন কিন্তু একটিই মাত্র রান্নাঘর ব্যবহার করেন, তা হলেও দু’টি ফ্ল্যাটকে একটি বাসস্থান হিসেবে ধরা হবে। এবং করছাড় মিলবে।
• সমবায় সমিতির সদস্য হওয়ার কারণে অনেকের জন্য ফ্ল্যাট বা বাড়ি বরাদ্দ হয়। সে ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওই ফ্ল্যাট বা বাড়িটি করদাতা তৈরি করেছেন বলে ধরা হবে। আর কর ছাড়ও পাওয়া যাবে।
• এ রকম হতে পারে যে, আপনি নতুন ফ্ল্যাট কেনার জন্য চুক্তি করেছেন এবং তার দামের বেশির ভাগটাই মিটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেটি আপনার নামে রেজিস্ট্রেশন হয়নি এ ক্ষেত্রেও কিন্তু মূলধনী লাভ কর ছাড় থেকে বঞ্চিত হবেন না আপনি।
অন্য ক্যাপিটাল অ্যাসেটে
ফ্ল্যাট বা বাড়ি ছাড়া অন্যান্য ক্যাপিটাল অ্যাসেট বিক্রি করে হওয়া মূলধনী লাভের উপরেও কর ছাড় দাবি করতে পারেন। এ বার সেই কথাটাই বলছি।
ফ্ল্যাট বা বাড়ির ক্ষেত্রে ওই ছাড় যেমন আয়কর আইনের ৫৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী দাবি করা যায়। তেমনই ৫৪এফ নম্বর ধারাতেও এক জন করদাতা ও অবিভক্ত কোনও হিন্দু পরিবার সোনা-রুপোর গয়না, হিরে, শেয়ার ইত্যাদি বিক্রি করে হাতে আসা টাকা ফের লগ্নি করে কর বাঁচানোর সুযোগ পেতে পারেন। এবং সে ক্ষেত্রেও লগ্নির শর্ত মোটামুটি ৫৪ নম্বর ধারার মতোই।
• ক্যাপিটাল অ্যাসেট যে-দিন বিক্রি করা হচ্ছে, তার আগে এক বছরের মধ্যে বা বিক্রির পর দু’বছরের মধ্যে নতুন আবাসন কিনতে হবে।
• ওই দিনের পর তিন বছরের মধ্যে বাড়ি তৈরি করতে হবে।
দুই ধারার পার্থক্য
মূলধনী লাভ কর ছাড় পেতে, ওই টাকা লগ্নির শর্ত নির্দিষ্ট করা আছে আয়কর আইনের ৫৪ ও ৫৪এফ, এই দুই ধারাতেই। তবে তাদের মধ্যে যে ফারাকটা রয়েছে, সেটা হল—
৫৪ নম্বর ধারা
এতে বলা আছে, শুধুমাত্র মূলধনী লাভের অংশটুকু লগ্নি করলেই আপনি করছাড় পাবেন।
৫৪এফ নম্বর ধারা
এখানে বলা আছে, করছাড় পেতে আপনাকে সম্পদ বিক্রির পুরো টাকাটাই নতুন বাড়ি কেনা বা তৈরিতে লগ্নি করতে হবে। যদি তা না-করে, খানিকটা অংশই শুধু লগ্নি করেন, তা হলে ওই লগ্নির অনুপাতে করছাড় হিসেব করা হবে।
মাথায় রাখুন
• ৫৪এফ ধারায় অন্য ক্যাপিটাল অ্যাসেট বিক্রির টাকায় নতুন ফ্ল্যাট কিনে কর ছাড়ের সুবিধা তখনই পাবেন, যদি আপনার মালিকানায় আগে থেকে মাত্র একটি ফ্ল্যাট বা বাড়িই থাকে।
• ৫৪ নম্বর ধারায় নতুন আবাসন কেনা বা তৈরির পর ৩ বছরের মধ্যে যদি সেটি বিক্রি বা হস্তান্তর করা হয়, তবে সেটি বাবদ আগে যে মূলধনী লাভ কর ছাড় মিলেছিল তা বাতিল হবে। এবং যে বছর বিক্রি করা হচ্ছে সেই বছরেই ওই কর দিতে হবে।
• আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে নতুন আবাসন কিনতে মূলধনী লাভের পুরো অঙ্ক কাজে না-লাগানো গেলে, বাকি টাকা আগেই ব্যাঙ্কের ক্যাপিটাল গেইন অ্যাকাউন্টে জমা করে দিতে হবে।
|
(চলবে)
লেখক আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞ |
|
|
 |
|
|