পঞ্চায়েত ভোটের আগে মাওবাদী তৎপরপতা রুখতে এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হল বীরভূমে। গত কয়েকদিন ধরে নলহাটি ও খয়রাশোল থানা এলাকায় দু’ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী টহল দিতে শুরু করেছে।
ঝাড়খণ্ড থেকে মাওবাদীরা বীরভূমে নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে বলে খবর রয়েছে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “দীর্ঘদিন থেকেই এই জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবি উঠছিল। সম্প্রতি লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমান্তে মাওবাদী সক্রিয়তা বৃদ্ধির প্রমাণ মিলেছে। তাই এই কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা হয়েছে।”
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদী মোকাবিলায় রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন। কেন্দ্র ছয় কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, বীরভূমে মোতায়েন হওয়া বাহিনী সেই ছয় কোম্পানিরই অন্তর্গত।
জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, এক কোম্পানি নলহাটিতে ঘাঁটি গাড়লেও মুরারই ও রামপুরহাট থানা এলাকাতেও নজরদারি চালাবে। একই ভাবে খয়রাশোলের পাশাপাশি কাঁকরতলা, সদাইপুর, দুবরাজপুর, রাজনগর ও মহম্মদবাজার থানার নজরদারিতে থাকবে অন্য কোম্পানি। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনী কত দিন থাকবে, তা জানে না জেলা পুলিশ-প্রশাসন। |
কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল। সোমবার নলহাটিতে। —নিজস্ব চিত্র। |
ইতিমধ্যেই বিহারে চলন্ত ট্রেনে মাওবাদী হামলার পরে জেলার বিভিন্ন স্টেশনে রেল পুলিশ বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে। মাওবাদী তৎপরতা বাড়ায় সম্প্রতি রামপুরহাটে রেল ও পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি সমন্বয় বৈঠক করেছেন পূর্ব রেলের হওড়া ডিভিশনের রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্তি দাস। বৈঠকে যৌথ ভাবে পারস্পরিক সমন্বয় রেখে কী ভাবে মাওবাদী হামলা প্রতিরোধ করা হবে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
অতীতে খয়রাশোল-রাজনগরে একাধিক সিপিএম নেতা খুন থেকে সাঁইথিয়া-অন্ডাল রেললাইনে বোমা বিস্ফোরণ সব ক’টিতে অভিযুক্ত মাওবাদীরাই। বিশেষ করে মহম্মদবাজারের পাঁচামি বা ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বীরভূমের পাথর শিল্পাঞ্চলগুলিতে মাওবাদী সক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে নানা সময়ে।
সম্প্রতি সীমান্তবর্তী ঝাড়খণ্ড এলাকায় মাওবাদী তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জেলা গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া, দুমকা এলাকায় মাওবাদী সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে। রামপুরহাট-নলহাটি-মুরারইয়ের সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের দুমকা, পাকুড় বা শিকারিপাড়াকে মাওবাদীরা তাদের সহজ ‘রুট’ হিসেবে ব্যবহার করছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। একই ভাবে মাওবাদীরা খয়রাশোল-বাগডহরি, রাজনগর-টোংরা ও মহম্মদবাজার-রানিশ্বর রুটগুলিকেও (মাওবাদী প্রভাবিত ঝাড়খণ্ডের বীরভূমের এই এলাকাগুলির দূরত্ব ২-৫ কিমি) ব্যবহার করছে বলে খবর এসেছে জেলা পুলিশের কাছে।
তার উপরে গত শনিবারই নলহাটির কাছে রেল লাইনে ডিটোনেটর এবং জিলেটিন স্টিক মিলেছে। ঘটনায় মাওবাদী যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে বীরভূমে। |