দেবনাথ পরিবারে পারিবারিক জোটের কাছে হার রাজনীতির
বাড়ির দুই বোন-সহ একই পরিবারের চার সদস্য পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অথচ বাড়িতে রাজনীতি নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। স্বাভাবিক আর পাঁচটা দিনের মতোই সম্পর্কের মধ্যে নেই কোনও টানাপোড়েন। একই সঙ্গে চলছে রান্না-খাওয়া। রাজনীতির জটিল মেরুকরণেও পারিবারিক ‘জোট’ অটুট হাবরা-১ নং ব্লকের মছলন্দপুরের উত্তর বেতপুল এলাকার দেবনাথ পরিবারে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাজনীতির জায়গা বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে। ভিতরে চার ঠাঁই নেই। আর এই ছবিটাই দেবনাথ পরিবারের প্রতি এলাকার মানুষের ঔৎসুক্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
পরিবারের কর্তা জয়ন্ত দেবনাথ। তিন ছেলে বাবলা, তাপস ও মানস। বাবলাবাবুর স্ত্রী তমালিদেবী এ বার মছলন্দপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০৮ নম্বর বুথে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়াই করছেন। তমালিদেবীর জা ওই একই বুথে কংগ্রেসের প্রার্থী। ফলে একই বুথে সম্মুখসমরে দুই জা। পাশের ২০৭ নম্বর বুথে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দুই ভাই। এখানে লড়াই তাপস ও মানসবাবুর মধ্যে। তাপসবাবু দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের হয়ে। মানসবাবু বিজেপি-র প্রার্থী। একান্নবর্তী পরিবার। এক হাঁড়িতেই রান্না। এহেন দেবনাথ পরিবারকে নিয়ে বাসিন্দাদের আগ্রহ তৈরি হলেও তাতে বিশেষ হেলদোল নেই তাঁদের।
প্রার্থী করতে হঠাৎ এই পরিবারের লোকজনকেই বেছে নেওয়া হল?
বাঁদিক থেকে তমালি, সুমিতা, তাপস ও মানস দেবনাথ।—নিজস্ব চিত্র।
মানসবাবুর জবাব, “জানি না। রাজনৈতিক দলগুলোই এর উত্তর দিতে পারবে। আর পারবেন এলাকার মানুষ”। পারিবারিক জামা-কাপড় তৈরির ব্যবসা। আদতে কংগ্রেসি পরিবার। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হওয়ার পর বাড়ির বড় ছেলে বাবলাবাবু সেখানে যোগ দেন। এলাকাতেও দলের নেতৃত্বে তিনিই। তাঁর স্ত্রী তমালিদেবীও তৃণমূলের সমর্থক। কিন্তু তাই বলে কখনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হননি।
যে বুথে দুই জা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন সেটি বর্তমানে তৃণমূলের দখলে। আসনটি এ বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় বাবলাবাবু আর দাঁড়াতে পারেননি। তমালিদেবীর অবশ্য নির্বাচনে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা ছিল না। তাঁর কথায়, “দলের নেতা-কর্মীরা আলোচনা করে আমাকে মনোনীত করেছেন। স্বামীর অনুমতি নিয়ে দাঁড়িয়েছি। দলকে ভালবাসি তাই।” প্রতিদ্বন্দ্বী জা সুমিতা সম্পর্কে অবশ্য একেবারেই মুখে কুলুপি এঁটেছেন। তাঁর কথায়, “প্রচার যা করার দলই করছে। এ নিয়ে আমাদের দুই জায়ে কোনও মতবিরোধ নেই। বাড়িতেও এ সব নিয়ে আলোচনা করি না।”
স্ত্রীকে ভোটে দাঁড়াতে অবশ্য উৎসাহ দিয়েছেন তাপসবাবু। ২০০৮ সালে তিনি পঞ্চায়েত সমিতিতে কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। তবে জিততে পারেননি। ভাই মানস প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তাপসবাবু প্রচারে শুধু দলের কথা। বললেন, ‘‘৫ জুলাই ভাইয়ের বিয়ে। বাড়ির সকলে মিলে আমরা সে আয়োজনও করছি। যে যার নিজের ইচ্ছায় রাজনীতি করে। সেখানে হস্তক্ষেপ করা হয় না।” আর মানসবাবুর প্রতিক্রিয়া, “রাজনৈতিক প্রচার রাস্তাতেই শেষ করে আমরা বাড়ি ফিরি। বাড়িতে তার প্রবেশ নিষেধ। মানুষ যাঁকে চাইবেন তাঁকেই ভোট দেবেন। তা বলে সম্পর্ক নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হবে কেন।”
সুমিতাদেবী ভোটে দাঁড়ালেও এখনও মিটিং-মিছিল শুরু করেননি। বললেন, “দলের লোকেরাই সব করছেন। আমরা সবাই মিলে বাড়িতে সময় কাটাচ্ছি। হার-জিত তো আমাদের হাতে নেই।”
পরিবারে এতজন ভোটপ্রার্থী। কী করবেন?
প্রশ্নটা বোধহয় আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন বাবা জয়ন্তবাবু। তাঁর স্পষ্ট জবাব, “কে কোন দলে দাঁড়িয়েছে জানি না। আমি তৃণমূলকেই ভোট দেব। বড় বউমা তৃণমূলে দাঁড়িয়েছে বলেই নয়, দলকে ভালবাসি তাই।”
আর কী বলছেন, তমালি, সুমিতাদেবীদের শাশুড়ি?
জয়ন্তীদেবী অবশ্য সাবধানী। বললেন, “পারিবারিক বিষয়। কী করে বলি বলুন তো, কাকে ভোট দেব। এখন বলব এক, পরে হয়তো ভোট দেব অন্য কাউকে।”
যা শুনে কেউ কেউ বলছেন, পারিবারিক জোটটা ঠিক রাখতে হবে তো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.