টোটোপাড়ায় জল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থানের বেহাল দশার বিষয়টিকে সামনে রেখে সেখানকার বাসিন্দাদের গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানালেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। সোমবার মাদারিহাট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে টোটোপাড়ায় যান জিটিএ প্রধান। ওই এলাকাটি বল্লালগুড়ি-টোটোপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় পড়ে। সেতুবিহীন তিনটি পাহাড়ি ঝোরা পেরিয়ে টোটোপাড়ায় পৌঁছতে হয়। গ্রামে পৌঁছনোর পরে গুরুঙ্গ আক্ষেপ করে বলেন, “এত খারাপ পাহাড়ে কোনও এলাকা নেই। টোটোপাড়ার মানুষ খুবই দুর্দশায় রয়েছেন। আমি নাগরিক পরিষেবার বেহাল দশা দেখে স্তম্ভিত। এখানকার মানুষেরা আমাদের সঙ্গে থাকলে আমরাও উপকৃত হব। সকলে মিলে উন্নয়নের কাজ করব।” সেখানে গুরুঙ্গ সভা করেননি। কিন্তু, দীর্ঘ সময় টোটোপাড়ার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হাঁটেন তিনি। বাসিন্দাদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের গল্প করে মন জয়ের চেষ্টা করেন। টোটোপাড়ার বাসিন্দারা সিংহভাগই টোটো ছাড়াও নেপালি ভাষায় কথা বলতে স্বচ্ছন্দ। |
টোটোপাড়ায় বিমল গুরুঙ্গ। সোমবার ছবিটি তুলেছেন রাজকুমার মোদক। |
এদিন সকালে টোটো সম্প্রদায়ের এক সদস্যের বাড়িতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন গুরুঙ্গ। পরে ফের হাঁটতে শুরু করেন গ্রামে। কয়েকজন টোটো তাদের মন্দিরের বেহাল অবস্থা দেখান মোর্চা সুপ্রিমোকে। ওই মন্দির-সহ গ্রামের দুরবস্থার বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান টোটোরা। টোটো সম্প্রদায়ের যুবকদের কয়েক জন জানান, এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির জন্য মাঝারি শিল্প, পর্যটনের প্রসার ঘটানোর অনুরোধও যাতে রাজ্য সরকারকে করা হয় সে জন্য গুরুঙ্গকে অনুরোধ করেন তাঁরা। টোটোপাড়া-বল্লালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত আরএসপি-সিপিএম দখলে ছিল। মোট পাঁচটি পঞ্চায়েত সদস্য নিয়ে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে টোটোপাড়াতে তিন পঞ্চায়েত সদস্য। এত দিন বামেরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে রেখেছে। এ বার চিত্রটা পাল্টে গিয়েছে। গত বার পঞ্চায়েতের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটি আরএসপি ও দুটি সিপিএম-এর দখলে ছিল। এবার বামফ্রন্ট একজোট হলেও ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে মাত্র তিনটি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। মোর্চা ও তৃণমূলও প্রার্থী দিয়েছেন। আরএসপি নেতা হরেন শৈব বলেন, “কাজ হয়নি বললে মানব না। অনেক কাজ হয়েছে। এক জন প্রার্থী শেষ মুহূর্তে মনোননয়ন প্রত্যাহার করেন। অপর একটি অংশে প্রার্থী দেওয়া হয়নি।” টোটোপাড়ার ৩টি আসনে ভোটার ১৭০৮ জন। যার মধ্যে টোটো ভোটার ৭৮৩ জন।
পাঁচটি আসনের মধ্যে মোর্চা দুজন টোটোকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। তৃণমূলের এক জন টোটো সম্প্রদায়ের প্রার্থী রয়েছেন। মোর্চা সমর্থক টোটোদের প্রাক্তন কাইজি সচিন টোটো বলেন, “আমাদের সমস্যার কথা মন্ত্রী গুরুত্ব দেন না। বিমল গুরুঙ্গ নিজে এসে আমাদের সমস্যা দেখলেন। তাঁর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ ভাল। আমরা তাঁর কাছে তাই সমস্ত বিষয় জানিয়েছি। টোটো প্রতিনিধি পঞ্চায়েতে গেলে সমস্যা দূর করতে চেষ্টা করবে।”
তবে টোটোপাড়ায় বিমল গুরুঙ্গের পদযাত্রা ভাল চোখে দেখছে না তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটে জাতিগত সদস্যা সৃষ্টির চেষ্টা বিমল করছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তৃণমূল নেতা অশোক টোটোর দাবি, “দু’বছরে সাত জন টোটো সম্প্রদায়ের বেকার যুবক যুবতী চাকরি পেলেন। টোটোরা বিনা পয়সায় চাল গম পাচ্ছেন। এর আগের সরকার আমাদের কথা শোনেনি। আমরা টোটোদের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। ডুয়ার্সে কেউ অশান্তি উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করে সফল হবে না।” |