ইংল্যান্ড থেকে জামাইকার দূরত্ব সম্ভবত সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশিই হবে। তবে রবিবারের ম্যাচটা দেখতে বসে মনে হল, সেটা ঠিক নয়। আকাশ ও পাতালের দূরত্ব যতটা, এটাও সে রকমই। অন্তত ২২ গজের বিচারে তো তা-ই দাঁড়ায়। কোথায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উইকেট আর কোথায় সাবাইনা পার্কের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে এসেই দেখেছিলাম ধোনিরা টুইট করছে আবহাওয়া নিয়ে। মেঘলা, স্যাঁতস্যাতে পরিবেশ থেকে এসে রোদ্দুর পেয়ে ওরা যথেষ্ট খুশি হয়েছিল। কিন্তু এ যা উইকেটে খেলা হচ্ছে, তাতে ধোনিদের খুশি খুশি ভাব আর থাকবে বলে মনে হয় না। |
কোথায় মার্শাল, গার্নারদের সময়ের ক্যারিবিয়ান উইকেট আর কোথায় এই উইকেট। সাবাইনা পার্কের উইকেটে বল হাঁটুর ওপর উঠছে না, বল পড়ে স্লো হয়ে যাচ্ছে, এ সব দেখলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটের জন্য কষ্ট হয়। এই উইকেট দেখে তো মনে হচ্ছে না নতুন করে তৈরি। পুরনো উইকেটই মেরামত করা হয়েছে। ফলে যা হওয়ার তা-ই হল। সবার কষ্ট। ব্যাটসম্যানদের যেমন রান তুলতে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে, বোলারদের বলে গতি আনতেও তেমন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। গ্যালারিতে বসে বা টিভির সামনে বসে এমন ম্যাড়মেড়ে ক্রিকেট দেখাও বেশ কষ্টকর। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ও ৫০ ওভারের ক্রিকেটের এই যুদ্ধের সময় এটা ৫০ ওভারের ক্রিকেটের পক্ষে খুব একটা ভাল বিজ্ঞাপন নয়।
এই উইকেটে যে ব্যাটিংটা করা দরকার, সেটা করে গেল রোহিত শর্মা (৮৯ বলে ৬০)। ছেলেটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে নিজেকে বদলে নিয়েছে। অনেক দায়িত্ব নিয়ে খেলছে। এ দিনও সেই দায়িত্ববোধটা দেখিয়ে গেল। |
|
|
কোহলির (ডান দিকে) উইকেটে ক্যারিবিয়ানদের উল্লাস। |
|
এমন উইকেটে তাড়াহুড়ো করতে গেলেই যে বিপদ, সেটা শিখর ধবনের বোঝা উচিত ছিল। ১০ বলে ১১ রান করে কেমার রোচের গুড লেংথ বল উড়িয়ে দিতে গিয়ে ওর হাতেই ধরা পড়ে গেল শিখর। কার্তিকও তো একই ভুল করল। রোহিত বরং অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এই উইকেটে সেটাই দরকার। রান পাচ্ছি না বলে ছটফট করতে থাকব, এটা তেমন উইকেট নয়। এখানে ধীর গতিতে খেলা ছাড়া উপায় নেই। বড় রান করার সুযোগের অপেক্ষায় থাকতেই হবে। আর সেই সুযোগ এলে সেটা কাজে লাগাতেই হবে। রোহিত ঠিক এই খেলাটাই খেলে গেল। শুধু একটা বল ভুল খেলল আর তাতেই আউট।
ভারত ২২৯ রানে থামল। শেষ দিকে রানটা আর একটু উঠত, ধোনি থেকে গেলে। তবে ব্যাট করার সময় ও আবার হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে গেল। যেটা মনে হল, ভারত অধিনায়ককে ওর স্বাভাবিক ব্যাটিংটা করতে দেয়নি। এমনকী পরে ফিল্ডিং করতেও নামল না ধোনি। এই চোট কিন্তু ওকে ভোগাতে পারে। |
ব্যাট করতে গিয়ে চোট। চিকিৎসা চলছে ধোনির। |
শুরুতেও ভারতের রান তোলার গতিটা বেশ কম ছিল। ১০ ওভারে ৩৯-২। ২০ ওভারে ৮০-২। ৩০ ওভারে ১১৩-৩ ভারতের ইনিংসের এমন গতি দেখে যাঁরা ঘাবড়ে গিয়েছেন, তাঁদের জন্য বলি, এর মধ্যে কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানদের বিশাল কোনও অপরাধ দেখতে পাচ্ছি না। আসলে উইকেট এতটাই মন্থর যে, বেশি রান তোলা বেশ কঠিন। আমি তো বলব, এই উইকেটে ভারতের স্কোরটা খুব খারাপ নয়। বিশেষ করে যেখানে ধোনির হাতে দু’জন ভাল স্পিনার আছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের শুরুতে সেটা আরও ভাল করে বোঝা গেল। স্পিনার আসার দরকার হয়নি, তার আগেই পাঁচ ওভারের মধ্যে ওদের স্কোর হয়ে যায় তিন উইকেটে ২৬। গেইলকে (১১) শুরুতে উমেশ যাদব আউট করার পর ফিরে গিয়েছে স্যামুয়েলস এবং স্মিথও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ৫০ ওভারে ২২৯-৭ (রোহিত ৬০, রায়না ৪৪, রোচ ২-৪১, বেস্ট ২-৪১)
রাত দু’টোর খবর: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২২ ওভারে ১০১-৩ (স্কোর অসম্পূর্ণ)
|