মহিলা কর্মীদের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে ‘সন্ত্রাসের’ মোকাবিলা করতে চাইছে ফরওয়ার্ড ব্লক। তৃণমূল কংগ্রেসের বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ তুলে জেলার দু’টি মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে মহিলা নেতা-কর্মীদের অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক।
ফরওয়ার্ড ব্লকের অভিযোগ, জেলা জুড়ে তৃণমূলের বাইক বাহিনী ব্যাপক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। কোচবিহার, দিনহাটা ২, সিতাই, মেখলিগঞ্জ, শীতলখুচি এলাকায় ওই সন্ত্রাস চরম আকার নিয়েছে বলে তাদের দাবি। তৃণমূলের বাইক বাহিনীর অত্যাচারে দলের প্রার্থী ও তাদের পরিজনেরা তো বটেই, সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের পরিবারের পুরুষরাও বাড়ি থাকতে পারছেন না। পুরুষদের না পেয়ে বাইক বাহিনীর সদস্যরা গ্রামে ঢুকে বাড়ির মহিলাদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে দাবি করা হয়েছে। মহিলাদের ওই মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানাতে আগামী ৩ জুলাই, দিনহাটা মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে এবং ৪ জুলাই কোচবিহার সদর মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে মহিলাদের নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভের কথা জানিয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লক।
দলের তরফে জানানো হয়েছে, দুটি অবস্থান বিক্ষোভ থেকেই দলের মহিলা সমর্থকরা তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে প্রশাসনের হেফাজতে নেওয়ার দাবি তুলবেন বলে জানিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারী বলেন, “জেলা জুড়ে তৃণমূলের বাইক বাহিনী ব্যাপক সন্ত্রাস চালাচ্ছে। মহিলাদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও কোন ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে না। এর প্রতিবাদেই দিনহাটা ও কোচবিহারে মহিলাদের নিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।” তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেছেন “বৃহস্পতিবার দিনহাটায় আমাদের এক মহিলা সমর্থককে ফরওয়ার্ড ব্লকের লোকেরা ছুরি মারে। রতন বর্মনকে খুন করা হয়। আর আমাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলা হচ্ছে? এ সবই ফরওয়ার্ড ব্লকের নির্লজ্জ রাজনীতির নমুনা।”
অন্য দিকে এদিন দলের কোচবিহারে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোট নির্বাচন পরিচালনার জন্য রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অক্ষয় ঠাকুরকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, ১৫ জুন দিনহাটার খট্টিমারি এলাকায় তৃণমূলের বাইক বাহিনীর সঙ্গে বামেদের সংঘর্ষে এক তৃণমূল সমর্থকের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক তথা দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ সহ ৬০ জন বাম নেতা-কর্মীর নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। খুনের মামলায় অভিযুক্ত উদয়নবাবু ওই ঘটনার পর কলকাতা থেকে কোচবিহারে ফেরেন নি। উদয়নবাবু তাঁর দুটি মোবাইলই বন্ধ রেখেছেন। গত বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলা আদালতে তার আগাম জামিনের আবেদনও খারিজ হয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোচবিহার জেলা জুড়েই ফরওয়ার্ড ব্লকের নির্বাচনী প্রচার ব্যাহত হয়ে পড়েছে বলে দলের একাংশ নেতা-কর্মী মনে করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে অক্ষয়বাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হল হলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি পরেশবাবু বলেন, “বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অক্ষয় ঠাকুরকে জেলায় দলের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তিনি দিনহাটা ও কোচবিহার দলের দুটি দফতরে বসে ওই দায়িত্ব সামলাবেন।” পরেশবাবুর দাবি, “এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে উদয়নবাবু সংক্রান্ত কোন বিষয়ের সম্পর্ক নেই।”
ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অক্ষয় ঠাকুর দাবি করেছেন, “উদয়নবাবু আত্মগোপন করে রয়েছেন এমন কথা ভিত্তিহীন। উনি দক্ষিণবঙ্গে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত আছেন। হাওড়া হুগলিতেও গিয়েছেন। উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে বলে আমরাই তাকে কলকাতা থাকতে বলেছি।”
তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “উদয়নবাবু নির্দোষ হলে পালিয়ে গেলেন কেন? আত্মগোপন করে না থাকলে প্রকাশ্যে আসছেন না কেন?” |