পড়ে থাকা আবাসনে ডেরা বাঁধছে দুষ্কৃতীরা। পড়ে পড়ে নষ্টও হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সেই সব আবাসন। তাই সেল গ্রোথ ওয়ার্কসের কুলটি কারখানার পড়ে থাকা আবাসনগুলি লিজ দেওয়ার দাবি তুলেছেন সংস্থার প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীরা। সংস্থার চেয়ারম্যানের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন তাঁরা। আবাসনগুলি লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ইস্কো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে।
শতাব্দী প্রাচীন ইস্কোর কুলটি কারখানার উৎপাদন পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয় ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ। সেলের কয়েক জন অফিসার ছাড়া এখন এই কারখানায় কোনও স্থায়ী কর্মী নেই। এখন প্রায় চারশো জন ঠিকা শ্রমিককে নিয়ে সামান্য উৎপাদন চলছে। কিন্তু কারখানার প্রায় চার হাজার আবাসন বছর দশেক ধরে বহিরাগতদের বসবাস করছে। অল্প কিছু আবাসনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন প্রাক্তন কিছু কর্মী। অভিযোগ, বহিরাগতদের দখলে থাকা বহু আবাসনই কার্যত দুষ্কৃতীদের ডেরায় পরিণত হয়েছে। বহু আবাসনের দরজা-জানালা, বিদ্যুতের তার চুরি গিয়েছে। বেশ কিছু আবাসনের দেওয়াল ভেঙে ইট খুলে নিয়েছে চোরেরা। |
ভাঙাচোরা এই সব আবাসনই দুষ্কৃতীদের ডেরা, দাবি বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র। |
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, আবাসনগুলিকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় অপরাধ বেড়েছে। সংস্থার এক অফিসার জানান, বহিরাগতদের দখল থাকা এই আবাসনগুলিতে তাঁরা জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সে জন্য প্রতি বছর প্রায় ২৫ কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। বহু বার জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের উদ্যোগ হলেও মানবিকতার প্রশ্ন তুলে এলাকার কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আন্দোলন শুরু করায় পিছু হঠতে বাধ্য হয় সংস্থা। কারখানার এক অফিসার আরও অভিযোগ করেন, এলাকার কিছু ভুঁইফোড় নেতা দালাল চক্র গড়ে মোটা টাকার বিনিময়ে বহিরাগতদের এই সব আবাসনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ইস্কো আবাসন এলাকায় অপরাধমূলক কাজ-কারবার বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশও। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, যত দ্রুত সম্ভব তাঁরা ব্যবস্থা নিন।”
কারখানার ভারপ্রাপ্ত জিএম কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারি জানান, আবাসনগুলির বিপুল ব্যয়ভার থেকে রেহাই পেতে সেগুলি লিজ দেওয়ার বিষয়ে কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা এ সব সমস্যাগুলি নিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আবাসনগুলি লিজ দেওয়ার জন্য সবুজ সঙ্কেতও দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রাক্তন শ্রমিক-কর্মীরাই প্রথম সুযোগ পাবেন।” আবাসন এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব সিআইএসএফ-কে দেওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র দফতরও সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বলে জানান কৃষ্ণকান্তবাবু। চলতি বছরেই এই প্রক্রিয়া সেরে ফেলা হবে জানিয়ে তাঁর দাবি, লিজ দেওয়া হলে শ্রমিক-কর্মীরা যেমন কম মূল্যে আবাসনগুলি পাবেন, সংস্থারও আয় হবে। |