|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা |
হাল ফেরেনি
প্রসেনজিৎ পাঠক |
পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার মর্যাদা মিলেছে প্রায় ষোলো বছর হয়ে গেল। কিন্তু হাল ফেরেনি উত্তর দমদম পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের। মূল রাস্তা বাদে ওয়ার্ডের প্রায় সব রাস্তাই কাঁচা। বহু জায়গায় যাতায়াতের ভরসা শুধুমাত্র বাঁশের সাঁকো। নিকাশি ব্যবস্থা এতটাই বেহাল যে বর্ষায় প্রায় ১ মিটার উঁচু
হয়ে জল জমে থাকে। অভিযোগ, ওয়ার্ডের ৭৫ শতাংশ বাসিন্দার কাছে পৌঁছয়নি পুরসভার পানীয় জলও।
১৯৯৭ অবধি এই ওয়ার্ড বিশরপাড়া পঞ্চায়েতের অধীনে ছিল। তার পরে এলাকাটি উত্তর দমদম পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। ছোট ফিঙা, বড় ফিঙা, দক্ষিণপাড়া, মিলনগড়, রামকৃষ্ণ পল্লি, মমরআলি পল্লির মতো ২৭টি পাড়া নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুর এলাকা হওয়ার পরে দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ জায়গায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। ৬৫ শতাংশ এলাকায় জলের পাইপলাইন বসেনি। |
|
ওয়ার্ডের ভিতরে প্রবেশের মূল রাস্তাটি এবং কয়েকটি লেন ঢালাই করা হলেও বাই-লেনগুলি প্রায় সবই কাঁচা। বহু পরিবারেরই যাতায়াতের কোনও রাস্তা নেই। বাঁশের সাঁকো তৈরি করে তাঁদের যাতায়াত চলে। বর্ষায় জল জমে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। অস্থায়ী সাঁকো পেরিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবথেকে বেশি সমস্যাহয় শিশু ও বয়স্কদের। নড়বড়ে পিচ্ছিল সাঁকো থেকে প্রতি মুহূর্তেই জলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েই যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় ফিঙায় নিকাশির জন্য একটি বড় নর্দমা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি করায় ওই নর্দমা দিয়ে জল বেরনোর পরিবর্তে বাইরের জল ওয়ার্ডের ভিতরে এসে জমতে থাকে। ফলে বর্ষা পেরিয়ে গেলেও দীর্ঘ দিন জলবন্দি থাকতে হত বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা নির্মল জানা বলেন, “রাস্তাঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল-সহ কোনও প্রয়োজনীয় পরিষেবা আমরা পাই না। বর্ষায় জলবন্দি হয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ দিন। বহু পরিবার নিজেরাই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করে।” পুরসভা সূত্রে খবর, এই ওয়ার্ডের
জনসংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। এখানকার অধিকাংশ পরিবারই আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া। বাসিন্দাদের অধিকাংশই রাজমিস্ত্রি, দিনমজুর বা কৃষিজীবী। |
|
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিএসইউপি(বেসিক সার্ভিসেস ফর আর্বান পুওর) প্রকল্পের অধীনে ওই ওয়ার্ডের কয়েকটি পরিবারের গৃহনির্মাণ সম্পূর্ণ হলেও এখনও কয়েকশো পরিবারকে দরমা বা বেড়ার তৈরি বাড়িতেই বাস করতে হয়। কাঁচা বাই-লেনগুলির কয়েকটিকে সম্প্রতি ঘেঁষ ফেলে যাতায়াতের উপযোগী করা হয়েছে। কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতেই সব রাস্তা জলের তলায় চলে যায়।
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের সুলতানা বানু বলেন, “প্রয়োজনীয় উন্নয়ন হয়নি। পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ড হওয়ায় বেশি আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলাম পুরসভায়। কিন্তু পাইনি। বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে সাড়ে সাতশো পরিবারের জন্য বাড়ির দাবি জানিয়েছিলাম। কাজ চলছে মাত্র শ’খানেকের। সাংসদ ও বিধায়ক তহবিলের অর্থে অবশ্য কিছু কাজ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পুরসভা থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য পাইনি। আগামী দিনে বস্তি উন্নয়ন এবং রাজীব গাঁধী আবাসন যোজনার টাকা পেলে অনেক কাজ করা যাবে।” |
|
উত্তর দমদম পুরসভার পুরপ্রধান সিপিএমের সুনীল চক্রবর্তী বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জনসংখ্যার নিরিখে এদের যেমন অর্থ প্রাপ্য, পুর তহবিল থেকে সেই পরিমাণ টাকা ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দ করা হয়। সাংসদ ও বিধায়ক তহবিলের অর্থও পুর প্রতিনিধিরা পান। কিন্তু উন্নয়নের ঠিক পরিকল্পনা তাঁরা করতে পারেন না। ফলে টাকা খরচ হলেও বাসিন্দাদের সমস্যা রয়েই যায়। তবুও দেখছি ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দদের জন্য কী করা যায়।” |
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|