টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই টাকা খরচের ক্ষেত্রেই ২০১১-১২ সালে কয়েক লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালে।
গত বছর ২৩ অগস্ট দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে ইএসআই-এর বিশেষ তদন্তকারী দল (মেমো নম্বর ডিইএসআই/৪এম-১৫৩-২০১২)। এতে ছিলেন ইএসআই ডিরেক্টরেটের জয়েন্ট ডিরেক্টর (অডিট) তাপস চৌধুরী, ইএসআই (এমবি)-র ডেপুটি ডিরেক্টর শ্যামল সেন এবং মানিকতলা হাসপাতালের বর্তমান সুপার ময়ূখ রায়। এক মাসের মধ্যে তাঁরা রিপোর্ট জমা দেন। তাতে বলা হয়েছিল ‘হাসপাতালে কেনাকাটা, নির্মাণকার্য, দরপত্র প্রক্রিয়া ও ঠিকাদারদের বিলের পাওনা মেটানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এতে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
কিন্তু শ্রম দফতরের কর্তারাই স্বীকার করেছেন, দফতরের এবং ইএসআই হাসপাতালের অফিসারদের একটা লবি চাইছিল না, বিষয়টি বাইরে আসুক। এর জেরে প্রায় আট মাস ওই তদন্ত রিপোর্ট অন্তরালে চলে যায়। এই মাসে ফাইলটি নিয়ে ফের নাড়াচাড়া শুরু হয়। পরবর্তী তদন্তের জন্য ফাইল ভিজিল্যান্স কমিশনে পাঠিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। |
রাজ্যের ১৩টি ইএসআই হাসপাতালের এক-একটির জন্য প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি টাকা পাঠায় ইএসআই কর্পোরেশন। এই টাকা মূলত নির্মাণ, মেরামতে খরচ হয়। কিছু দিন ধরেই অভিযোগ আসছিল, কিছু হাসপাতালে ওই টাকা হাসপাতালের কর্মী-অফিসার এবং ঠিকাদারদের একাংশ লুটেপুটে খাচ্ছেন। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রীর বক্তব্য, “হাসপাতালে টাকা কারা নয়ছয় করছে, আমরা জানি। তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ সরকারি টাকায় দুর্নীতির সাহস না পায়।”
তদন্তকারীরা ইএসআই ডিরেক্টরের কাছে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, তাতেই বলা হয়েছে ২০১১ সালে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নয়ছয় হয়েছে। তার মধ্যে ৩০ লক্ষের গরমিল পাওয়া গিয়েছে শুধু ঠিকাদারদের বিলেই।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাসপাতাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির সিদ্ধান্ত এবং ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই ২০১১ সালে হাসপাতালে ১২টি এসি মেশিন কেনা হয়েছে। কোনও স্টক সার্টিফিকেট এবং ভাউচার ছাড়াই এর জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। স্টক রেজিস্ট্রারে এই কেনাকাটার কথা নথিভুক্ত করাও হয়নি।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বিস্তর গরমিল ধরা পড়েছে নির্মাণ ও মেরামতির কাজে ঠিকাদারদের টাকা দেওয়ার ব্যাপারে। কোনও ক্যাশবুক মেলেনি। ঠিকাদারদের কাজের বরাত দেওয়ার কাগজ খুঁজে পাওয়া যায়নি, আদৌ হাসপাতাল কমিটি সেই কাজের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কি না, সেই প্রমাণও মেলেনি। কাজ ঠিকমতো হয়েছিল কিনা তার প্রমাণস্বরূপ কোনও কাগজও মেলেনি।
হাসপাতালের একতলায় ডিসপেন্সারির উপরের তলায় বেশ কয়েক লক্ষ টাকার নির্মাণকাজ হয়েছিল। বলা হয়, শঙ্কর নামে এক ঠিকাদার কাজটি করেছেন এবং তাঁকে টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তদন্তে ওই নামে কোনও ঠিকাদারের অস্তিত্বই মেলেনি। জিনিসপত্র কেনা ও নির্মাণকাজের দরপত্রের ক্ষেত্রে কোটেশন কবে জমা পড়েছে তার তারিখ নেই, দরপত্র খোলার দিনও বোঝা যাচ্ছে না, এমনকী দরপত্র বাছাই কমিটি তৈরির সরকারি নির্দেশও পাওয়া যায়নি।
২০১১-১২ সালের ওই সময়ে মানিকতলা হাসপাতালের সুপারের দায়িত্বে ছিলেন উৎপল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অবশ্য দাবি, “সব নিয়ম মেনে হয়েছে, সব কাগজ আছে। আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত হচ্ছে। রাজ্যের ১৩টি ইএসআই হাসপাতালে খরচ-খরচা নিয়ে কোনও দিন কোনও অডিট কেন করায়নি সরকার? আমি চাকরিতে থাকাকালীন কোনও ত্রুটি পায়নি। অবসর নেওয়ার পরে হেনস্থা করতে এ সব হচ্ছে।” |