চাচাচা একটি জনপ্রিয় নাচ। সেই নাচের সময় বোধহয় এল দার্জিলিঙের বাসিন্দাদের, তামাম উত্তরবঙ্গবাসীর। কেন না, দার্জিলিঙের চা বাগিচায় নতুন হিল্লোল উঠল বলে। সেখানকার দুটি পাতা একটি কুঁড়ির ডাক এসেছে চিন দেশ থেকে। চিনের কথা উঠলেই সস্তার রেডিও, মোবাইল, খেলনা ইত্যাদির কথা মনে হয়। সস্তার পণ্য সরবরাহ করে সারা পৃথিবীরই দখল নিয়েছে চিনারা। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে ভারত টেক্কা দিচ্ছে। সেটি হচ্ছে হালকা পানীয় রফতানিতে। আরও প্রাঞ্জল ভাবে বলা যায়, তা হল দার্জিলিঙের চা রফতানিতে। যে দেশ আমদানির চেয়ে রফতানিতেই বেশি অভ্যস্ত, সেই চিনে কিনা ক্রমশ কদর বাড়ছে দার্জিলিং চা-এর। সম্প্রতি চিনের আন্তর্জাতিক বেতারে প্রচারিত বৈদেশিক কার্যক্রমের অন্তর্গত বাংলা, হিন্দি ও নেপালি ভাষার অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে এটি রিপোর্ট প্রচারিত হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, যত দিন এগোচ্ছে, ততই রাজধানী পেইচিং এবং বাণিজ্য কেন্দ্র সাংহাই শহরে চা-র জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। বিবরণে আরও প্রকাশ যে, সরাসরি দার্জিলিং থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার কেজি চা পাড়ি জমাচ্ছে চিনা মুলুকে ও এর চাহিদা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। জানা গেছে যে, এই চায়ের জন্য কিলোগ্রাম পিছু ১৫ থেকে ৪০ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮২৩ টাকা থেকে ২১৯৫ টাকা) পর্যন্ত খরচ করতেও চিনারা পিছপা নন। তাই বিশাল এই চিনা বাজারের কথা ভেবেই দার্জিলিঙের চা-বাগানের মালিকেরা ইতিমধ্যেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। ভারতের চা রফতানির মূল ক্ষেত্রটি দীর্ঘ দিন ধরেই ইউরোপের দখলে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ইদানীং কালের বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার ধাক্কায় ইউরোপীয়রা এ পানীয়ের জন্য বেশি খরচ করতে রাজি নয়। সেখানকার বাজারে স্বাভাবিক ভাবেই টান এসেছে। সেই ধাক্কার অনুরণন দার্জিলিং-এ আসার আগেই চিনের বাজার থেকে ডাক আসায় আসন্ন ক্ষতিকে ছাপিয়ে উত্তরবঙ্গের চা-শিল্পে নতুন জোয়ার আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নতুন বাজারকে ধরতে পারলে এ শিল্পের অনেক সমস্যাই মিটে যাবে বলে মনে করছেন শিল্পপতিরা। তাদের মতে, চিনারা এখন সব ঋতুতেই চা পান করতে পছন্দ করছেন। এমনকী, এখন সে দেশে উপহার হিসেবে এই চায়ের প্যাকেটই বেশি চলছে।
জয়ন্ত ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি
|
উত্তর জনপদে নদনদীর অন্ত নেই। নদী যে মানুষের জীবনে কতটা প্রভাব বিস্তার করে তা প্রত্যেকেই জানি। দিনহাটার এক নদী বানিয়াদহ আজ নাব্যতা হারিয়ে ধুঁকছে। তোর্ষার শাখা নদী হলেও বানিয়াদহ দিনহাটা মহকুমার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এক সময় ছিল দাপুটে নদী। বানিয়াদহের বুকে নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরত। বানিয়াদহের মাছেই এ অঞ্চলের মাছের চাহিদা মিটত। আজ বানিয়াদহ মৃতপ্রায়। ভরা বর্ষাতেও তার যৌবনে বান ডাকে না। মূল নদীটির অংশ জরাবাড়ি, কোয়ালীদহ, বাসন্তীহাট ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে। ক্রমেই মজে যাচ্ছে এই নদী। দু’ধার বুজে আসছে মানুষের দখলদারীর মনোবৃত্তির ফলে। অথচ মানুষজন, পঞ্চায়েত প্রধান, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরাও নীরব। হয়তো বানিয়াদহ নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই! অথচ একদিন এই বানিয়াদহের জলে গ্রামগুলো সজীব থাকত। মত্স্যজীবীদের একটা বড় অংশ এই নদীকে ভরসা করত। বানিয়াদহ নদীর সংস্কার জরুরি।
শুভাশিস দাশ, দিনহাটা
|
জলপাইগুড়িতে আর্টবিট ও লোকসংস্কৃতি সমিতির যৌথ উদ্যোগে সাহিত্যের আড্ডা বসেছিল। শুরুতে আয়োজকদের ও পুরসভার তরফে অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ও উপ-পুরপ্রধান পিনাকী সেনগুপ্ত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারকে পুষ্পস্তবক দিয়ে স্বাগত জানান। গৌতম গুহ রায় সম্পাদিক ভাষা বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন ‘ভাষাচর্চা-তর্ক-বিতর্ক’ গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন সমরেশ। গ্রন্থ সমালোচনা প্রসঙ্গে গবেষক বিমলেন্দু মজুমদার জানান, ভাষার বিপন্নতা, ভাষার সমস্যা নিয়ে দুই বাংলার তাত্ত্বিকদের লেখা নিয়ে বাংলাগ্রন্থের এমন সংকলন প্রায় নেই বললেই চলে। সমরেশ মজুমদার বলেন, সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে বইটি স্থানিকতার ঊর্ধ্বে ওঠার এক নিদর্শন। মুখ্য বক্তা সমরেশ মজুমদার জানান, উত্তর বাংলার সাহিত্য বলে তিনি আলাদা কোনও বিভাগকে তিনি মানেন না। তাঁর সৃষ্টিসত্ত্বা জুড়ে রয়েছে সমগ্র বাংলাই। আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রায় শতাধিক সাহিত্যপ্রেমী।
অনিতা দত্ত, জলপাইগুড়ি |