পরামর্শ মানছেন না চাষিরা, আক্ষেপ কৃষি দফতরের
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুবরাজপুর |
চাষের যাতে ক্ষতি না হয়, সে জন্য কৃষি দফতরের কর্তারা চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সব সতর্কবার্তা বা পরামর্শকে মাথায় না রেখেই এ বার বীজতলা করেছেন পারুলিয়ার অধিকাংশ কৃষক। চাষিদের সাফ জবাব, “বহু বছর ধরে যে ভাবে চাষ করা হয় সে ভাবেই করছি। এ বারও যদি বীজতলা অক্রান্ত হয় তখন প্রতিকার করব।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম ছিল। তার উপরে ধসা রোগের আক্রমণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুবরাজপুর, খয়রাশোল এবং সাঁইথিয়ার বেশ কিছু কৃষক তাঁদের জমির একটা বড় অংশ অনাবাদি রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। ক্ষতিটা দুবরাজপুর ব্লকের পারুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকায়তেই সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। কৃষি দফতরের উপলব্ধি ছিল, মূলত বীজ শোধন না করে বীজতলা তৈরি করা এবং নতুন বীজ না কিনে বা সংগ্রাহ করে একই প্রজাতির ধানের বীজকেই বছরের পর ব্যবহার করার ফলেই ওই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সঙ্গে ছিল জমিতে প্রয়োজনীয় পটাশ সারের ঘটতি। প্রতিকারও বাতলে দিয়েছিলেন কৃষিকর্তারা। কিন্তু এ বার কৃষি দফতরের সেই সতর্কবার্তা মাথায় না রেখেই বীজতলা করেছেন পারুলিয়ার অধিকাংশ কৃষক। |
চাষের জমিতে জল দেওয়া। সিউড়ি ১ ব্লকের ভুরকুনায় তোলা নিজস্ব চিত্র। |
কেন? করমকাল গ্রামের চাষি মুক্তি পাল, মাঝিগ্রামের বুধন বাগদি, হাজরাপুরের অমলেন্দু চক্রবর্তী, রাজগঞ্জ গ্রামের চাষি সঞ্জয় মণ্ডলরা বললেন, “গত বছর যা হয়েছে সেটাকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছি। তাই এ বার বীজ শোধন করার প্রয়োজন মনে করিনি।” অথচ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এবং বিজ্ঞান সম্মত ভাবে চাষিদের চাষ করার পরমর্শ দেয় কৃষি দফতর। ‘পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লব আনয়ন’ এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর কোনও না কোনও প্রকল্প গ্রহণ করে কী ভাবে সেটা হাতে কলমে করা সম্ভব তা কৃষকদেরকে দেখানো হয়। কিন্তু তার পরেও এ বিষয়ে কৃষকদের মধ্যে কোথাও অনীহা বা সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষিদফতরের কর্তারাই। সেটা খরিফ চাষে বীজতলা তৈরি করার আগে বীজ শোধন করাই হোক বা জমিতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহারই হোক। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, “যে ভাবে প্রচার হয় তাতে অধিকাংশ চাষিই বিষয়গুলি জানেন। কিন্তু কেন যে তাঁরা এটা শুনতে চান না জানা নেই।”
আবার কৃষকদের অনেকেই আছেন যাঁরা চাষের কাজে কৃষি দফতরের পরামর্শ মেনে চলেন অক্ষরে অক্ষরে। যেমন দুবরাজপুরের ঝিরুল গ্রামের চাষি রণবীর চৌধুরী বা খয়রাশোলের চাষি রামকৃষ্ণ পাল। দু’জনেই এ বার রাজ্য সরকারের দেওয়া কৃষকরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁদের মত, “বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে চাষ করার ফল হাতে নাতে পেয়েছি।”
তবে অন্যান্য বছর খরিফ ফসলের আগে যে ধরনের প্রচার বা চাষিদের সঙ্গে বৈঠক হয় সেটা এ বার ভোটের কারণে কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন জেলার উপকৃষি আধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, “বীজতলায় এ বার ওষুধ প্রয়োগ করতে বলব চাষিদের। তবে বীজ শোধন করে বীজতলা করলে যে পরিমাণ খরচ হত এখন ওষুধ প্রয়োগে খরচ ও শ্রম দু’টোই অনেক বেশি হবে।”
এ বার কৃষি দফতর ‘পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লব আনয়ন’ প্রকল্পের আওতায় উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে কী ভাবে ফলন বাড়বে, কী ভাবে রোগ পোকার হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করা হবে, সার বা কীটনাশক ও আগাছা নির্মূলের পদ্ধতিই বা কী—সেই কৌশল চাষিদের হতে নাতে শেখাতে প্রতি ব্লকে ৩০০-৪০০ হেক্টর জমি বেছে প্রদর্শন ক্ষেত্র তৈরি করবে। এ জন্য উন্নত জাতের ধানের বীজ, অনুখাদ্য, সার, বীজ শোধন ও আগাছানাশক ওষুধ দিয়েছে। রামকৃষ্ণবাবুর ভাদুলিয়া গ্রামও সেই তালিকায় আছে। গ্রামের অন্য চাষিরাও সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছন।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি জায়গায় ১০০ হেক্টর করে এক একটি ইউনিট করে জেলায় মোট ৭৪০০ হেক্টর জমিতে চাষের ও আগাছানাশক ব্যবহারের পদ্ধতি দেখানো হবে কৃষকদের। উপকৃষি আধিকর্তা (প্রশাসন) জানান, প্রতি ১০০ হেক্টরে ২০০-২৫০ জন চাষি উপকৃত হবেন। ওই কৃষি আধিকারিক বলেন, “আগাছা ফসলের ফলনকে প্রভাবিত করে। ফলে চাষিরা জমিতে আগাছা পরিষ্কার করা বা নীড়েন দিতে যে খরচ করেন তা বাঁচবে এবং শ্রমিক পেতে সমস্যায় পড়তে হবে না।” |