আর্থিক সংস্কারের আশ্বাসে শেয়ার বাজারের হাল কিছুটা ফিরলেও অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ ফের বাড়িয়ে দিল আটটি পরিকাঠামো শিল্পে নামমাত্র উৎপাদন বৃদ্ধি। মে মাসে এই শিল্পে বৃদ্ধি ২.৩%, যেখানে গত বছর তা ছিল ৭.২%। সার্বিক ভাবে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হারের ওপর তা ছায়া ফেলবে বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলে। যার কিছুটা ইঙ্গিত সোমবারই মিলেছে, গাড়ি শিল্পে তাবড় তাবড় সংস্থার বিক্রি এ বারেও ধাক্কা খাওয়ার খবরে।
আজ প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে মূলত অশোধিত তেল, কয়লা, সার ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন সরাসরি কমার জেরেই পরিকাঠামো শিল্পে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে যৎসামান্য। এপ্রিল-মে দু’মাসের হিসেব ধরলে তা ২.৪%। গত বছর একই সময়ের হার ৬.৫%। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগেও আর্থিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি কেন্দ্র দিয়েছে। তবে তা রূপায়ণে শ্লথগতির প্রভাবই পড়েছে এই বৃদ্ধির হারে। আর, উৎপাদন শিল্পের সার্বিক বৃদ্ধির হার নির্ণয়ে পরিকাঠামো শিল্পের গুরুত্ব ৩৮%। তাই পরিকাঠামো শিল্প ঢিমেতালে এগোলে তার প্রভাব পড়বে সার্বিক শিল্প বৃদ্ধিতে। |
গাড়ির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন শিল্পে বিক্রি নিয়ে জুনের পরিসংখ্যান শিল্পমহলে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে চাহিদা কম থাকা এবং টাকার দাম বাড়ায় যন্ত্রাংশ আমদানির খরচ বৃদ্ধিতে গত কয়েক মাসের মতোই জুনেও বেশির ভাগ গাড়ি সংস্থারই বিক্রি তলানিতে। গাড্ডায় পড়ে যাওয়া ব্যবসাকে টেনে তুলতে ভাল বর্ষার হাত ধরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বাজার বাড়া এবং উৎসবের মরসুমের দিকেই তাকিয়ে গাড়ি শিল্প।
মারুতির বিক্রি গত বছরের জুনের চেয়ে এ বার কমেছে ১২.৬%। দেশের বাজারে তা কমেছে ৭.৮%। রফতানি কমেছে ৪৩%। ধাক্কা খেয়েছে মহীন্দ্রাও। বিক্রি কমেছে ১৩%। রফতানি কমেছে ৩৯%। সংস্থার কর্তা প্রবীণ শাহের দাবি, চড়া সুদের হার, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে এসইউভি ধরনের গাড়ির উপর বাড়তি শুল্ক ও টাকার পতনে যন্ত্রাংশ আমদানির বাড়তি খরচ ব্যবসায় মন্দার ছায়া ফেলেছে। তিনি বলেন, “চাহিদা বাড়াতে অবিলম্বে কেন্দ্রের উচিত স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়া।”
দেশের বাজার ও রফতানি মিলিয়ে গত জুনের চেয়ে টাটা মোটরসের বিক্রি কমেছে ১৮%। যাত্রী গাড়ির বিক্রি কমেছে প্রায় ৩১%। টয়োটা-র বিক্রি কমেছে প্রায় ১৯%। সংস্থার অন্যতম কর্তা সন্দীপ সিংহের আশা, বর্ষার পরে ও উৎসবের মরসুমে চাঙ্গা হবে গাড়ি বাজার। বাজার মন্দা বলে জুনে তাভেরা (বিএস থ্রি) ও সেইল-এর ডিজেল গাড়ি উৎপাদন বন্ধ রেখেছিল জেনারেল মোটরস। সব মিলিয়ে তাদের বিক্রি পড়েছে ১১%।
সামান্য অবস্থা ভাল হুন্ডাই মোটরের। দেশ ও রফতানি, উভয় বাজারেই জুনে বিক্রি বেড়েছে ১%। ব্যতিক্রমের তালিকায় হোন্ডা-ও। তাদের বিক্রি বেড়েছে ২৪৮%। ফোর্ডের ব্যবসাও এ দেশের বাজারে বেড়েছে ১৪%। এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে মার্সিডিজ বেঞ্জের বিক্রি বেড়েছে ৩২%। সংস্থার দাবি, যা গত দু’বছরে সর্বোচ্চ।
অন্য দিকে, টিভিএস-এর বিক্রি সামান্য কমলেও অন্য দুই দু’চাকার গাড়ি সংস্থা হোন্ডা মোটরসাইকেল এবং ইয়ামাহার বিক্রি বেড়েছে। ভাল বর্ষায় কৃষি উৎপাদন বাড়লে গাড়ির চাহিদাও বাড়বে, আশা তাদের। মহীন্দ্রার গাড়ি বিক্রি কমলেও ট্রাক্টর ব্যবসা জুনে বেড়েছে। সংস্থার কর্তাদের আশা, খরিফ শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে।
এ দিকে সোমবার সেনসেক্স ১৮২ পয়েন্ট বেড়ে বন্ধ হয় ১৯,৫৭৭.৩৯ পয়েন্টে। আর্থিক সংস্কার এবং প্রত্যাশার চেয়ে ভাল বর্ষার ইঙ্গিতে বাজারে ফিরেছে বিদেশি লগ্নিকারীরাও। যার জেরে সকালে ডলারে টাকার দাম বেড়ে পৌঁছে যায় ৫৮.৯৬-এ। কিন্তু দিনের শেষে আমদানিকারীদের ডলার কেনার জেরে তা ১৩ পয়সা পড়ে। প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫৯.৫২ টাকা। গত তিন দিনের লেনদেনে এই প্রথম পড়ল টাকা। |