সংবিধানের জয়ই দেখছেন সমরাদিত্য
বিবাদের জায়গা ছিল দু’টি। একটি, পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার দায়িত্ব কার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নাকি রাজ্য সরকারের? যার জবাব দিতে গিয়ে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, কমিশনই শেষ কথা। কেন? কারণ, সংবিধানের ২৪৩কে ধারায় তেমনই বলা রয়েছে।
দ্বিতীয় বিষয়টি উঠে এসেছে সেই সূত্রেই। তা হল: রাজ্য পঞ্চায়েত আইনের ৪২ নম্বর ধারা বাতিল করা হবে না কেন? কারণ, এই ধারাটি ২৪৩কে ধারার পরিপন্থী। সংবিধান যেখানে যে কোনও রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই শেষ কথা বলার অধিকার দিয়েছে, সেখানে রাজ্যের আইনের ওই ধারায় বলা হয়েছে, কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য ।
হাইকোর্টে বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের সিঙ্গল বেঞ্চেই ৪২ ধারা বাতিলের দাবি তোলেন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। কিন্তু বিচারপতি সমাদ্দার কমিশনের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের কথা মেনে নিলেও এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। একই ভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যায় প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চও।
সরকার অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন
চেয়েছিল। সেটাই হয়েছে।
বিমল চট্টোপাধ্যায়
অ্যাডভোকেট জেনারেল
এ দিনের রায়ে জয় হল গ্রামের
মানুষের অধিকারের।
সমরাদিত্য পাল
কমিশনের আইনজীবী
এ দিনও কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই নিয়ে সরাসরি কিছু বলেনি। তবে এ দিনের রায়ে তারা কমিশনের সর্বোচ্চ ক্ষমতার কথা মেনে নিয়েছে। সমরাদিত্যবাবু বলেন, “ভোটের ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্তই যে সব, তা এ দিনের রায়ের পরে আর কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না।” তাঁর সাফ কথা, “এই রায়ে সংবিধানেরই জয় হয়েছে।”
এর আগে ২০০৬ সালে কৃষ্ণ সিংহ তোমর বনাম আমদাবাদ পুরসভার মামলায় ২৪৩কে ধারার উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, জাতীয় স্তরে ভোটের ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের যা ক্ষমতা, রাজ্যের স্থানীয় ভোটের ক্ষেত্রেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একই ক্ষমতা। এ কথাই আরও এক বার মনে করিয়ে দিয়ে সমরাদিত্যবাবুর বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্ট এক কথা বারবার বলে না।” একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “এ বার আমরা সুুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনটা যাতে অবাধ হতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে। ৪২ নম্বর ধারা নিয়ে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাইনি।” আইনজীবীদের একাংশ মনে করছে, সাংবিধানিক প্রশ্নে শীর্ষ আদালতে যাওয়ার পথ খোলাই রাখছে কমিশন।
তাঁদের এ-ও বক্তব্য, এ দিনের রায়ের পরে ৪২ নম্বর ধারাটির কার্যত কোনও গুরুত্বই রইল না। এ দিনের রায়ের পরে মিজোরামের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবও বলেন, “২০০৬-এর রায়ের পরে সুপ্রিম কোর্ট আরও এক বার স্পষ্ট করে দিল যে, সংবিধানের ২৪৩কে ধারা অনুযায়ী, সব রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সর্বোচ্চ। ভোটের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ এবং ভোট প্রক্রিয়ায় তারাই চূড়ান্ত এবং সে জন্য তারা যা যা প্রয়োজন বলে জানাবে, সেটাই শেষ কথা বলে ধরতে হবে।”
রাজ্য সরকার যে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক অধিকার মানতে চাইছে না, তা কলকাতা হাইকোর্টে বারবার জানিয়েছেন সমরাদিত্যবাবু। বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের রায়ে নির্বাচন কমিশনের অধিকারকে মান্যতা দেওয়া হলেও ডিভিশন বেঞ্চের প্রথম নির্দেশে তা মানা হয়নি। পরে অবশ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সর্বময় কর্তৃত্ব মেনে নিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু তার পরেও মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছিল না। ভোটে কত বাহিনী পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছিল। নির্বাচনও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছিল। আর এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়ে। যে প্রসঙ্গ তুলে সমরাদিত্যবাবু এ দিন বলেন, “আমাদের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুফল পেয়েছি। ভোটের নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। বাহিনী নিয়ে সমস্যা মিটে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বও সুনিশ্চিত হয়েছে।”
নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত থানার ওসি থেকে শুরু করে রাজ্য পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিব সকলেরই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করার কথা। কিন্তু রাজ্য সরকার তা মানতে রাজি হচ্ছিল না। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, রাজ্য পঞ্চায়েত আইনে এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা নেই। এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে সেই প্রশ্নের কোনও নিষ্পত্তি হল কি? সমরাদিত্যবাবু বলেন, “এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকবে কেন, তা বুঝতে পারছি না। যে কোনও নির্বাচনের সময়েই গোটা প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটাই তো নিয়ম। সেই নিয়ম বলবৎ করতে যদি কোনও সমস্যা হয়, তা হলে প্রয়োজনে ফের আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হব।”
এ দিনের রায়ের পরে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি সমরাদিত্যবাবু বলেন, “এটা সংবিধানের জয়। এই বিষয়টি নিয়েই আমরা লড়াই করছিলাম। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানে যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তা এ দিন পরিষ্কার করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমার খুশির কারণ এটাই।” এক সঙ্গে তিনি বলেন, “এ দিনের রায়ে জয় হল গ্রামের মানুষের অধিকারের। গ্রামীণ সরকার গড়ার যে অধিকার সংবিধান তাঁদের দিয়েছে, তা বাস্তবায়িত হল। গ্রামের মানুষের অধিকারকে সম্পূর্ণ সম্মান জানাল সুপ্রিম কোর্ট।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.