নাম না করে বছর তিনেকের পুরনো প্রতিবেশীকে বিঁধলেন দেড়শো বছরেরও বেশি প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য!
গত চার মাসে প্রেসিডেন্সি থেকে চলে গিয়েছেন বেশ কয়েক জন। রাজ্যের শিক্ষাজগতে এটা এখন আলোচনার বিষয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের বক্তব্য, “শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছেড়ে যাওয়ার এই ভাইরাস আমার প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করেনি।” সরাসরি নাম না করলেও সুরঞ্জনবাবুর লক্ষ্য প্রেসিডেন্সি বলে মনে করছেন শিক্ষাজগতের অনেকে। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য মালবিকা সরকার অবশ্য শিক্ষকদের চলে যাওয়াকে ভাইরাস বলে মানতে রাজি নন। তাঁর মতে, এটা খুবই স্বাভাবিক। কোনও প্রতিষ্ঠানে এই আসা-যাওয়া না হলে তা-ই বরং অস্বাভাবিক।
বেতন নিয়ে, পদ নিয়ে গোলমাল বা গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ না মেলায়, কিংবা নেহাতই ব্যক্তিগত কারণে প্রেসিডেন্সি ছেড়ে গিয়েছেন রাশিবিজ্ঞান, শারীরবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, বাংলা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের সাত শিক্ষক। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোলমালের জেরে চাকরি খুইয়েছেন ইতিহাসের অধ্যাপক বেঞ্জামিন জাকারিয়া। সব মিলে চলে যাওয়া শিক্ষকের সংখ্যাটা আট। বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার লক্ষ্যে এগোচ্ছে প্রেসিডেন্সি। যাত্রার শুরুতেই আট শিক্ষক প্রেসিডেন্সি ছেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
শনিবার স্যার আশুতোষের সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে গোটা দেশ তথা আন্তর্জাতিক মহলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার কথা তুলে ধরেন সুরঞ্জনবাবু। তখনই শিক্ষকদের ছেড়ে যাওয়া নিয়ে মন্তব্যটি করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, “এখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সরে যাওয়ার ভাইরাসটি শিক্ষকদের মধ্যে ঢুকতে পারেনি। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে চেয়ে আবেদনের শতকরা ২০ ভাগ বিদেশ থেকে আসে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী ভবনের প্রেক্ষাগৃহে সুরঞ্জনবাবুর এই বক্তৃতার সময়ে সামনের সারিতে বসেছিলেন প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু। সুরঞ্জনবাবুর মন্তব্য প্রসঙ্গে পরে প্রশ্ন করা হলে সুগতবাবু বলেন, “মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি বলব, দেশ-বিদেশের ১৫০ জন বিশিষ্ট শিক্ষক অনেক ভাল জায়গার চাকরি ছেড়ে প্রেসিডেন্সিতে যোগ দিয়েছেন। গোটা দেশে এমন নজির বিরল।”
রাজ্য সরকারও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চলে যাওয়ার ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে আগেই জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর মতে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে তা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। একই মত মালবিকাদেবীর।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নামে একটি চেয়ার প্রফেসর পদ তৈরির বিষয়টি রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। |