মাঝে-মধ্যে নাগাড়ে বৃষ্টি, তার পরেই আবার আর্দ্র পরিবেশ। আবহাওয়ার এই খামখেয়ালির ফলে আমন ধানের বীজতলায় ছত্রাক সৃষ্ট ঝলসা রোগ দেখা দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন চাষিরা। কৃষি দফতরে ফোন করেও অনেক চাষি এই সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কৃষিকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, শুধু খামখেয়ালি আবহাওয়া নয়, বীজ শোধন না করে বীজতলা তৈরি করাও এমন রোগের জন্য দায়ী। সংক্রমণের হাত থেকে গাছ বাঁচাতে বেশ কিছু ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। |
ধানচারার রং তামাটে হয়ে গিয়েছে।—নিজস্ব চিত্র। |
কালনা মহকুমার পাঁচটি ব্লক মিলিয়ে ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়। এর জন্য প্রয়োজন ছ’হাজার হেক্টর জমির বীজতলা। বীজতলা থেকে চারা নিয়ে গিয়ে কোনও জমিতে পোঁতা হয়। ভাল বৃষ্টি হলে বীজতলা তৈরি শুরু করেন চাষিরা। তবে এ বছর বীজতলায় ধানচারার সবুজ রং উধাও হয়ে তামাটে রং দেখা দিয়েছে বলে কালনার সুলতানপুর, বাঘনাপাড়া, ধাত্রীগ্রাম, নাদনঘাট, বগপুর-সহ বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকার চাষিদের দাবি। ফলে, চারাগাছের উপরের ভাগ শুকিয়ে ক্রমশ গোটা গাছই মরে যাচ্ছে।
সুলতানপুরের চাষি নুর মহম্মদের দাবি, “এ বার প্রথম থেকে ভাল বৃষ্টি হওয়ায় ভেবেছিলাম ভাল চারা তৈরি হবে। কিন্তু যে ভাবে ঝলসা রোগ ছড়াচ্ছে, তাতে ভাল চারা তো দূর, আবাদের সময়ে চারার আকাল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ ধাত্রীগ্রামের চাষি মন্টু ঘোষের কথায়, ‘‘বীজতলা তৈরি নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।”
মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ অবশ্য বলেন, “বীজ শোধন করা থাকলে ছত্রাকের সংক্রমণ তেমন হয় না। এ ক্ষেত্রে যারা শোধন করা বীজ দিয়ে বীজতলা তৈরি করেছেন সেখানে ঝলসা রোগ তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। চাষিদের বীজ শোধন করে বীজতলা তৈরি করা উচিত।” তবে কৃষি বিশেষজ্ঞেরা মেনে নেন, আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাও এই রোগ বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার কারণ। কখনও উষ্ণ, আর্দ্র আবহাওয়া। আবার কখনও প্রচণ্ড বৃষ্টির ফলে ঝলসা রোগ দ্রুত ছড়াতে পারে। চাষিদের দাবি, যেখানে শুকনো মাটিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে সেখানে ঝলসা রোগ বেশি লক্ষ করা যায়।
ঝলসা রোগ রুখতে কৃষিকর্তারা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, প্রথমে আক্রান্ত বীজতলা থেকে জল বের করে দিতে হবে। এর পরে ট্রাইসাইক্লাজোল প্রতি লিটার জলে ০.৭ মিলিগ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম প্রতি লিটার জলে গুলে এক গ্রাম স্প্রে করলে চাষিরা ভাল ফল পাবেন। এ ছাড়া হেক্সাকোনাজল এবং জিঙ্কের মিশ্রণ জলে গুলে স্প্রে করলেও ভাল ফল পাওয়া যাবে। পার্থবাবু জানান, এই ওষুধগুলির সঙ্গে আঠা মিশিয়ে স্প্রে করলেও উপকৃত হবেন চাষিরা। |