ঢেকলাপাড়া চা বাগানের ১৫ জন অসুস্থ বাসিন্দাকে শুক্রবার ভর্তি করানো হল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন পরিবারের আরও আট জন সদস্য। সরকারি সূত্রের খবর, তাঁদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা’র দায়িত্ব স্বাস্থ্য দফতর নিয়েছে। ১০ বছর ধরে বন্ধ ঢেকলাপাড়া বাগানের অসুস্থদের এই প্রথম হাসপাতালে ভর্তি করানোর ঘটনা ঘটল। জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “মেডিক্যাল কলেজে ১৫ জনের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।” শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢেকলাপাড়া বন্ধ চা বাগানের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। বাগানের ফ্যাক্টরি লাইনের বাসিন্দা মৃত ওই প্রাক্তন চা শ্রমিকের নাম রাজেন্দ্র যাদব (৬৩)। বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি নানা রোগে ভুগছিলেন।
চা বাগান সূত্রের খবর, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশ অপুষ্টির রোগে আক্রান্ত। ১০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকা ঢেকলাপাড়া বাগানে শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছেন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারের মন্ত্রীরা বাগানে গেলেও পরিস্থিতি খুব একটা উন্নতি হয়নি বলে শ্রমিকেরা অভিযোগ করে আসছিলেন। বাগানের শ্রমিকেরা জানান, বাগানের অসুস্থ রোগীদের ১০ কিমি দূরে বীরপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হচ্ছিল। ধার দেনা করে শ্রমিকেরা পরিবারের অসুস্থদের চিকিৎসা কোনও মত করাচ্ছিলেন।
গত অক্টোবর মাসে বাগানে গিয়ে গুরুতর অসুস্থদের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব নির্দেশ দেন। নভেম্বরে বাগানের অভাবগ্রস্ত, সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত ১৫ জন প্রবীণ চা শ্রমিক স্বেচ্ছা মৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনও করেন। অস্বস্তিতে পড়ে রাজ্য সরকার। সে সময় তড়িঘড়ি শুরু করা হয় ১০০ দিনের কাজ সহ কয়েকটি প্রকল্প। তবে তা ঠিকঠাক চলছে না বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। নদীতে পাথর ভেঙেই কোনওমতে সংসার চালাতে হচ্ছে শ্রমিক পরিবারগুলিতে।
|
খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কয়েকজন। আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গ্রামবাসীদের মধ্যেও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শুক্রবার শালবনি থানার সিজুয়ায় পৌঁছল মেডিক্যাল টিম। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্র বলেন, “কেউ অসুস্থ হননি। সকলেই স্বাভাবিক রয়েছেন। তবে গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। মেডিক্যাল টিমও পাঠানো হয়েছে।” স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায় দু’সপ্তাহ আগে গ্রামের একটি কুকুর একটি গরুকে কামড়ে দেয়। কয়েকদিন আগে গরুটি মারা যায়। পরে একাংশ গ্রামবাসী ওই গরুর মাংস খান। এরপরেই কয়েকজন অসুস্থ বোধ করেন। পরিস্থিতি দেখে শুক্রবার শালবনির বিএমওএইচ স্বদেশরঞ্জন মাইতির নেতৃত্বে একটি মেডিক্যাল টিম গ্রামে পৌঁছয়। গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। বিএমওএইচ বলেন, “আতঙ্ক থেকেই এই পরিস্থিতি। এখন সব স্বাভাবিক।” |