চটক দেওয়া কয়েক পা... |
নতুন প্রজন্মের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। লেগিংস। সেখানেও ডিজাইনারদের কারিকুরি। লিখছেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়
|
ইস্ত্রি করার বালাই নেই, পরে আরাম |
সে দিন মেট্রোয় ধাঁ করে চোখ টেনে নিল উল্টো দিকে বসা বছর বাইশের তরুণীটি। পরনে সাদামাঠা কুর্তি আর লেগিংস। হাল্কা সবুজ লেগিংসে নকশা করা। দেখার মতো। প্রথমে ডিজাইনার প্যান্টটা দেখে মালুমই হয়নি সেটি লেগিংস। পরে একটু নজর করে দেখাতে বোঝা গেল লেগিংসের ওপরই নকশা করা।
এমনিতেই লেগিংস এখন দারুণ রকম ইন-ফ্যাশন। কলেজ-অফিস বা ছোটখাটো পার্টি— সবেতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রংবেরঙের লেগিংস। শুরুটা কিন্তু এমন ছিল না। সে সময় লেগিংসের নামে অনেকেই ঠোঁট উল্টোত। নেহাত গেঞ্জি প্যান্ট বই তো নয়। ওতে আবার ফ্যাশন কী! আর চেহারা একটু ভারীর দিকে হলে তো লেগিংসের কথা ভাবাই যায় না। শরীরের খাঁজ পরিষ্কার বোঝা যায়। লেগিংস তাই না-পসন্দ।
কিন্তু সে সব বদনাম ঘুচিয়ে আরামদায়ক আর সহজে মেনটেন করা যায়— এই দুই ইউএসপি’কে সম্বল করে লেগিংস আজকের প্রজন্মের মন জয় করে ফেলেছে। ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল যেমন বলছিলেন, ‘‘সুতির চুড়িদার বেশ ঝক্কির। বসলে টান পড়ে। দড়িতে কোমরে দাগ পড়ে যায়। সে সব দিক দিয়ে লেগিংস অনেক সুবিধের।” ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্তের মতে, “এখন সব্বাই ফিটিংসের দিকে ঝুঁকছেন। স্ট্রেচেবল, ইস্ত্রি করার ঝামেলা নেই এই সব কারণে লেগিংস খুব হিট করে গিয়েছে।” |
|
অ্যাবস্ট্র্যাক্ট নকশা আর ফুলবাহার |
সেই লেগিংসেও এ বার ফ্যাশনের ছোঁয়া। এক রঙের একঘেয়েমি ছাড়িয়ে লেগিংসে ফুটে উঠছে রকমারি নকশা। ফ্লোরাল প্রিন্ট, সিকোয়েন্স বা রকমারি জ্যামিতিক নকশা। কোনও লেগিংসের ডিজাইন ফিরিয়ে আনছে রেট্রো লুক। অগ্নিমিত্রা নিয়ে এসেছেন ডিজাইনার লেগিংসের নতুন ব্র্যান্ড ‘ফিমোরা’। তিনি জানালেন, লেপার্ড প্রিন্ট, টাইগার প্রিন্ট, বা রকমারি পোলকা ডটসের নকশার প্রিন্ট দিয়ে তৈরি করেছেন ডিজাইনার লেগিংসের নতুন সম্ভার। রয়েছে অ্যাবস্ট্রাক্ট প্রিন্ট আর বাঁধনি প্রিন্টও। ডিজাইনার লেগিংসের কোনওটা এথিনিক লুকের আবার কোনওটা ইন্দো-ওয়েস্টার্ন লুকের।
অভিষেক দত্ত জানালেন, তাঁর কালেকশনে রয়েছে কনট্রাস্ট কালার দিয়ে ডিজাইন করা লেগিংস। একটু অন্য রকম চাইলে রয়েছে ফটোগ্রাফি দিয়ে ডিজিটাল প্রিন্ট করা লেগিংসের সম্ভার বা লেজার কাটের ডিজাইনার লেগিংস অথবা লেদার মোটিফ দিয়ে ডিজাইন করা লেগিংস। ওপরে থাকতে পারে মেটালের নকশা। এগুলিতে ফুটে উঠবে পাঙ্ক লুক। বিয়ে বাড়ি বা পার্টিতে খুব জমকালো কুর্তির সঙ্গে পরার জন্য পাবেন সরোভস্কি স্টোনের নকশা করা ডিজাইনার লেগিংস। রোজকার অফিস বা ছোটখাটো পার্টির জন্যই হোক বা জমকালো কোনও অনুষ্ঠান, স্মার্ট লুকের লেগিংস দিয়েই তৈরি করে নিতে পারেন আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট। |
|
টিপস
• প্রিন্টেড লেগিংসের সঙ্গে সলিড রংয়ের টপ বা কুর্তি
• লেগিংস কখনওই মেশিনে ধোবেন না
• দাম শুরু ২০০ টাকা থেকে
• ডিজাইনার লেগিংসের সঙ্গে খুব জমকালো জুতো পরবেন না |
|
|
শর্ট কুর্তির সঙ্গে ফুলেল লেগিংস |
সোজা কথায়, লেগিংস নিয়ে চলছে এক্সপেরিমেন্ট। চমক থাকছে লেগিংসের রঙেও। পাওয়া যাচ্ছে টমেটো লাল, সি-গ্রিন, ফুশিয়া বা রকমারি ফ্লুরোসেন্ট রঙের লেগিংস। বেসরকারি সংস্থার চাকুরে অলিভিয়া সেন জানালেন, “সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে রঙের মিল হওয়াটা খুব জরুরি। কিন্তু ডিজাইনার লেগিংস হলে তো কথাই নেই। একটা লেগিংস দিয়েই নানা রকমের কুর্তি পরা যায়।”
সদ্য কলেজে ঢুকেছেন সল্টলেকের অনুষ্কা চক্রবর্তী। ওঁর কাছে গরম মানে শুধুই লেগিংস। বলছিলেন “কলেজে একই ড্রেস বারবার পরার প্রশ্নই ওঠে না। তাই লেগিংস আর কুর্তি ভরসা। পকেটমানি জমিয়ে বেশ কিছু অফবিট রং কিনে ফেলেছি। রয়েছে কিছু ডিজাইনার লেগিংসও। মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা যাবে।’’ আর আইটি চাকুরে তন্নিষ্ঠার কাছে “সাতসকালে অফিসে যাওয়ার হুড়োহুড়ির সময় লেগিংস জাস্ট গলিয়ে নিলেই হল। ফিটিংসের ঝামেলা নেই। লেগিংস বিন্দাস।’’ আজকের তরুণীদের মনের এত কাছাকাছি আসতে পেরেছে বলেই ফুটপাত থেকে শপিংমল কাঁপাচ্ছে নানা রঙের ও ডিজাইনার লেগিংস।
অগ্নিমিত্রা বলছিলেন, “সম্প্রতি বিদেশে গিয়ে দেখলাম মোটা কাপড়ের লেগিংস পড়ার ভীষণ চল হয়েছে। তার সঙ্গে ওঁরা পরছেন ছোট টপ। কিন্তু আমাদের এখানে লেগিংসের সঙ্গে লম্বা কুর্তিরই চল বেশি।” কলকাতার ডিজাইনারদের পরামশর্, ডিজাইনার লেগিংস পড়লে অবশ্যই সলিড কালারের কুর্তি পরুন।
সঙ্গে থাকুক হালকা কিছু অ্যাকসেসরিজ। কারণ সেখানে লেগিংসটাই আসল। সেটাই চোখ টানবে। তাই পুরনো হয়ে গেছে বলে কোনও প্রিয় কুর্তিকে বাতিলের দলে ফেলে দিলে, অনায়াসে তাকে আবার ওয়ার্ডরোবে তুলে আনতে পারেন, ডিজাইনার লেগিংসের ভরসায়। |
|