শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। তাই ঝগড়া-বিবাদ-চেঁচামেচি নয়। বরং বামফ্রন্টের বড় শরিকের ‘চোখ খুলতে’ গাঁধীগিরির রাস্তাই বেছে নিল পুরুলিয়া জেলা ফরওয়ার্ড ব্লক।
ফব নেতৃত্বের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেওয়াকে কেন্দ্র করে চুক্তি ভেঙেছে সিপিএম। কিন্তু পাল্টা প্রার্থী দিয়ে তার বদলা নয়, বরং সিপিএম নেতৃত্বের কাছে বার্তা পাঠাতে নিজেদের প্রার্থীকেই তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফব। মনোনয়নপত্র জমা পড়ে যাওয়ায় এখন আর আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি। তাই লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করে হুড়া ব্লকের মাগুড়িয়া-লালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী আর লড়ছেন না বলে ঘোষণা করেছে ফব। এই ব্লকের আরও কিছু আসনে অবশ্য ফব-সিপিএম মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে।
ফব সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাগুড়িয়া-লালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি আসন, হুড়া ও কেশরগড় পঞ্চায়েতের একটি করে আসন এবং হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে ফব লড়বে বলে এ বার জেলা বামফ্রন্টে এমনই ঠিক হয়েছিল। মাগুড়িয়া-লালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যে আসনগুলিতে ফব-র লড়ার কথা হয়েছিল, সেই ১ ও ১২ নম্বর আসন দু’টি পড়ছে যথাক্রমে বড়গ্রাম ও সরচাকলতা গ্রামে। বাকি দু’টি আসন হুড়া ও কেশরগড়ে। গতবার হুড়া ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনটি আসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে জয়ী হয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। এ বার তাই তিনের বদলে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে পাঁচটি এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে একটি আসন দাবি করেছিলেন ফব নেতৃত্ব। যদিও আলোচনার পরে ঠিক হয়, ফব-কে পঞ্চায়েত স্তরে পাঁচের বদলে চারটি আসন ছাড়া হবে। ফরওয়ার্ড ব্লকের পুরুলিয়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক মুজিবর আনসারি বলেন, “ফ্রন্টের বৈঠকে সব ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর দেখা যায়, সিপিএম আমাদের মাগুড়িয়া-লালপুর পঞ্চায়েতে শুধু বড়গ্রাম আসনটিই ছেড়েছে। অন্য আসনগুলি থেকে সিপিএম প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি। অথচ ঘটনা হল, ২০০৮ সালে আমরা এই ব্লকে পঞ্চায়েত স্তরে তিনটি আসনে জিতেছিলাম।” |
এর পরেই দলে ক্ষোভ তৈরি হয়। দলীয় কর্মীরা প্রশ্ন তোলেন, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এখানে এসে ফ্রন্টের মধ্যে যেখানে যেখানে গোঁজ রয়েছে, তা তুলে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ বড় শরিক সিপিএম এখানে ফ্রন্টের বৈঠকে আসন সমঝোতা হয়ে যাওয়ার পরেও ছোট শরিকের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দিচ্ছে। “এ রকম ভাবে কী করে জোটধর্ম পালন সম্ভব?” প্রশ্ন তুলছেন জেলা ফব-র একাধিক নেতা।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ফ্রন্টের ঐক্যের স্বার্থে ফব নমনীয় অবস্থা নিয়েছে। মুজিবর আনসারি বলেন, “যে সব আসনে বামফ্রন্টের দুই শরিক প্রতীকে রয়ে গেলেন, সেখানে তো বিরোধীরা সুবিধা পেয়ে যাবে! সেটা এড়াতে আমরা প্রচারপত্র দিয়ে এলাকায় জানাচ্ছি যে, আমাদের প্রার্থীকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আর এর মাধ্যমে সিপিএমকেও একটা বার্তা দিচ্ছি আমরা।” সরচাকলতা আসনে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী প্রদীপকুমার নন্দীর বক্তব্য, “যেহেতু এই আসন আমাদের প্রাপ্য ছিল, অথচ সিপিএম প্রতীকে লড়ায় জোটের স্বার্থে আমাদের প্রার্থিপদ তুলে নিতে হচ্ছেএ কথাটাও প্রচারপত্র মারফত আমরা ভোটারদের জানাচ্ছি।”
প্রশ্ন উঠেছে, হুড়া ব্লকের মোট পাঁচটি আসনে যেখানে ফব-সিপিএম মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে, সেখানে কেবল সরচাকলতা বুথের প্রার্থী তুলে কী ভাবে বাম ঐক্য রক্ষা হবে? এ প্রশ্নের জবাবে মুজিবরের যুক্তি, “অন্য চারটি আসনে আমাদের শক্তি সিপিএমের চেয়ে অনেক বেশি। তাই সেখানে আমরাই জিতব বলে মনে করছি। কিন্তু, সরচাকলতা বুথে সিপিএমের ভোটার রয়েছে ভালই। ওখানে সিপিএম-ফব ভোট ভাগাভাগিতে আখেরে তৃণমূলেরই ফায়দা হবে। তাই শুধু সরচাকলতা থেকে আমরা প্রার্থী তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ফব-কে পঞ্চায়েত স্তরে চারটি আসন ছাড়ার কথা থাকলেও কেন সিপিএম ওই সব আসনে প্রার্থী দিল, এ প্রশ্নের সদুত্তর দেননি হুড়া ব্লকের দায়িত্বে থাকা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে পঞ্চায়েত সমিতিতে গতবার ফব জেতার পরেও কেন সিপিএম তাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিল, মেলেনি তার উত্তরও। কাশীনাথবাবু শুধু বলেছেন, “কেন এমন হল তা নিয়ে ফ্রন্টে আলোচনা করব।” |