|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
তিনি সত্যিই ক্রান্তদর্শী |
শিলাদিত্য সেন |
চুপ চুপ-নীতির তিরোভাব না হলে মানবের ভাগ্যে সুখ নেই। প্রকৃতি যে অমৃত আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে অজ্ঞতায় অসংযমে ও সামাজিক অব্যবস্থায় তাকে আমরা গরল করে তুলেছি।... এনেছি ‘চুপ চুপ’-নীতির জুজু। যতদিন না sex-সংক্রান্ত জ্ঞান মানসাঙ্কের মতো সরল ও বর্ণপরিচয়ের মতো সুলভ হবে ততদিন অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর চাষার মতো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে।”— নিবন্ধটির নাম ‘সেকস্’, প্রায় আশি বছর আগে ১৯৩৪-এ লেখা। এ মুহূর্তে চারপাশে যা ঘটে চলেছে তা ভাবলে মনস্বী প্রবন্ধকার অন্নদাশঙ্কর রায়কে ফের ‘ক্রান্তদর্শী’ না মেনে কোনও উপায় নেই।
অন্নদাশঙ্করের প্রবন্ধসমাহার বেরিয়েছে সদ্য। ’৬৪-তে প্রথম প্রকাশের পর সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সংস্করণ: প্রবন্ধ (৪৫০.০০)। বাংলা আকাদেমির প্রথম সভাপতিও অন্নদাশঙ্কর। নিবেদন-এ স্বীকার করেছেন সচিব শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়: ‘তাঁর সদাজাগ্রত চেতনা সাড়া দেয় সমকাল ও আবহমানের বহুল অভিঘাত ও আলোড়নে।’ চার খণ্ডে ভাগ করা গোটা গ্রন্থসমাহারটি। প্রতি খণ্ডের বিষয়-বৈচিত্রে বিস্মিত হতে হয়— ডিকটেটরশিপ, ভারতীয় মুসলমান, গান্ধীজির লক্ষ্য, জমি কার, আমেরিকা রাশিয়া ভারতবর্ষ, ইংরেজি শিক্ষা, আফ্রিকার কথা, রাষ্ট্র বনাম নেশন, সাম্যবাদ প্রসঙ্গে, রবীন্দ্রনাথের শেষজীবন, নাটকের কথা, কবিগুরু গ্যোয়েটে, কবিতা কেন উপেক্ষিতা, পূর্ববাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতি, অবসাদ, রমাঁ রল্যাঁ ইত্যাদি। শেষে সংযোজন-এও আছে আরও কিছু রচনা, তার মধ্যে একটি ‘পারিবারিক নারীসমস্যা’ নিয়ে। জীবনদর্শন ও সমাজ-বিষয়ক রচনা, সাহিত্য, ব্যক্তিগত প্রবন্ধ ও পত্রাবলি ছেয়ে আছে বইটির তাবৎ রচনা।
এই সমাহারটির মাঝে মাঝে রাখা হয়েছে মূল প্রবন্ধগ্রন্থগুলির প্রচ্ছদচিত্র (সঙ্গে তারই একটি, লীলা রায় কৃত)। আদিপ্রকাশের সম্পাদনার সিংহভাগে যিনি ছিলেন, সাম্প্রতিক সংস্করণেও তিনি আছেন, সেই সুরজিৎ দাশগুপ্ত মনে করেন এ-বই ‘বাংলা মননশীল সাহিত্যপ্রকাশের ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা... ।’ গুরুত্ব শুধু এ জন্যে নয় যে গড়নে-চলনে অন্নদাশঙ্করের প্রবন্ধ সাহিত্যস্বাদে ও প্রজ্ঞায় ঋদ্ধ, গুরুত্ব এ জন্যেও যে অনুসন্ধিৎসা তাঁর প্রবন্ধে প্রজন্মবাহিত মুক্তচিন্তার জন্ম দিয়েছে। |
|
|
|
|
|