পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়ছে। সাক্ষাতের সময় চেয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে, সাক্ষাৎকার দিতে কেউ হাজির হচ্ছেন না। হওয়ার কথাও নয়। কারণ, নামটাই যে ভুয়ো!
কলকাতা শহরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (পিএসকে) থেকে প্রতি দিন গড়ে ১২০০ আবেদনকারীকে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পাসপোর্ট দেওয়ার কথা। কিন্তু দিনের শেষে দেখা যায়, পাসপোর্ট পাচ্ছেন বড়জোর ৮৫০ জন। তা হলে বাকিরা গেলেন কোথায়?
এই রহস্যের তদন্তে নেমেই ভুয়ো আবেদনকারীরদের কথা জানতে পারেন পাসপোর্ট কর্তারা। এই ভুয়ো নামেই প্রতিদিনের সাক্ষাৎকারের ‘কোটা’ পূরণ হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত আবেদনকারীরা সাক্ষাতের সুযোগই পাচ্ছেন না, পাসপোর্ট তো দূরের কথা।
কারা তৈরি করছে এই ভুয়ো আবেদনকারী?
রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার আর শিবকুমারের কথায়, “দালালরা।” তাঁর অভিযোগ, “ভুয়ো নামে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে পিএসকে থেকে সাক্ষাতের সময় নিয়ে নিচ্ছে দালালরা। স্বভাবতই সাক্ষাৎকারের জন্য নির্দিষ্ট দিনে কেউ দেখা করতে আসছে না। তাই ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিদিন ১২০০ পাসপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে না। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত আবেদনকারীরা।”
প্রকৃত আবেদনকারীদের বাঁচাতে তাই এ বার নতুন ব্যবস্থা চালু করছে পাসপোর্ট দফতর। ঠিক হয়েছে, পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে এ বার অন-লাইন-এ টাকা জমা দিতে হবে। তার পরেই মিলবে সাক্ষাতের সুযোগ। রাজ্যে অন-লাইন টাকা দেওয়ার এই ব্যবস্থা ৫ জুলাই থেকে শুরু হবে। ডিসেম্বর থেকেই দেশের কয়েকটি কেন্দ্রে এই ব্যবস্থা চালু করেছিল বিদেশ মন্ত্রক।
কিন্তু ভুয়ো আবেদন করে কী লাভ দালালদের?
পাসপোর্ট অফিসের বক্তব্য, দালালরা দৈনিক সাক্ষাতের নির্দিষ্ট কোটা দ্রুত পূরণ করার জন্য উচ্চ গতিসম্পন্ন (হাই স্পিড) ইন্টারনেট সংযোগের (সাধারণ মানুষ যা ব্যবহার করেন না) সাহায্য নিচ্ছে। শিবকুমারের কথায়, “এর ফলে আসল আবেদনকারী নিজে চেষ্টা করে কিছুতেই সাক্ষাতের সময় পাচ্ছেন না। টানা কয়েক দিন চেষ্টা করে হতাশ হয়ে অবশেষে তাঁরা দালালদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
তখন পাসপোর্ট করে দেওয়ার জন্য মোটা টাকা নিচ্ছে দালালরা। এটাই তাদের লাভ।”
পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা ও বহরমপুরে দু’টি পিএসকে রয়েছে। পাসপোর্ট পেতে এখন সেখানেই আবেদন করতে হয়। নতুন পাসপোর্ট অথবা পুরনো পাসপোর্ট নবীকরণ সব আবেদনই অন-লাইনে করা যায়। তার ভিত্তিতে অন-লাইনেই পিএসকে থেকে আবেদনাকারীকে সাক্ষাতের দিনক্ষণ বলে দেওয়া হয়। সে দিনই পিএসকে-তে গিয়ে টাকা জমা দিতে হয়। সেখানেই আবেদনকারীর ছবি তুলে, আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। এই ব্যবস্থাটা দেখাশোনা করে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস)।
পাসপোর্ট কর্তাদের দাবি, অন-লাইনে টাকা জমা দিতে হলে দালালরা আর ভুয়ো আবেদন করতে পারবে না। কারণ, অন-লাইনে ভুয়ো নামে টাকা জমা দিয়ে সাক্ষাতের কোটা পূরণ করে তাদের কোনও লাভ নেই। |