আরও শব্দবাজি উদ্ধার কালিয়াগঞ্জে
কালিয়াগঞ্জের অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ী বেআইনি শব্দবাজির কারবারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে জানতে পেরেছে পুলিশ। প্রচুর শব্দবাজিও উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এই শহরের মারোয়াড়িপট্টিতে বেআইনি শব্দবাজির গুদামে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের জেরে অগ্নিকান্ডে তিন জনের মৃত্যু হয়। ওই গুদামে শব্দবাজি রাখার জন্য অভিযুক্ত মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা দুই ব্যবসায়ী কালা কুন্ডু ও ধলা কুন্ডু পলাতক। তবে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন বাজারের অন্তত ৩০ জন ব্যবসায়ী বেআইনি শব্দবাজির কারবারে যুক্ত। শুক্রবার ভোর রাতে মহেন্দ্রগঞ্জ বাজার এলাকার নিকাশিনালার ধার থেকে পুলিশ দাবিদারহীন চার বস্তা শব্দবাজি উদ্ধার করেছে। পুলিশি হানার ভয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশ রাতের অন্ধকারে বস্তাবোঝাই করে বিপুল পরিমাণে ওই শব্দবাজিগুলি ফেলে পালিয়েছে বলে সন্দেহ। এদিন দুপুরে মহেন্দ্রগঞ্জ বাজারে অভিযুক্ত দুই ব্যবসায়ী কালা ও ধলার দোকান থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার শব্দবাজি উদ্ধার হয়েছে। অভিযুক্তরা দশকর্মা ভাণ্ডারের ব্যবসার আড়ালে শব্দবাজির কারবার চালাচ্ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
প্রায় এক সপ্তাহ আগে তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায়ী দুলাল দত্তের গুদামে শব্দবাজি মজুত করেছিল। কালা ও ধলা যে গুদামটি ভাড়া নিয়েছিল, তার পাশের গুদামটি ভাড়া নিয়েছিলেন স্থানীয় হাসপাতালপাড়া এলাকার বাসিন্দা ভুট্টা ব্যবসায়ী বাবলু সরকার। ওই দিন ভুট্টা নামানোর কাজ চলাকালীন কোনও শ্রমিক শব্দবাজির গুদামের দিকে জলন্ত বিড়ি ছুঁড়ে ফেলায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ড ঘটে বলে পুলিশের দাবি। ওই ঘটনায় বাবলুবাবু সহ সুদর্শনপুর এলাকার বাসিন্দা ভুট্টাবোঝাই ট্রাকের খালাসি টঙ্কো দাস ও ভান্ডার এলাকার বাসিন্দা সিধো বর্মন মারা যান। জখম হন ১০ জন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্থ গুদাম পরিদর্শনের পরে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের হাতে দলের তরফে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তথা উত্তর দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ওই ঘটনায় মৃত তিন জন, আহত ১০ জন ও বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অন্য সকলকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
অমলবাবুর অভিযোগ, “পুরসভা নজরদারি চালালে বিনা ট্রেড লাইসেন্সে কেউ গুদামের ব্যবসা চালাতে পারত না।” কালিয়াগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস নেতা অরুণ দে সরকার বলেন, “নজরদারি চালানোর দায়িত্ব জেলা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার।” জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তিনি বলেন, “কালিয়াগঞ্জ এলাকায় কোন কোন ব্যবসায়ী শব্দবাজির কারবার চালাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
অভিযুক্ত কালা ও ধলা সম্পর্কে দুই ভাই। ধলাবাবুর স্ত্রী বাবলি দেবীর দাবি, তাঁর স্বামী ও দেওর কোথায় রয়েছেন তা তিনি জানেন না। শব্দবাজির কারবার যে বেআইনি, তা-ও তাঁরা জানতেন না বলে তাঁর দাবি।
পুলিশ জানিয়েছে, কালা ও ধলা কয়েক বছর ধরে কলকাতা ও বিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়কপথে শব্দবাজি আমদানি করত। সেই সব শব্দবাজি দুই দিনাজপুর সহ মালদহ জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের বিক্রি করত তারা। কালিয়াগঞ্জ শহরের বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরাও কালা ও ধলার কাছ থেকে শব্দবাজি কিনে তা গোপনে বিক্রি করত। মহেন্দ্রগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রকাশ কুন্ডু বলেন, “কালা ও ধলা বৈধ আতসবাজির ব্যবসা করত বলে আমরা জানতাম। কিন্তু তাদের দোকান থেকে এদিন যে পরিমাণে শব্দবাজি উদ্ধার হল, তা বিস্ফোরণ হলে বাজারের শতাধিক দোকানে আগুন লেগে বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারত। কার্যকরী কমিটির বৈঠক করে ওই দু’জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেব আমরা।”
কালিয়াগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুনীল সাহা বলেন, “অভিযুক্ত তিন ব্যবসায়ী আমাদের সংগঠনের সদস্য নয়। ভবিষ্যতে শহরে বেআইনি কারবার রুখতে পুলিশকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আমাদের সংগঠনের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.