|
|
|
|
সন্ত্রাস এড়াতেই প্রতীক বদল |
পদ্মফুলের প্রক্সি দিয়ে পঞ্চায়েত দখলের মতলব সিপিএমের
সুরবেক বিশ্বাস • গোপীবল্লভপুর |
বিজেপি-র পদ্মফুল প্রতীকে লড়ছেন সিপিএম প্রার্থীরা! এবং এলাকার সিপিএম নেতাদের আশা, ভোট-পর্ব মিটতেই ঘরের ছেলেরা ঘরে ফিরবেন। অর্থাৎ, সিপিএমে যোগ দেবেন। ভোটে ‘প্রক্সি’ দিলেও, ঘুরপথে পঞ্চায়েতের দখল হাতে পেয়ে যাবে সিপিএম।
ঝাড়গ্রাম থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের কুলিয়ানা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০টি আসনে সিপিএমের প্রতীকে এক জনও প্রার্থী নেই। একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। বাকি ন’টিতে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে বিজেপি-র। আপাত দৃষ্টিতে। কেননা, সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, পদ্মফুল প্রতীক নিয়ে লড়া ন’জন প্রার্থীর মধ্যে ছ’জনই আসলে সিপিএমের। দলীয় প্রতীকে লড়ার সাহস না থাকায় তাঁরা বিজেপির প্রতীকে লড়ছেন। আর বাকি তিন জন বিজেপি প্রার্থীর সবাই আসলে তৃণমূল থেকে বেরিয়ে আসা লোক, যাঁদের সাহায্য করছে সিপিএম-ই।
পঞ্চায়েত ভোটে প্রাক-নির্বাচনী ও নির্বাচনোত্তর বিভিন্ন রকম জোট ও রণকৌশলের সাক্ষী হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য রাজনীতি বা জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে যে সব জোটের হিসেব মিলবে না। কোথাও সিপিএমের সমর্থনে বিজেপি-র প্রধান হয়েছে, কোথাও ফব-কে ঠেকাতে সিপিএম-তৃণমূল সমঝোতা হয়েছে, কোথাও সিপিএম-কে ঠেকাতে আরএসপি সাহায্য নিয়েছে তৃণমূলের। কিন্তু সুবর্ণরেখার উত্তর পাড়ে সব্জি চাষে প্রসিদ্ধ এই এলাকায় সিপিএম যা করছে, তেমনটা চট করে শোনা যায় না।
সিপিএমের বেলিয়াবেড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক অম্বিকাচরণ ঘোষ বলেন, “পদ্মফুল প্রতীকে ন’জনের মধ্যে ছ’জন আমাদের প্রার্থী। বাকি তিন জনের সঙ্গেও আমাদের অলিখিত বোঝাপড়া হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতটা যদি পেয়ে যাই, তা হলে জয়ী প্রার্থীরা সকলেই সিপিএমে যোগ দেবেন। বিজেপি-র প্রতীকটা স্রেফ কৌশল।”
কেন সিপিএমের প্রার্থীদের শেষমেশ বিজেপি-র প্রতীকে দাঁড় করাতে হল? অম্বিকাবাবুর প্রাথমিক দাবি, “তৃণমূলের সন্ত্রাসে দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়তে আমাদের প্রার্থীরা ভয় পেয়েছেন।” তবে অন্য একটা হিসেবও রয়েছে। ২০১১ পর্যন্ত কুলিয়ানা পঞ্চায়েত এলাকায় সিপিএম সদস্যসংখ্যা ছিল ৫৫। এখন ১৪। আর সদস্য কমার পিছনের কারণ শুধু সন্ত্রাস আর হুমকির অভিযোগে সীমাবদ্ধ নয়। পরে অম্বিকাবাবুও মেনেছেন, “আমাদের তরফে কিছু অনৈতিক কাজকর্ম হয়েছিল। সেটা অস্বীকার করব না। স্বজনপোষণ, নেতাদের মর্জিমাফিক পঞ্চায়েত চালানো আর গোষ্ঠী কোন্দলও এই এলাকায় পার্টির খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী।”
সিপিএমের প্রার্থীরা নির্দল হিসেবেও তো দাঁড়াতে পারতেন? অম্বিকাবাবুদের মত, নির্দলদের নানা প্রতীক হত। মানুষ বিভ্রান্ত হতেন। তাঁরা ঠিক করেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটাই প্রতীক হওয়া চাই। ইতিমধ্যে তৃণমূল থেকে বেরনো একটা অংশ বিজেপি-র প্রতীক নিয়ে এগিয়ে আসে। দু’পক্ষে আলাপ-আলোচনার পরে, সিপিএমের ছ’জনও বিজেপি-র প্রতীকে দাঁড়ান।
এই রাজনৈতিক কৌশল, কি দলের ‘নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় না? মুচকি হেসে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক বর্ষীয়ান সদস্য বলেন, “কোথাও লিখিত-পড়িত তো কিছু হয়নি। প্রমাণ হবে কী করে?”
তবে একটু যেন হতাশার ছোঁয়া ঝাড়গ্রামে বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক, গোপীবল্লভপুরেরই বাসিন্দা অবনী ঘোষের গলায়। তাঁর দাবি, ওই এলাকায় সিপিএম বিধানসভার পর ঘরে ঢুকে গিয়েছিল। বিজেপি-র দু’-এক জন যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন, তখন সিপিএম ও বিক্ষুব্ধ তৃণমূল তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। বিজেপি-র প্রাথমিক সদস্যপদ নেওয়ার পরে তাঁদের পঞ্চায়েতে প্রার্থী করা হয়। অবনীবাবুর ক্ষোভ, “জিতে ওঁরা যদি সিপিএমে যান, কী করার আছে?”
তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা বিজেপি-র হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের নেতা শক্তিপদ সাউয়ের দাবি, “তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্বপন পাত্রের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমরা দল ছেড়ে বেরিয়েছি।” শক্তিপদবাবু এবং অম্বিকাবাবুদের অভিযোগ, বিরোধী রাজনীতি করায় তাঁরা শাসক দলের সন্ত্রাসের মুখে পড়ছেন।
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্বপন পাত্র অবশ্য দাবি করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, “আমরা যদি সত্যিই সন্ত্রাস করতাম, তা হলে বিজেপি-র প্রতীক নিয়েও ওই ন’জনের এক জনও ভোটে দাঁড়াতে পারতেন না।” |
|
|
|
|
|