জল নামছে। বন্যা পরিস্থিতি কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা ফের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বাঁকুড়াবাসীর। শনি ও রবিবারের টানা বৃষ্টিতে জেলার জনজীবন জেরবার হয়ে পড়েছিল। বিষ্ণুপুর, সোনামুখী, বাঁকুড়া পুর-এলাকার পাশাপাশি ওন্দা, বাঁকুড়া-২, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী ব্লকের নানা জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। কোথাও বানের তোড়ে ভেসে গিয়েছে রাস্তা, কোথাও আবার নদীর জল সেতু উপচে বইতে থাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। |
রবিবার দুপুর থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে পড়ায় জলমগ্ন এলাকাগুলি থেকে জল অবশ্য নেমে গিয়েছে। কিন্তু, বেশ কিছু রাস্তা ও ছোট সেতু ভেঙে পড়ায় বিষ্ণুপুর ব্লকের সুভাষপল্লি, দেউলির মতো কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে মহকুমা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দ্রুত রাস্তা মেরামতির দাবিতে সোমবার বিডিওকে স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূলের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর অঞ্চল কমিটি। কমিটির সভাপতি প্রতাপচন্দ্র বীর বলেন, “হাড়িঘাট থেকে ষাঁড়েশ্বর যাওয়ার রাস্তা ও সুভাষপল্লি গ্রামে বিড়াই নদীর সেতুর একটা অংশ বন্যায় ভেসে গিয়েছে। এলাকার মানুষজন বিষ্ণুপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। অবিলম্বে ওই রাস্তা মেরামতির দাবি জানিয়েছি।” বিষ্ণুপুরের বিডিও প্রশান্তকুমার মাহাতোর আশ্বাস, রাস্তা তৈরির কাজ দ্রুত শুরু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেউলি গ্রামের বাসিন্দা অজয় রায়, কমল রায়রা বলেন, “বন্যার জলে গ্রাম প্রায় ডুবতেই বসেছিল। বৃষ্টি যদি বন্ধ না হত, তাহলে বড়সড় বিপদ হতে পারত।” সুভাষপল্লির বিশ্বজিত্ কীর্তনিয়া, প্রফুল্ল সরকারদের বক্তব্য, গ্রামে জল ঢুকলেও ঠিক সময়ে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় বড়সড় ক্ষতি এড়ানো গিয়েছে। তবে, বন্যায় রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় তাঁরা প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছেন। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ফের ভারী বর্ষণে পরিস্থিতি কী হতে পারে, তা ভেবে আশঙ্কায় রয়েছেন ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা।
বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী পুরসভার জলমগ্ন ওয়ার্ডগুলি থেকে অবশ্য সোমবার জল নেমেছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে শালি নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় সোনামুখীতে ওই নদীর সেতু জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাঁকুড়া-দুর্গাপুর সড়কের বাস যোগাযোগ। এ দিন দুপুরে জল কমে যাওয়ায় ফের স্বাভাবিক হয়েছে যান চলাচল। এ দিকে বন্যার জল নামতেই বাঁকুড়া শহরে গন্ধেশ্বরী সেতুর পিচ রাস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। যার জেরে সদ্য চালু হওয়া সেতুটি ফের বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। বিষ্ণুপুর পুরসভা এলাকায় শতাধিক কাঁচা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “বৃষ্টিতে জেলায় সাড়ে চারশোরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষ্ণুপুর মহকুমায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা বেশি। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” |