রায়না থানার ওসি রাকেশ সিংহের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’ মদত দেওয়ার অভিযোগ করলেন দশ জন নির্দল প্রার্থী। মঙ্গলবার রায়না ১ ব্লকের ওই প্রার্থীরা জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বর্ধমানের (দক্ষিণ) মহকুমাশাসকের কাছে এই অভিযোগ জানান। অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা। তবে তিনি বলেন, “ওই দশ জন কী কী অভিযোগ করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তার সবিস্তার রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে ওসি-কে।” জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, ওই অভিযোগপত্র তিনি এখনও হাতে পাননি।
রায়না ১ ব্লকে মনোনয়ন জমার সময় থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছেন বিরোধী দলের প্রার্থীরা। এর জেরেই সেখানকার প্রায় একশোটি পঞ্চায়েত আসনে তারা প্রার্থী দিতে পারেনি বলে দাবি সিপিএমের। গত শনিবার দলের রায়না জোনাল কমিটির নেতারা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেন, তাঁদের পাঁচ প্রার্থী এলাকায় ভোটের প্রচার চালাতে পারছেন না। পুলিশ সুপার ওই পাঁচ জনকে গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই প্রার্থীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর।
এরই মধ্যে রায়না থানার ওসি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বর্ধমানে এসে হাজির হন দশ নির্দল প্রার্থী। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই প্রার্থীরা তৃণমূলেরই কর্মী। দলের তরফে প্রথমে টিকিট দেওয়া হলেও পরে তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু এই দশ জন প্রার্থী ভোটের ময়দান থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকার করে নির্দল প্রার্থী হিসেবে রয়ে যান। |
রায়না-১ পঞ্চায়েত সমিতির নির্দল প্রার্থী শুভ্রা মালিক, মহেশবাটি পঞ্চায়েতের প্রার্থী প্রশান্ত মালিক, হরিহরপুর পঞ্চায়েতের প্রার্থী মহম্মদ হোসেন শেখদের অভিযোগ, রায়নার ওসি-র মদতেই এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। তাঁদের প্রচারে বাধা, দেওয়াল লিখন ও পোস্টার নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গেলে থানা তা নিচ্ছে না, উল্টে ওসি তাঁদের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানো পরামর্শ দিচ্ছেন বলে ওই প্রার্থীদের দাবি। ওসি অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করছেন অভিযোগ তুলে তাঁকে অপসারণের দাবি করেছেন ওই নির্দল প্রার্থীরা। অভিযোগের প্রতিলিপি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকেও পাঠানো হয়েছে বলে তাঁরা জানান।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য রায়নায় কোনও সন্ত্রাসের কথা মানেননি। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাও ওসি-র বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “ওই ১০ জন তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী। দলের মধ্যে এক গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে ওঁরা মিথ্যা অভিযোগ জানিয়েছেন। ওঁরা যে সব অভিযোগ জানিয়েছেন, সেগুলি সম্পর্কে নির্দিষ্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবু ওসি-কে সবিস্তার রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।”
জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচন আধিকারিক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আমার হাতে ওই রকম কোনও অভিযোগ পৌঁছয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবব।” ওসি রাকেশ সিংহের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ব্যস্ত রয়েছি। আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।”
|