গত ৬ দিনে ৩ জনের মৃত্যু হল ঢেকলাপাড়া চা বাগানে। টানা দু’মাস ধরে সরকারি অনুদানের টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকদের ঘরে ঘরে চরম দুরবস্থা দেখা দিয়েছে বলে বাগানের বাসিন্দাদের অভিযোগ। উপরন্তু, বাগানের হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবারও হালও ভাল নয় বলে কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছেন। গত সোমবার বীরপাড়া হাসপাতালে সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন ফুলমণি বেদিয়ার (৩৫) মৃত্যু হয়। তাঁর স্বামী শঙ্করবাবুর দাবি, দারিদ্রের কারণে তাঁর স্ত্রী অপুষ্টিতে ভুগছিলেন।
গত মঙ্গলবার ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বীরপাড়া হাসপাতালে বিশু তাঁতি (৪৮) নামে এক বাগান শ্রমিকের মৃত্যু হয়। শুক্রবার শেষ রাতে বীরপাড়া হাসপাতালে মারা যান আর এক শ্রমিক গোপাল কুমহার (৫০)। বেশ কিছু দিন ধরে তাঁরা নানান রোগে ভুগছিলেন। বুধবার তাঁকে বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের যুগ্ম শ্রম আধিকারিক মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “বাগান চালুর বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। আমাদের পক্ষে চালু করা সম্ভব নয়। তবে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন হতে পারে বলে শ্রমিকদের ভাতা বাবদ প্রদেয় টাকা আটকে রয়েছে। তা আমরা পঞ্চায়েত ভোটের পরে মিটিয়ে দেব।”
সপ্তাহে মাত্র এক দিন ওই বাগানে চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন শ্রমিকরা। সারা দিনে শিবিরটি দু’ঘণ্টার বেশি বসছে না বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, “বিশু তাঁতির পরিবারকে বলেছিলাম ওঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে। সে সময়ে ভর্তি করলে হয়তো ওই বাগান শ্রমিককে বাঁচানো যেত।”
২০০২ সালে সালে ডুয়ার্সের বীরপাড়া এলাকার ঢেকলাপাড়া চা বাগান বন্ধ হওয়ার পরে বাগানের ৬০৪ জন শ্রমিক পরিবার চরম দুর্দশায় পড়েন। বাগানে কাজ না থাকায় বেকারত্ব ও অর্থকষ্টে ধুঁকতে থাকেন। গোটা বাগানের শ্রমিক পরিবার সে সময় থেকে অপুষ্টজনিত রোগ সহ বিভিন্ন অসুস্থ হন। ওই বাগানের শতাধিক মানুষ মারা যান। ২০০৫ সালে কয়েক মাসের জন্য বাগানটি চালু হলেও ফের তা বন্ধ হয়ে যায়। গত বছর পর পর কয়েক জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাগানে ত্রাণ বিতরণ করে। চিকিৎসা পরিষেবা সহ ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হয়। ১১৬ জনকে সহায় প্রকল্পের মাধ্যমে এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। শ্রমিকরা জানান, বন্ধ বাগানের মাসিক দেড় হাজার টাকা করে রাজ্য সরকার অনুদান দেয়। এপ্রিল মাস থেকে কেউ অনুদান পাচ্ছেন না বলে শ্রমিকরা জানান। |