|
|
|
|
জনজীবন বিপর্যস্ত করে ভাসল হাওড়াও
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গত দশ বছরেও ছবিটা বদলায়নি। ভারী বৃষ্টি হলেই হাঁটু থেকে কোমর সমান জল দীর্ঘ ক্ষণ জমে থাকবে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। গঙ্গায় জোয়ার থাকলে জল আটকে থাকবে, ভাটার সময়ে জল নেমে যাবে। শনিবার রাত থেকে একটানা বৃষ্টিতে ফের সেই ছবিটাই দেখা গেল হাওড়া, বালির শহর-শহরতলি এবং পুর-পঞ্চায়েতের বহু এলাকায়।
দক্ষিণ ছাড়া উত্তর, পূর্ব ও মধ্য হাওড়ার একাধিক জায়গা দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন ছিল। অবস্থা সামাল দিতে দিনভর বিভিন্ন এলাকায় জল সরানোর কাজ তদারকি করেন খোদ হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়াল।
উত্তর হাওড়ার মৈনাকপাড়া, ঘোষপাড়া, বেলগাছিয়া, টিকিয়াপাড়া, একাধিক জায়গায় হাঁটুর উপর পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে যায়। বিভিন্ন বাড়ি, দোকানগুলিতে জল ঢুকে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দ্রুত জল সরাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আজও হল না। এক বাসিন্দা প্রিয়ঙ্কর দাস বলেন, “এই বৃষ্টিতে ঘরে জল ঢুকে গেল। সকাল থেকে বালতি করে জল বাইরে ফেলছি। এর পরেও যদি বৃষ্টি চলতে থাকে, তা হলে কী হবে বুঝতে পারছি না।” |
|
দুর্ভোগ:
টানা বৃষ্টিতে কলকাতার সঙ্গে ভাসল হাওড়াও।—নিজস্ব চিত্র। |
উপরন্তু উত্তর হাওড়ায় জে এন মুখার্জি রোড পাম্পিং স্টেশন দীর্ঘ দিন খারাপ থাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে জল সরানোর কাজ করা যায়নি বলে পুরসভা সূত্রে খবর। জয়সোয়াল হাসপাতালে চিকিত্সা পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি বিভাগেই এক কোমর জল। অ্যাম্বুল্যান্সে থেকে রোগীদের নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি। চিকিত্সকদেরও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
এর পাশাপাশি মধ্য হাওড়ার পঞ্চাননতলা, বেলিলিয়াস রোড, রামচরণ শেঠ রোড ও পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিতে জল আটকে থাকে বিকেল পর্যন্ত। পূর্ব হাওড়ায় সংযুক্ত এলাকা বিশেষত ৪৫ থেকে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতি বেহাল হয়ে পড়ে। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় হাওড়া পুর এলাকার ৩, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। একমাত্র দক্ষিণ হাওড়ায় জমা জল দ্রুত নেমেছে। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এ দিন সকাল থেকে মোট সাতটি পাম্প চালানো হয়েছে।
কিন্তু জল কেন নামতে দেরি হল? মমতাদেবীর জবাব, “সকাল থেকে গঙ্গায় জোয়ার থাকায় জল নামতে দেরি হয়েছে। হাওড়ার নিচু এলাকাগুলিতে এর জেরে দীর্ঘক্ষণ জল জমে থাকে।” তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণে কেএমডব্লিউএসএ এ দিন বিভিন্ন জায়গায় পাম্প চালায়নি। বেলগাছিয়া পাম্পিং স্টেশন এ দিন সকালে দীর্ঘক্ষণ বন্ধ ছিল। তিনি ওই পাম্পিং স্টেশনে গিয়ে চাপ দিতে তবে পাম্প চালু হয় বলে মমতাদেবীর দাবি। পাশাপাশি, রেল কর্তৃপক্ষ রানি ঝিল পরিষ্কার না করায় বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘক্ষণ জলমগ্ন হয়ে থাকে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, জোয়ার-ভাটাকে মাথায় রেখে জমা জল সরাতে বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তা করুক প্রশাসন। যদিও বিকল্প পরিকল্পনার বিষয়ে সদুত্তর মেলেনি। |
|
পানীয় জলের ভরসা প্রায় ডুবতে বসা পুরসভার কল।
রবিবার, হাওড়ায়। ছবি: রণজিত্ নন্দী। |
বৃষ্টিতে শুধু হাওড়াই নয়, বালিতেও বহু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বালি পুর এলাকার ৩৫টি ওয়ার্ডে কমবেশি জল জমে রয়েছে। এর মধ্যে মিরপাড়া, নেতাজী সুভাষ রোড, ভট্টনগর, গোশালা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জিটি রোডও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জিটি রোডে এমনিতেই খানা-খন্দে ভর্তি। তার উপর জল জমে যাওয়ায় রাস্তায় বাস চালানোর সমস্যা দেখা গিয়েছে। বাস মালিকেরা জানিয়েছেন, রাস্তায় যাত্রী কম থাকায় বাস নামানো হয়নি। এই অবস্থায় বাস চালালে বাস মালিকের ক্ষতি হবে।
বালির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জল কলোনি নামে এলাকাতে বছরভর জল জমার সমস্যা রয়েছে। শনিবার রাতভর বৃষ্টির জেরে এতটাই জল জমে যে, বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়াও লিলুয়ার রেল কোয়ার্টার এলাকা, পদ্মবাবু রোড, দিলসাই পাড়া, গোস্বামী পাড়া, বেলুড় স্টেশন রোড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘ ক্ষণ জল জমার কারণ কী? বালির বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের রেয়াজ আহমেদের অভিযোগ, “বালির নিকাশির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাই নেই।” বাসিন্দাদের অভিযোগ তেমনই। পুরসভা সূত্রের খবর, বালি এলাকার সমস্ত নিকাশিনালাগুলিই হয় পঞ্চায়েতের খালের সঙ্গে যুক্ত কিংবা কোনও ঝিলের সঙ্গে যুক্ত। এই খাল বা ঝিলগুলি সংস্কার হয়নি। ফলে রাস্তার জমা জল সরানো যায়নি। উল্টে জমা জল উঠে আসছে রাস্তায়। খামার পাড়ায় একাধিক অংশই জলের তলায় চলে গিয়েছে। রাস্তার জলের কলগুলিও চলে গিয়েছে জলের নীচে। পুরসভা বিভিন্ন জায়গায় জলের ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে। এই সমস্ত এলাকার প্রায় সব জায়গাতেই জলের লাইনের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। ফলে বৃষ্টির জল এবং খোঁড়া রাস্তা দুয়ে মিলে ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জবাবে পুরসভার চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “সমস্যা হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য যে হারে বৃষ্টি হয়েছে তাতে সেই জল ধরে রাখার ক্ষমতা আমাদের নিকাশি ব্যবস্থার নেই।”
বালির আটটি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে সাঁপুইপাড়া বসুকাঠি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রতি বর্ষায় যা জল জমে তা প্রায় ছ’মাস থাকে। কয়েক বছর আগে এই জমা জলে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই শিশু-সহ চার জনের। এ ছাড়াও আনন্দপাড়া চকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকারবাসীদের নৌকার সাহায্য নিতে হয়েছে। দুর্গাপুর অভয়নগর ১ ও ২ নম্বর এবং বাকড়া, শলক গ্রাম পঞ্চায়েতেরও একই হাল। বসুকাঠি ইএসআই হাসপাতালের একতলা জলের তলায়। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “শেওড়াপোতা ও সুতিকল খালের উপর ডোমজুড় বিধানসভার নিকাশি ব্যবস্থা নির্ভর করে। খাল সংস্কারের কাজও চলছে এবং অন্য দিকে পাম্প চালিয়ে জল বের করাও হচ্ছে। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য বন জেসিপি মেশিন কাজে লাগানো হয়েছে।” |
|
|
|
|
|