|
|
|
|
|
|
|
সঞ্চয়ের পূর্বশর্ত |
দৌড় শুরুর আগে ক্রিকেট খেলতে যেমন ব্যাট, বল, উইকেট লাগে, তেমনই লগ্নির
দুনিয়ায় পা রাখতেও প্রয়োজন কিছু হাতিয়ার। সেগুলো সঙ্গে
আছে তো?
লিখছেন অমিতাভ গুহ সরকার |
|
সব খেলাতেই কিছু না কিছু সরঞ্জাম লাগে। যেমন, ক্রিকেটে ব্যাট, বল, প্যাড, গ্লাভস, উইকেট। ঠিক তেমনই লগ্নির জগতে নামতে হলেও লাগে কিছু হাতিয়ার। দরকার প্রাথমিক ট্রেনিংয়েরও। সব কিছু এক সঙ্গে না-ও হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু জলে নেমে পড়তে হবে, সাঁতার ঠিক শেখা হয়ে যাবে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, সঞ্চয়ের দৌড় শুরু করতে কোন কোন হাতিয়ার নিয়ে মাঠে নামতে হবে—
• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট: লগ্নির প্রথম শর্ত একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছাড়া শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি সম্ভব নয়। ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে নগদ জমা নেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু তাতেও আছে ঝক্কি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লাগবে বন্ড কিনতেও। অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে দাখিল করতে হবে কে ওয়াই সি (নো ইওর কাস্টমার) সংক্রান্ত কাগজপত্র। এগুলি হল প্যান কার্ড, পরিচয়ের সচিত্র প্রমাণপত্র এবং ঠিকানার প্রমাণ। ভোটার আই ডি, রেশন কার্ড, টেলিফোন, বিদ্যুতের বিল ইত্যাদির কপি দাখিল করে কে ওয়াই সি-র প্রয়োজন মেটানো হয়। চেক-এর সুবিধা-সহ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে একটি ন্যূনতম টাকা সব সময়ে সেই অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে হয়। ব্যাঙ্ক অনুযায়ী এই জমার পরিমাণ ১ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। লগ্নির জন্য চেক বই অবশ্যই দরকার। ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে পাশ বই অথবা স্টেটমেন্টের মাধ্যমে সব জমা খরচের হিসাব পাওয়া যায়। টাকা নগদে রাখলে এই হিসাব সব সময় রাখা সম্ভব হয় না। নানা সুবিধার জন্য প্রত্যেক নাগরিকের একটি করে সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যিক। গ্রামের মানুষেরও এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা জরুরি। সরাসরি ভর্তুকির টাকা পেতে গেলে থাকতে হবে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।
• তহবিল: শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুললেই হল না। তাতে থাকতে হবে লগ্নির জন্য টাকা। শুরু করা যেতে পারে ছোট অঙ্ক দিয়েও। একলপ্তে বড় টাকা লগ্নি না-করে ছোট আকারে নিয়মিত লগ্নি করা যেতে পারে লম্বা মেয়াদ ধরে। সঞ্চয় এবং লগ্নির অভ্যাস গড়ে উঠলে নিজের অলক্ষেই বড় সম্পদ গড়ে উঠবে।
|
|
• প্যান কার্ড: পুরো কথা পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর। আয়কর দফতরে আবেদন করে পাওয়া যায় প্যান কার্ড। প্যান কার্ড পেলেই আয়করের রিটার্ন দাখিল করতে হবে, তা কিন্তু নয়। প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করা যেতে পারে নাবালকের নামেও। নানা কাজে অবশ্য প্রয়োজন প্যান কার্ডের। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে প্যান কার্ড, প্যান নম্বর ছাড়া শেয়ার কেনা যায় না। আবেদন করা যায় না মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের জন্যও। উপযুক্ত ক্ষেত্রে প্যান কার্ডের কপি দাখিল না-করা হলে উত্স মূলে দ্বিগুণ কর কেটে নেওয়া হতে পারে। অর্থাত্ প্যান থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্যান কার্ড ভারত সরকারের ইস্যু করা একটি সচিত্র পরিচয়পত্রও বটে। ট্রেনে প্লেনে এর বহুল ব্যবহার। আবেদন করলে সপ্তাহ তিনেকের মধ্যেই পাওয়া যায় প্যান কার্ড। নির্ধারিত আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা করতে হয় একটি পরিচয়পত্র এবং একটি ঠিকানার প্রমাণ। স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দলিলে উল্লেখ করতে হয় ক্রেতা এবং বিক্রেতার প্যান নম্বর।
• ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট: পুরো কথা ডিমেটেরিয়ালাইজেশন। বাংলায় নির্বস্তুকরণ। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট ছাড়া বাজার থেকে শেয়ার বন্ড ইত্যাদি লগ্নিপত্র কেনা যায় না, বাজারে বিক্রিও করা যায় না। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যেমন আমরা টাকা রাখি তেমন ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে রাখা হয় শেয়ার ইত্যাদি। ডি-ম্যাট স্টেটমেন্ট থেকে জানা যায় কোন কোম্পানির কত শেয়ার আপনার নামে কেনা আছে। মিউচুয়াল ইউনিটও জমা করা যায় ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে। ই টি এফ কিনতে হলেও প্রয়োজন ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন রকম লগ্নি জমা করা হলে তার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সুবিধা হয়। এক নজরে দেখে নেওয়া যেতে পারে কোন প্রকল্পে কত লগ্নি করা আছে। অন-লাইন স্টেটমেন্টে বোতাম টিপে মুহূর্তের মধ্যে দেখে নেওয়া যেতে পারে তাদের পৃথক পৃথক এবং মোট বাজার দর। ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে নমিনেশন করা থাকলে ওই অ্যাকাউন্টে রাখা সব লগ্নিপত্রের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হয়। আলাদা আলাদা নমিনেশনের প্রয়োজন হয় না।
ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট অর্থাত্ ডি পি-র দফতরে খোলা যায় ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট। অনেক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক ডি পি হিসেবে কাজ করে। একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে যে-সব কাগজপত্র লাগে, মোটামুটি তাই-ই লাগে একটি ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে। এই অ্যাকাউন্ট খোলা এবং ব্যবহার করার জন্য মাসুল দিতে হয়। পরিবর্তে পাওয়া যায় নানা সুবিধা। গত দশ বছরে লগ্নিকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট।
• শেয়ার ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট: নিজে বাজার থেকে সরাসরি শেয়ার কেনা অথবা বিক্রি করা যায় না। করতে হয় কোনও স্বীকৃত ব্রোকারের মাধ্যমে। এর জন্য ব্রোকারের দফতরে খুলতে হয় ট্রেডিং অ্যাকাউন্ট। সই করতে হয় চুক্তিপত্রে। প্রয়োজনে তা একাধিক ব্রোকারের কাছে খোলা যেতে পারে।
• সাধারণ জ্ঞান: লগ্নির জগতে প্রবেশ করতে হলে থাকতে হবে লগ্নি সংক্রান্ত সাধারণ জ্ঞান। না-থাকলে একটু পড়াশোনা করে নিতে হবে। কম্পিউটারের উপর দখল থাকলে আরও ভাল। এতে ব্যাঙ্ক এবং ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় সুবিধা হয়। সব হাতিয়ার জোগাড় হয়ে গেলে আর চিন্তা নেই। লগ্নির জগতে অনেক সুযোগ আছে। রয়েছে অনিশ্চয়তাও। হাতিয়ার ব্যবহার করতে হবে সাবধানে।
|
লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|