আজ রাত ৩:৩০ স্টার স্পোর্টসে
শাসক স্পেনকে দেখে গর্জন সাম্বার
বেছে বেছে প্রশ্নটার সামনে পড়তে হয়েছিল স্বয়ং মারিও জাগালোকে।
সময় পাল্টেছে, প্রজন্ম পাল্টেছে। কিন্তু কোথাও গিয়ে কি আপনি পেলের ’৭০-এর ব্রাজিলের সঙ্গে আজকের স্পেনের মিল পান? দু’টো টিমই প্রবল পরাক্রমী, চূড়ান্ত ঐশ্বর্যশালী, কোনও দিন কেউ দুঃস্বপ্নেও সাহস দেখায়নি সেই সাম্রাজ্যে আঁচড় কাটার। আজ যদি দু’টো টিমকে নব্বই মিনিটের একটা ম্যাচ খেলতে হত, রেজাল্টটা বলতে পারেন?
উত্তর দিতে বেশি সময় খরচ করেননি জাগালো। তাঁর ছোট্ট অথচ অর্থপূর্ণ জবাব, “আজ যেমন স্পেন খেলে, আমরাও ঠিক তেমন খেলতাম। গতিটা শুধু আলাদা।” বলে সংযোজন, “তবে কি জানেন, পেলে-টোস্টাওদের বলের উপর নিয়ন্ত্রণটা মারাত্মক ছিল। ওরা জানত, বল কী ভাবে সব সময় নিজের কাছে রাখতে হয়। স্পেনের সেটা নেই বলছি না। আছে।”
মারিও জাগালোর পরিচয় তিনি ’৭০-এর বিশ্বজয়ী ব্রাজিল টিমের কোচ এবং ’৫৮ ও ’৬২-র বিশ্বজয়ী ব্রাজিলের সদস্য।
বিবিসি-কে দেওয়া জাগালোর সাক্ষাৎকারটা দিন কয়েক আগের। যার পুরোটা পড়লে আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে, ঠিক কী মনোভাব নিয়ে ইকের কাসিয়াসদের স্বাগত জানাবে রবিবারের মারাকানা। আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে, নব্য বিশ্বজয়ীরা তাদের মাটি থেকে কনফেডারেশনস কাপ ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্পর্ধা দেখানোয় কতটা ক্ষেপে রয়েছে বিশ্ব ফুটবলের অবিসংবাদী অধীশ্বর দেশ।
বনাম ২২
তবু ধোঁয়াশা? শুনুন কার্লোস আলবার্তো পাহিরা কী বলেছেন। আরও টাটকা মন্তব্য। জাগালোর মতো ভদ্রতার ধার তিনি ধারেন না, অক্লেশে বলে ফেলতে পারেন, “স্পেন ফাইনালে উঠুক, দেশের সমর্থকরা চায়নি। ঠিক আছে। উঠেছে যখন, ওদের যুগটা শেষ করে দিতে হবে!”
আলবার্তো পাহিরা ’৯৪-এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের কোচ। এবং বর্তমানে লুই ফিলিপ স্কোলারির টিমের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর।
রিও ডি জেনেইরোর আম-আদমি হোক বা পাহিরা, জাগালোর মতো ভদ্রতার মুখোশ পরে হোক বা না পরে, কনফেডারেশনস কাপ ফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে নামার আগে কোথাও যেন বেরিয়ে পড়ছে ব্রাজিল ফুটবল-চরিত্রের আপাত অচেনা একটা দিক।
যেখানে ঠিকরে বেরোচ্ছে প্রবল জাত্যাভিমান। আর কোথাও গিয়ে মনে হবে সেটা যেন আক্রান্ত! সব সময় যেন বোঝানোর প্রবল চেষ্টা চলছে যে, আমরা সনাতন। বিশ্ব-ফুটবলের শেষ কথা ছিলাম, আছি, থাকব। আর স্পেন, আদতে ওরা ভুঁইফোড়। আজ আছে, কাল নেই!
আশ্চর্যের নয়। রবিবার মারাকানায় যে যুদ্ধটা দেখতে চলেছেন কোটি কোটি ফুটবল দর্শক, স্বচ্ছন্দে তার একটা নাম হয় ‘ফুটবল-ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্র্যান্ড বনাম বর্তমান ফুটবল বিশ্বের সেরা টিম।’ ব্রাজিলের মতো ঐশ্বর্যের ইতিহাস আর কোনও টিমের নেই যেমন, তাদের মতো পাঁচ বার বিশ্বকাপ কেউ দেশে নিয়ে যেতে পারেনি সেটা যেমন ঠিক, তেমন এটাও ধ্রুব সত্য যে গত পাঁচ বছরে দেল বস্কির স্পেনকে সামান্য বেকায়দায় ফেলতে পারেনি কেউ। বিশ্বকাপ, দু’টো ইউরো (একটায় আবার প্রথাগত স্ট্রাইকার ছাড়াই) স্পেন কোচ হিসেবে কী জেতেননি দেল বস্কি?
কিন্তু মারাকানার মহাযুদ্ধ নিয়ে নতুন এই ‘ক্যাচলাইন’ ব্রাজিলীয়দের সহ্য হবে কেন? পাহিরা মুহূর্তে বলে দেবেন, “আমি তো স্কোলারিকে বলছিলাম যে, স্পেন বলে ট্যাকটিক্সে বদল আনার কোনও দরকারই নেই। যে ভাবে খেলছি, সে ভাবে খেলেই জিতব।” স্পেনের সাম্রাজ্য নিয়ে কথাবার্তা উঠলে, পাল্টা হিসেবে থাকছে দেশ-বিদেশের কাগজে বেরোনো একটা পরিসংখ্যান। ১৯৯৯-এর পরে আর ব্রাজিলের মাটিতে কখনও নামেনি স্পেন। আর ‘আসল’ স্পেনের জন্মই তো তার সাত-আট বছর পরে! মর্যাদায় কোনও তুলনা হয়?
কথাবার্তার আগুন আছে। আছে চোরাগোপ্তা আক্রমণও। স্পেন-ইতালি ম্যাচ চলার সময় জাভি-ইনিয়েস্তাদের পায়ে বল পড়লে বিদ্রূপে তাঁদের ধুইয়ে দিয়েছে ব্রাজিল-দর্শক। সেই দর্শক, যারা কি না মাসখানেক আগে স্কোলারিকেও ‘গাধা’ বলতে ছাড়েনি (ব্রাজিল তখন পরপর হারছিল বা ড্র করছিল)! সাম্বার দেশের সমর্থকরা এতটাই জঙ্গি! এটা যদি স্পেনের ভোগান্তির মুখবন্ধ হয়, তা হলে পুরো উপন্যাসটা এ রকম: টুর্নামেন্টের মধ্যে স্পেন ফুটবলাররা ড্রেসিংরুমে ঢুকে দেখেন, তাঁদের বেশ কিছু জিনিস চুরি হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় প্রচারমাধ্যম বলে, উগ্র ব্রাজিল সমর্থকরা ব্যাপারটা করে থাকতে পারেন। আরও আছে। স্পেনকে সেমিফাইনাল খেলে দু’হাজার কিলোমিটারেরও বেশি উড়ে আসতে হয়েছে ব্রাজিলের উত্তর প্রান্ত থেকে। নেইমাররা সেখানে প্রায় পাশের পাড়ায় সেমিফাইনাল খেলে ফাইনালে নামছেন। স্পেনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সেমিফাইনাল খেলে, ঝরঝরে অবস্থায়। এ-ও শোনা যাচ্ছে যে, স্পেনকে যাতে ক্রমাগত কঠিন থেকে কঠিনতম প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে পড়তে হয়, সে ব্যবস্থাও করে রাখা হয়েছিল। ভিসেন্তে দেল বস্কি কোনও দিনই অজুহাত দেন না। এ বারও দেননি। চুপ থেকেছেন। কে জানে, দুই টিমের মর্যাদা-যুদ্ধের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আন্দাজ ছিল বুঝি!
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবার আগে
• শেষ ২৯ ম্যাচে অপরাজিত।
• ফিফার যে কোনও টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একমাত্র জয় ১৯৩৪ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে।
• দক্ষিণ আমেরিকার কোনও দেশের কাছে শেষ হার ২০১০ আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে। আর্জেন্তিনা জেতে ৪-১।
ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২২ নম্বর
• শেষ ১০ ম্যাচে অপরাজিত।
• বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের সব চেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ১৯৫০ সেমিফাইনালে। ব্রাজিল সেই ম্যাচে জেতে ৬-১।
• ১৯৭৫ সালের পর থেকে ঘরের মাঠে অপরাজিত ব্রাজিল।
থাকাটা শক্ত নয়। এ-ও বলাবলি চলছে যে, এত দিন ফুটবলবিশ্বে দু’টো গোলার্ধ ছিল। একটা ব্রাজিলের, একটা বাকিদের। একটা সময় পর্যন্ত ধরেই নেওয়া হত, ব্রাজিলে ফুটবলার তৈরি হয় না। জন্মায়। ‘সেলেকাও’ নামেই তো প্রবল স্পর্ধা। ইন্টারনেট ঘাঁটলে মানেটা দেখা যায়‘দ্য সিলেক্টেড’। কিন্তু স্পেন অন্য ধারণাটাকেও প্রতিষ্ঠা দিয়ে দিয়েছে। ব্রাজিল যদি হৃদয় দিয়ে খেলে, তা হলে তারা খেলবে মস্তিষ্ক দিয়ে। ব্রাজিল যদি ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের উপর জোর দেয়, তা হলে স্পেন অ্যাকাডেমি থেকে তুলে আনবে এমন একের পর এক ফুটবলার, যাঁরাও সমান নিপুণ। নেইমার-অস্কাররা যদি ‘হোগা বোনিত্তো’র ঝড় তোলেন, তা হলে ইনিয়েস্তারা যন্ত্রের মতো পঁচিশ-তিরিশটা পাস খেলে যাবেন। তাই হাতে একটা রোনাল্ডো, রোমারিও বা রোনাল্ডিনহো নেই জেনেও পাহিরার গর্জন বন্ধ হবে না। তাই ফুটবলের পৃথিবীতে সবে আবির্ভাব ঘটানো নেইমারও (ক’দিন পরে স্পেনের এই টিমেরই অন্তত ৯ জন বার্সেলোনায় যাঁর সহযোদ্ধা হবেন) কাসিয়াসের মতো কিংবদন্তি গোলকিপারকে নিয়ে বলে যাবেন, “ওর বিরুদ্ধে গোল করার মর্যাদাটা হারাতে চাই না।”
আজ রবিবার, ভারতীয় সময় রাত সাড়ে তিনটে থেকে তাই দু’টো সমান্তরাল যুদ্ধ দেখবে বিশ্ব। একটা নিছক কনফেড কাপ ফাইনাল। দ্বিতীয়টা, মর্যাদার। যেখানে ধরা পড়বে ‘লা রোখা’ বনাম ‘সাম্বা’র আসল যুদ্ধটা। যেখানে বিশ্বসেরা টিম প্রাণপণ লড়বে ফুটবল-ইতিহাসের সেরা কিংবদন্তির বিরুদ্ধে।
আজ রবিবার, বিশ্ব ফুটবলের ‘এল ক্লাসিকো’! উপনিবেশের আমলে আশপাশের অনেক দেশ কব্জা করেও ব্রাজিলে দাঁত ফোটাতে পারেনি স্পেন। তেমনই ফিফার যে কোনও টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে তাদের একমাত্র জয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও আগে ১৯৩৪ বিশ্বকাপে। আজ ফিফার ক্রমতালিকায় সেই স্পেনই এক নম্বরে। ব্রাজিল ২২। র‌্যাঙ্কিং যদি শেষ কথা বলে, তা হলে আজই স্পেনের বহুপ্রতীক্ষিত ব্রাজিল জয়ের দিন। কিন্তু ব্রাজিল ফুটবল কবে আর র‌্যাঙ্কিংকে পাত্তা দিয়েছে?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.