বিশ্ব ফুটবলে এল ক্লাসিকো: সাম্বার দেশ থেকে
এ বারও কি সেই ক্লিপিংস দেখাবেন স্কোলারি
ল্পটা শুনেছিলাম, এডমিলসনের মুখে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর।
যুবভারতীতে ব্রাজিল মাস্টার্সের হয়ে সবে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলে ফিরে স্নান করে ফ্রেশ হচ্ছি। দুঙ্গা-হিগুয়েতাদের সঙ্গে খেলার ঘোরটা তখনও কাটেনি। আমার পাশের লকারটা ব্যবহার করছিল এডমিলসন। মানে, ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের স্টপার এডমিলসন। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা কী ভাবে ওই বিশ্বকাপটা জিতেছিলে একটু বলবে? যত দূর জানি, টিমের অবস্থা তো খুব খারাপ ছিল।
উত্তরে স্কোলারির অদ্ভুত একটা ভিডিও-র কথা শুনলাম। স্কোলারি নাকি প্রত্যেক ম্যাচের আগে একটা ভিডিও ক্লিপিংস দেখাতেন। যেখানে থাকত দুঃস্থ ব্রাজিলীয়দের অর্ধভুক্ত শৈশব। ঠিকমতো চিকিৎসা না পাওয়া মরণাপন্ন কয়েক জন ব্রাজিলবাসী। তাঁরা রোনাল্ডোদের নাম করে কাকুতি-মিনতি করত, ‘বিশ্বকাপটা দয়া করে জিতে এসো। তা হলে মরার আগে এত দুঃখের মধ্যেও একটু হাসতে পারব।”
জানি না, ও রকম অদ্ভুত কোনও টোটকা কনফেড কাপ ফাইনালের জন্য স্কোলারি বরাদ্দ রাখবেন কি না। কে জানে, থাকতেও পারে। এই মুহূর্তে আমি রিও-তে। রবিবার আমার এজেন্ট-বন্ধু মার্সেলোর সঙ্গে মারাকানায় যাব ফাইনালটা দেখতে। আর স্কোলারিকে যতটুকু চিনি, দেল বস্কির প্রচুর খাটতে হবে ওঁকে ঘায়েল করার জন্য। মনে রাখবেন, আমরা পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর আঁতে একবার লাগলে, আমাদের চেয়ে বিপজ্জনকও কেউ হয় না।
নেইমার বনাম কাসিয়াস লড়াই গড়ে দিতে পারে ফাইনালের ভাগ্য। ছবি: এএফপি
মন বলছে, ম্যাচটা ব্রাজিলই জিতবে। আর জেতাটাও খুব দরকার আমাদের দেশের জন্য। কী অবস্থা যে হয়েছে ব্রাজিলের, চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আর্থিক দুর্নীতির প্রতিবাদে চর্তুদিক জ্বলছে। এই অবস্থায় কনফেড কাপ জিতলে মানসিক শান্তি তবু কিছুটা ফিরবে। প্রতিপক্ষের নামটা ভাবুন। স্পেন! এক কথায়, ‘দ্য ম্যাচ’। গলা কাদের জন্য ফাটাবো, বলার অপেক্ষা রাখে না। আরও বেশি করে ফাটাবো নেইমারের জন্য। কেন? আরে, ও তো আমার পাড়ার ছেলে! সাও পাওলোর।
শনিবার সন্ধেয় ও’গ্লোবো-র সম্প্রচারে দেখলাম দেশের প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন পাশে দাঁড়ানোর। একই সঙ্গে দেখলাম ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটারও বিশ্বকাপের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের ঘোষণা করেছেন। ভাল। তবে আরও একটা ব্যাপার ভাবলে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছি। রবিবার মারাকানায় আমরা জিতলেই কনফেডারেশনে টেট্রা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাব! স্পেন আমাদের ছেড়ে দেবে না জানি। কেউ বলছেন, পাসের বিস্ফোরণ ঘটাবে ওরা। কেউ বলছেন, দেল বস্কি ইউরো ফাইনালের মতো ‘ফলস নাইন’ বার করবেন কনফেড ফাইনালেও। সব ঠিক আছে। কিন্তু মাথায় রাখা ভাল, আমাদের কোচের নামও লুই ফিলিপ স্কোলারি। পাল্টা ওষুধ কী ভাবে দিতে হয়, উনিও জানেন।
আর কথাটা আবেগ নয়, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। স্কোলারির পাল্টা স্ট্র্যাটেজি চালু হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে। শুনছি ওদের জাভি আলোন্সোর নাকি চোট। ও যদি না খেলে তা হলে স্পেনের অঙ্ক বদলাবে। সেক্ষেত্রে অ্যাডভান্টেজ ব্রাজিল। তবে উরুগুয়ে ম্যাচে প্রেসিং ফুটবলের সামনে কিন্তু স্কোলারি-পাহিরার ৪-২-৩-১ ছক একটু নড়বড়ে দেখিয়েছে। আশা করি সেই ভুল স্পেন ম্যাচে হবে না।
কাসিয়াস বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলকিপার। সবাই ওকে নিজের দলে চাইবে। কিন্তু রবিবার আমি ওর বিরুদ্ধে গোল করার সম্মানটা পেতে চাই। ফাইনালটা দুটো ঐতিহাসিক টিমের লড়াই হতে যাচ্ছে। আশা করব ম্যাচটা সবাই উপভোগ করবে, আর ব্রাজিল জিতে শেষ করবে।
নেইমার
গত পাঁচ-ছ’বছরে স্পেন সব ট্রফি জিতেছে। কিন্তু আমরা আমাদের নিজস্ব খেলাটাই খেলব। ওদের সম্মান করব, কিন্তু নিজেদের ক্ষমতাটাও দেখাব।
স্কোলারি
স্পেন খুব উন্নত মানের টেকনিক্যাল দল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর প্রচণ্ড ধারাবাহিক। তবে আমরাও চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি। খুঁটিনাটি ব্যপারগুলোই ফাইনালের ভাগ্য ঠিক করে দেবে।
থিয়াগো সিলভা
ইতালিকে হারানোই এত কঠিন ছিল তো ভেবে দেখুন ওদের ঘরের মাঠে ব্রাজিলকে হারানো কতটা কঠিন হতে চলেছে!
ব্রাজিল-স্পেন ফাইনালটা সবারই প্রত্যাশিত ছিল। দুটো টিমেরই ফাইনাল খেলাটা প্রাপ্য। ব্রাজিলের সবচেয়ে ঐতিহাসিক স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে খেলা এর চেয়ে দুর্দান্ত আর কী হতে পারে?
কাসিয়াস
মারাকানায় নিজস্ব ফুটবলের ধরন দেখাতে চাইব আমরা। হ্যাঁ আমরা ক্লান্ত, কিন্তু ব্রাজিলের বিরুদ্ধে এই ফাইনাল খেলাটা আমাদের স্বপ্ন ছিল।
দেল বস্কি
ম্যাচটায় অনেকগুলো ব্যক্তিগত ডুয়েলও থাকবে। যেমন নেইমার বনাম আর্বেলোয়া, হাল্ক বনাম ইয়োর্দি আলবা, ফলস নাইন (যদি এই চমক থাকে, থাকবে বলেই মনে হচ্ছে) বনাম থিয়াগো সিলভাদের রক্ষণ, গুস্তাভো-পউলিনহোর ডাবল পিভট বনাম ইনিয়েস্তাদের প্রেসিং ফুটবল। ২৯ ম্যাচ অপরাজিত দেল বস্কির দল। রবিবার সেই স্প্যানিশ আর্মাডাকে কি থামাতে পারবে নেইমারদের সাম্বা ফুটবল? আমার বিশ্বাস, পারবে। কারণটা সেই স্কোলারি এবং আমাদের স্কিল। ইতালির বিখ্যাত ডিফেন্স কিন্তু সামলাতে পারেনি।
শনিবার রাতে রিও-র রাস্তায় বেরিয়ে দেখছিলাম, আগাম উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া চলছে। পাবে, রেস্তোরাঁয় জায়ান্ট স্ক্রিন বসানোর কাজ শেষ। মার্সেলো আবার মজা করে বলল, এটা নাকি ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের রাতের রিহার্সাল। মন্দ বলেনি। এটা ঠিক যে আমাদের দেশে দু’টো ব্রাজিল বাস করে। এক দলের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আর এক দল মাস শেষে মায়ামি যায় শপিং করতে। কিন্তু তবু যেন মনে হচ্ছে রবিবার দুই ব্রাজিল মিলে যাবে। মিলিয়ে দেবেন স্কোলারি। বা নেইমার। লুলা বা দিলমা রুসেফের মতো রাজনীতিবিদরা নন।
আজ অন্তত আমাদের দেশে ফুটবল আগে। প্রতিবাদ পরে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.