বেআইনি শব্দবাজির গুদামে বিস্ফোরণ ও তার জেরে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের মারোয়াড়িপট্টির এই ঘটনায় মৃতদের নাম বাবলু সরকার (৫৫), টঙ্কো দাস (২৩) ও সিধো বর্মন (৩৫)। পুলিশের চোখ এড়িয়ে কী করে শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিষিদ্ধ শব্দবাজির গুদাম ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাবলুবাবু পেশায় ভুট্টা ব্যবসায়ী। বাড়ি স্থানীয় হাসপাতালপাড়া এলাকায়। টঙ্কোবাবুর বাড়ি রায়গঞ্জ থানার সুদর্শনপুর। সিধোবাবু থাকতে ভান্ডার এলাকায়। বিস্ফোরণে ভুট্টা বোঝাই একটি ট্রাকে আগুন লেগে যায়। সেই ট্রাকেরই খালাসি ছিলেন টঙ্কোবাবু। সিধোবাবু ভুট্টা নামানোর কাজ করছিলেন। বিস্ফোরণে জখম হয়েছেন আরও ১০ জন। তাঁরা তখন ট্রাক থেকে ভুট্টা নামাচ্ছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের ছ’জনকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ও দু’জনকে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্য দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়কের ধারের কালিয়াগঞ্জ পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওই গুদামে ১০ মিনিটের ব্যবধানে পরপর ১০ বার বিস্ফোরণ হয়। প্রায় ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে একাধিক বাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায়। একাধিক বাড়ির দেওয়ালে ফাটলও ধরে। দমকলের ৬টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই ঘটনার পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে পুলিশ ও পুরসভা। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বসন্ত রায়ের বক্তব্য, “বেআইনি কারবারে যুক্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ ছাড়া
শহরের মধ্যে এমন একটি গুদাম থাকা সম্ভব কি?” রায়গঞ্জের ডিএসপি জ্যোতিষ রায়ের পাল্টা বক্তব্য, “পুর এলাকার ব্যবসায়ী ও গুদাম মালিকদের পুরসভাই ট্রেড লাইসেন্স দেয়। ওই গুদামের মালিক বিনা ট্রেড লাইসেন্সেই এলাকার দুই ব্যবসায়ীকে গুদাম ভাড়া দিয়েছিলেন। পুরসভা নজরদারি চালালে এরকম ঘটনা হত না।”
কালিয়াগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান অরুণ দে সরকারের দাবি, বিনা ট্রেড লাইসেন্সে শব্দবাজির গুদাম রয়েছে, তা তাঁরা জানতেন না। তিনি বলেন, “কে বেআইনি ভাবে ব্যবসা করছে তা পুরসভার দেখার কথা নয়। তার জন্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখা রয়েছে। তাই পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জেরেই এমন ঘটনা হল। ” তবে ঘটনার পরে পুরসভার তরফে শহরে মাইক বাজিয়ে সমস্ত ব্যবসায়ীকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ জানান, প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গিয়েছে। আতঙ্কে শহরের বহু মানুষ বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। কালিয়াগঞ্জ দমকলকেন্দ্রের আধিকারিক সত্যেন বর্মন জানান, শর্ট-সার্কিট কিংবা বিড়ির আগুন থেকে শব্দবাজিতে আগুন লেগে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ড হয়েছে। পুলিশের অনুমান, ওই গুদামে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার শব্দবাজি মজুত ছিল। জেলা পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, গুদাম মালিক দুলাল দত্ত এবং যে দুই ব্যবসায়ী সেখানে শব্দবাজি রেখেছিলেন সেই কালা কুন্ডু ও ধলা কুন্ডুর বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন ও বেআইনি ভাবে বিস্ফোরক মজুত করার অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, “অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” |